শিরোনাম
নতুন নামে সংগঠিত হচ্ছে জেএমবি
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০১৭, ১৯:৪১
নতুন নামে সংগঠিত হচ্ছে জেএমবি
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় অনেকটা নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি। কিন্তু বর্তমানে ‘ব্রিগেড আদ্-দার-ই-কুতনি’ নামে তারা নতুন করে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছে। ইতোমধ্যে তারা সদস্য সংগ্রহও শুরু করেছে।


র‌্যাবের অনুসন্ধানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।


র‌্যাব জানায়, রাজধানীর মহাখালীকেন্দ্রিক উগ্র মতাদর্শে বিশ্বাসী একটি দল কথিত বড়ভাই বা বড় হুজুর ইমাম মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে জেএমবি’র সারোয়ার-তামিম গ্রুপ পুনর্গঠনের কাজে নিয়োজিত। সেই ইমাম মেহেদী জেএমবি’র সারোয়ার তামিম গ্রুপের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং সংগঠনে "আমির-এ-হিযরত"।


হলি আর্টিজানের ঘটনার আগে থেকেই এই ইমাম মেহেদী হাসান সংগঠনের কর্মী ও অর্থ সংগ্রহ, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধকরণ ও হিজরতের পূর্বপ্রস্তুতিমূলক পর্বসমূহ সম্পন্ন করার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল।


র‌্যাব জানায়, ইমাম মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে ‘ব্রিগেড আদ্-দার-ই-কুতনি’ দেশের বিভিন্ন স্থানে সদস্য সংগ্রহ এবং সংগৃহীত কর্মীদের একটি অংশকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে তাদের মাধ্যমে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে।


এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার বিকালে টাঙ্গাইলের ভূয়াপুর উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ‘ব্রিগেড আদ্-দার-ই- কুতনি’তে শপথ নেয়া তিন সদস্যকে আটক করে র‍্যাব। আটকরা হলো ওই উপজেলার মাটিকাটা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আজিজ ওরফে কছিমের ছেলে আব্দুল মান্নান (৩০), মতিউর রহমানের ছেলে শমসের ফকির (৩০) ও খগড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান খাঁয়ের ছেলে জহুরুল খাঁ (৩৫)।


র‌্যাব আরো জানায়, আটকরা ‘ব্রিগেড আদ দার-ই-কুতনি’র কমান্ডার ইমাম মেহেদীর নেতৃত্বে জঙ্গিবাদে অংশগ্রহণ করার জন্য ভূয়াপুরে জঙ্গি মান্নানের বাড়িতে শপথ নেয়। এছাড়া তারা কমান্ডারের নির্দেশে যেকোনো পরিস্থিতিতে দেশের যেকোনো স্থানে জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত ছিল।


কয়েকজন সদস্য ‘ব্রিগেড আদ দার-ই-কুতনি'তে শপথ নিচ্ছে এমন একটি ভিডিও পাওয়া গেছে জানিয়ে র‌্যাব জানায়, ওই ভিডিওটি বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়াতে দেয়া হয় এবং বিভিন্ন উগ্রবাদী চ্যানেলে প্রচার করে জঙ্গিবাদে অংশগ্রহণের জন্য অন্যদের উদ্বুদ্ধ করার কাজে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও, ব্রিগেড আদ্-দার-ই-কুতনিকে শক্তিশালী করতে তারা মেহেদীকে নিয়মিত বিভিন্ন মাধ্যমে ইয়ানত (অর্থ) প্রদান করত। তার মাধ্যমে শপথ নেয়া একজন ইতিমধ্যে একটি জঙ্গি আস্তানায় নিহত হয় বলে র‌্যাব জানিয়েছে।


এদিকে, বুধবার বিকালে র‌্যাবের হাতে আটক মান্নান ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের বিভিন্ন স্থানে ফার্নিচারের কাজ করতো। ভূয়াপুরের একটি ফার্নিচার দোকানের মালিক জহুরুলের সাথে কাজ করার সময় তার পাশের ফার্নিচারের দোকানের মালিক শমসের ও তার দোকানের মালিক জহুরুল তাকে প্রাথমিকভাবে ''দ্বীনের'' দাওয়াত দেয়। তারা বড় হুজুর ওরফে ইমামের সহযোগীদের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। এছাড়া মান্নানের বাড়িতে শপথ (বাইয়্যাত) নেয়।


আটক অপর দুই জন শমসের ফকির ও জহুরুল খাঁ'রও টাংগাইলে ফার্নিচারের দোকান ছিলো। এ সময় জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ স্থানীয় দু' যুবকের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। এরপর বড় হুজুর ওরফে ইমাম মেহেদী তাদের উদ্বুদ্ধ এবং মান্নানের বাড়িতে শপথ নেয়ার ব্যবস্থা করে। তাদের মধ্যে শমসের ফকিরের দায়িত্ব ছিল ব্রিগেড আদ-দার-ই কুতনি’র জন্য টাকার ব্যবস্থা করা।


আটক এই তিনজন ছাড়াও ‘ব্রিগেড আদ্-দার-ই-কুতনি'র বিভিন্ন পর্যায়ে বেশ কিছু সদস্য রয়েছে বলে ধারণা করছে র‌্যাব। এ ব্যাপারে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানান, র‌্যাব জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আপসহীন অবস্থানে থেকে নিরলসভাবে কাজ করে আসছে। র‌্যাবের কর্মতৎপরতার কারণেই সারাদেশে একযোগে বোমা বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন সময়ে নাশকতাকারী জঙ্গি সংগঠনসমূহের শীর্ষ সারির নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।


তিনি জানান, তব যেসব জঙ্গি এখনো আত্মগোপন করে আছে, তাদের তৎপরতা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। র‌্যাবের কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি ও অভিযানের ফলে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে বার বার ব্যর্থ হয়েছে বলে জানান তিনি।


বিবার্তা/খলিল/হুমায়ুন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com