শিরোনাম
রাজিবের স্বপ্ন কি পূরণ হবে?
প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০১৭, ১৭:৫৯
রাজিবের স্বপ্ন কি পূরণ হবে?
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

আনোয়ার হোসেন রাজিব। মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার বেঁজগাও ইউনিয়নের সুন্দিসার গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নূর মোহাম্মদের ছেলে। লেখাপড়া শেষে চাকুরিও করছিলেন তিনি। দেখছিলেন নতুন স্বপ্ন। কিন্তু হঠাৎ তার জীবনে নেমে আসে দুঃস্বপ্ন। বর্তমানে রাজধানীর একটি হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে তিনি। তবে স্বপ্ন দেখা ভঙ্গ হয়নি তার। কিন্তু সেই স্বপ্ন কি পূরণ হবে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না রাজিব।


জানা গেছে, আনোয়ার হোসেন রাজিব ২০০২ সালে লৌহজং পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০০৪ সালে লৌহজং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পাস করেন। ২০০৮ সালে ঢাকা কবি নজরুল কলেজ থেকে অনার্স এবং ২০০৯ সালে মাস্টার্স করেন তিনি। এরপর সেরকারী একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করেন তিনি। চাকুরির টাকা দিয়ে চলত তার পরিবার।


২০১৪ সালে হঠাৎ অসুস্থ হন রাজিব। চিকিৎসা নিতে আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেই সময় জানতে পারেন তার কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। তবে প্রথম দিন থেকেই তিনি ডায়ালাইসিস শুরু করেন। বর্তমানেও তিনি রাজধানীর সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।


এদিকে, রাজিবের অসুস্থ জীবনেই ঘটে গেছে ব্যতিক্রমী এক ঘটনা। হঠাৎ একদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে রোমানা তাসমিন নামের এক মেয়ের সঙ্গে তার পরিচয়। রোমানার গ্রামের বাড়ি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে।


পরিচয়ের প্রথম দিনই রাজিব তার অসুস্থতার কথা জানান রোমানাকে। রোমানা সব জেনেও রাজিবের সঙ্গে শুরু করেন প্রেম। নিজের একটি কিডনী রাজিবকে দিয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখান তিনি। ওই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি বিয়েও করেছে তারা। কিন্তু টাকার অভাবে রাজিবকে এখনো হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকতে হচ্ছে।


এদিকে, মঙ্গলবার বিকালে রোমানা তাসমিন নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাসে বলেন, একটা মানুষটাকে ভালোবেসে নিজের জীবনকে বাজি রেখেতার পাশে দাঁড়িয়েছি। তাকে বাঁচাতে হবে, বাঁচতে হবে নিজেকেও। আল্লাহ চাইলে সব পারেন। এখন আমাদের পাশে অনেকে আছেন, দূর থেকে যেন আশার আলো ভেসে আসছে। সবার কাছে দোয়া চাই।


জানা গেছে, রাজিব-রোমানা দম্পতি বর্তমানে রাজধানীর লালবাগের চৌধুরী বাজার এলাকায় বসবাস করেন। সেখান থেকে এসে রাজধানীর মৌচাকে অবস্থিত সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অধ্যাপক ডা. ওমর ফারুকের তত্ত্বাবধানে আছেন। সপ্তাহে নিয়মিত তিন-চার দিন ডায়ালাইসিস করাতে হয় তার। সর্বশেষ গত সোমবারও তিনি ডায়ালাইসিস করেছেন। এছাড়া গত মাসের ১ থেকে ১১ তারিখ পর্যন্ত লাইফ সপোর্টে ছিলেন রাজিব।


মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে কথা হয় সেই রাজিবের সঙ্গে। এ সময় তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘টাকার অভাবে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে পারছি না। টাকার সমস্যা সমাধান হলেই কিডনি প্রতিস্থাপন করানো হবে। তবে আমার এ অবস্থায় অনেকেই এগিয়ে এসেছে। এখন পর্যন্ত অনেকেই টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। আরো অনেক টাকার প্রয়োজন।’


হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে নতুন স্বপ্ন দেখেন জানিয়ে রাজিব বলেন, আমি বেঁচে থাকতে চাই। তাই সবার সহযোগিতা চাই।


তাকে সহযোগিতার জন্য তার ০১৭২২৭১৭০৬০ নম্বর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা যেতে পারে।


অপরদিকে, রাজিবকে বাঁচাতে রোমানার মতো আরো অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। ইতোমধ্যে মুন্সীগঞ্জ-২ (লৌহজং-টঙ্গিবাড়ী) আসনের এমপি অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রমুখ রাজিবকে বাঁচাতে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে এমন তথ্য জানিয়েছেন লৌহজং উপজেলার বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের আহবায়ক হামিদুর রহমান জুয়েল।


তিনি জানান, রাজিব ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিল। তার অসুস্থতার খবর পেয়ে স্থানীয় বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে।


বিবার্তা/খলিল/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com