শিরোনাম
যেভাবে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা করত ''ইমাম মেহেদী''
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৬:৫৯
যেভাবে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা করত ''ইমাম মেহেদী''
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিল (২৯) ছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সারোয়ার তামিম গ্রুপের ‘ব্রিগেড আদদার-ই-কুতনী’ শাখার "কমান্ডার"। দীর্ঘ দিন থেকে সে গোপনে সদস্য সংগ্রহ ও সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অবশেষে র‌্যাবের অনুসন্ধানে তার সব কার্যক্রম আলোয় এসেছে আর র‌্যাবের খাঁচায় বন্দি হয়েছে সে নিজেও।


র‌্যাব জানিয়েছে, ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিল পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার রাজাপুর গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে। তিনি পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ছিলেন বলে জানা গেছে। তিনি ১৯৯৯ সালে অবসরে গেছেন। ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিল গত ৪ মে ''নিখোঁজ'' হয়। এ ব্যাপারে রাজধানীর খিলগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করা হয়।


র‌্যাব জানায়, মেহেদী ঢাকার দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ করেছে। সে মডেলিংয়ে মেহেদী নামে পরিচিত। মডেলিং থেকে সে ২০১৫ সালে জেএমবিতে যোগদান করে। হলি আটিজানে নিহত জঙ্গি নিবরাসসহ বেশ কিছু শীর্ষ জঙ্গির সাথে তার প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল।


ইমাম মেহেদী হাসান মূলত জেএমবি’র সারোয়ার তামিম গ্রুপের কর্মী ও অর্থ সংগ্রহ, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধকরণ ও ''হিজরতের'' পূর্বপ্রস্তুতিমূলক পর্বসমূহ সম্পন্ন করার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। পরবর্তীতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অব্যাহত অভিযানে জঙ্গিরা কোণঠাসা হয়ে পড়লে সে জেএমবি’র সারোয়ার তামিম গ্রুপের রিজার্ভ হিসেবে রক্ষিত ‘ব্রিগেড আদ দার-ই-কুতনী’র কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে। এসময় সে নতুন করে কর্মী সংগ্রহ শুরু করে এবং সংগৃহীত কর্মীদের আনুগত্য পরীক্ষার পর কিছু অংশকে শপথের (বাইয়্যাত) মাধ্যমে উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করে। তাদের নিয়ে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনাও নিচ্ছিল মেহেদী।


‘ব্রিগেড আদ্-দার-ই-কুতনী’তে আনসার (সাহায্যকারী), মুহাজির (যোদ্ধা), সালাফি আলেম বোর্ড এবং অর্থ প্রদানকারী বিভিন্ন ব্যক্তি রয়েছে। তাদের কাছ থেকে নিয়মিত ইয়ানত (অর্থ) আদায় করা হত। সেই টাকাগুলো সে সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশে জঙ্গি কার্যক্রমে ব্যয় করত।


এছাড়াও ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিল জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ সদস্যদের মধ্যে সাংগঠনিক বিয়ের ব্যবস্থা দেখভাল করত। তার মাধ্যমে ''হিজরতকারী'' দুই জঙ্গি ইতিমধ্যে নিহত হয়েছে।


বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্থ র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানান, বুধবার রাত সাড়ে ১২টায় রাজধানীর খিলগাঁও থানার দক্ষিণ বনশ্রী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইমাম মেহেদীকে গ্রেফতার এবং তার কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ, একটি মোবাইল ফোন, একটি পাসপোর্ট, উগ্রবাদী বইসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়। এসব আলামত হতে জানা যায়, ব্রিগেড ‘আদ্-দার-ই-কুতনী’ অপারেশনাল সক্ষমতা অর্জন করেছে এবং যে কোনো স্থানে নাশকতা করতে সক্ষম।



তিনি জানান, ইমাম মেহেদী হাসান বনানী থানার সন্ত্রাস দমন আইনের একটি মামলায় এজাহারভুক্ত এবং উত্তরা পশ্চিম থানার সন্ত্রাস দমনে আইনে দায়ের করা আরেকটি মামলার তদন্তে প্রাপ্ত আসামি। এছাড়াও তার নামে আরো মামলা আছে জানা গেছে।


তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ আরো জানান, ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট র‌্যাবের অভিযানের সময় পালাতে গিয়ে নিহত হয়েছিল সারোয়ার-তামিম গ্রুপের তৎকালীন আমির সারোয়ার জাহান ওরফে মানিক ওরফে আবু ইব্রাহিম আল হানিফ। পরে তার বাসা থেকে প্রাপ্ত আলামত পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি (সারোয়ার-তামিম গ্রুপ) দুটি অপারেশনাল ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করে সংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এগুলো হলো ‘বদর স্কোয়াড ব্রিগেড’ ও ‘ব্রিগেড আদ্-দার-ই-কুতনী’।


এর মধ্যে ‘বদর স্কোয়াড ব্রিগেড’ হলি আর্টিজানসহ অন্যান্য হামলায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। আর ‘ব্রিগেড আদ্-দার-ই-কুতনী’ ব্যাকআপ বা রিজার্ভ ব্রিগেড হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। এই ‘ব্রিগেড আদ্-দার-ই-কুতনী’ তথ্য প্রযুক্তিতে অত্যন্ত আধুনিক।


এক পর্যায়ে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের কারণে ‘বদর স্কোয়াড ব্রিগেড’-এর বেশিরভাগ সদস্য নিহত ও আটক হওয়ায় ব্রিগেডটি দূর্বল হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ব্যাকআপ ব্রিগেড হিসেবে রক্ষিত ‘ব্রিগেড আদ্-দার-ই-কুতনী’ ব্রিগেডকে শক্তিশালী করার কাজ শুরু করে।


বিবার্তা/খলিল/হুমায়ুন/মৌসুমী


>>নতুন নামে সংগঠিত হচ্ছে জেএমবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com