শিরোনাম
রোহিঙ্গাসংকটে আর্থিক খাতে চাপ
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৬:৫৩
রোহিঙ্গাসংকটে আর্থিক খাতে চাপ
মৌসুমী ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+

প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে নিয়ে অস্বস্তিতে আছে সরকার। কেননা হঠাৎ করে বিশাল এই জনগোষ্ঠীর উপস্থিতিতে চাপে পড়েছে আর্থিক খাত। তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণে কিছু বিদেশী ত্রাণসহায়তা মিললেও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের ওপরই থাকবে দায়ভার।


বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু ব্যয়ের চাপই নয়, এই সংকটে হুমকির মুখে পড়বে বড় বড় বিনিয়োগও।


মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর বর্বর হামলা থেকে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। এই বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর খাদ্য, বাসস্থান, স্যানিটেশন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রভৃতি চাহিদা পূরণে দরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে দারিদ্রসীমার ওপরে থাকতে ন্যূনতম জনপ্রতি প্রতিদিন দরকার ১ ডলার ৯০ সেন্ট। সেই হিসেবে চার লাখ জনগোষ্ঠীর জন্য বছরে প্রয়োজন ২৫ থেকে ৩০ কোটি ডলার। কোথা থেকে আসবে এই বিপুল অর্থের যোগান?


এই অনিশ্চিত অর্থায়ন নিয়ে দুশ্চিন্তায় সরকার। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট আইন স্থগিত করায় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে পেছনে রয়েছে সরকার। অভ্যন্তরীণ ব্যয় ব্যবস্থাপনাতেই ভ্যাটের প্রভাব যেখানে স্পষ্ট, সেখানে নতুন করে ব্যয় খাত যুক্ত হওয়ায় আর্থিক খাতে চাপ তৈরী হয়েছে।


অন্যদিক বিদেশি সহায়তা ঠিক কী পরিমাণ পাওয়া যাবে, তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর ১ কোটি ৫০ ডলারের সহায়তা দেবার ঘোষণা দিয়েছেন সৌদী বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ। আরও কয়েকটি দেশ সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে শরণার্থীদের ব্যয় নির্বাহ করাই এখন চ্যালেঞ্জ।


বেসরকারি গবেষনা প্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, বহির্বিশ্বের অনেকেই সাহায্য ও ত্রাণের আশ্বাস দিয়েছে। তবে সহায়তা তারা কতোদিন দিয়ে যাবেন বা দিতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় আছে। এখন রোহিঙ্গা ইস্যু তৈরি হয়েছে, পরে যদি অন্য কোনো ইস্যু তৈরি হয় তাহলে এই ইস্যুটা ধামাচাপা পড়ে যাবে। যারা সহায়তা করছেন তারা অন্যদিকে চলে যাবেন। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের ওপরই রোহিঙ্গার দায়ভারটা থাকবে।


তিনি আরো বলেন, সাহায্যকে কেন্দ্র করে রাজনীতি এবং অর্থসাহায্যকে কেন্দ্র করে দুর্নীতির আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। কেননা ত্রাণব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের অতীত অভিজ্ঞতা খুব-একটা ভালো না।


শরণার্থী সুরক্ষায় ঋণদাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের আছে ২০০ কোটি ডলারের তহবিল। তবে সেই অর্থ পাওয়ার জন্য শরণার্থীর সংখ্যা হতে হবে ২৫ হাজার অথবা ওই দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ০ দশমিক ১ শতাংশ। সংখ্যার দিক থেকে তহবিল গ্রহণের বাধা উৎরে যাওয়া গেলেও সমস্যা অন্য জায়গায়। মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের ''শরণার্থী'' আখ্যা দিতে চায় না সরকার। বলছে এরা ‘অনুপ্রবেশকারী’। কারণ, সরকার শুধু মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে, তাদের ফেরত দিতে চায়। তাই এই খাত থেকে অর্থ সহায়তা নেয়া সম্ভব হবে না।


বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের মূখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, সবার আগে মিয়ানমার থেকে আসা নাগরিকদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। তারপর সহায়তা গ্রহণের জন্য আবেদন করলে তা বিবেচনা করবে বিশ্বব্যাংক।


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com