শিরোনাম
খাল দখল করে মাছের ঘের
প্রকাশ : ১৭ মে ২০১৭, ২০:৩৯
খাল দখল করে মাছের ঘের
খাল দখল করে এভাবেই বানানো হয়েছে মাছের ঘের
এইচ আর তুহিন, যশোর
প্রিন্ট অ-অ+

যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ভবদহ পাড়ের বিলকেদারিয়া মৌজার প্রায় ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ নবুয়ার (নাগর) খাল এখন প্রভাবশালীরা দখলে নিয়ে মাছের ঘের তৈরি করেছেন। প্রায় ২২.৭০ একর খাল শ্রেণির জমি ১৮ জন ভূমিদস্যু তথ্য গোপন করে সর্বশেষ মাঠ জরিপে ধানি শ্রেণি দেখিয়ে তা নিজেদের নামে রেকর্ড করে নিয়েছেন।


এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে ১৮ জনের বিরুদ্ধে এলএসটি (ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল) আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।


এদিকে ওই মৌজার ফাইনাল প্রিন্ট পর্চা বের হওয়ার পর রেকর্ড বুনিয়াদে জমির মালিকরা এখন আর কাউকে খালে মাছ ধরতে দিচ্ছে না। এরফলে চরম বিপাকে পড়েছেন ওই এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠী- যারা সারা বছর মাছ ওই খালে ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। অবিলম্বে খাল দখলমুক্ত করে এই খালে মাছ ধরার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।


ভূমি অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খালটি উপজেলার বালিদাহ ২৪৪ নং মৌজার জোবারডাঙ্গী থেকে শুরু হয়ে ২৪৩ নং বিলকেদারিয়া মৌজার টেকানদীর ঘাট পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার বিস্তৃত। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ অনুযায়ী হস্তান্তর যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও আর,এস জরিপে শ্রেণি গোপন রেখে ধানি শ্রেণি দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানায় রেকর্ডভুক্ত হয়েছে।


উপজেলার ২৪৩ নং বিলকেদেরিয়া মৌজায় এস,এ ৪৭৬ ও ৫২৫ দাগে ২২.৭০ একর খাল (নাগর) ও নদী শ্রেণির জমি ১ ও ২ খতিয়ানে রেকর্ডভুক্ত ছিল। আর,এস জরিপে শ্রেণি গোপন রেখে ওই দাগের মধ্যে .৯৬ একর জমি পার্শ্ববর্তী অভয়নগর থানার বারান্দি গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে আব্দুর রহমান নামের এক ব্যক্তি রেকর্ড করেছেন। যার হাল দাগ ১৩৮৪ এবং খতিয়ান ৯৬। একই কায়দায় অভয়নগর উপজেলার বারান্দি গ্রামের অমরেন্দ্র নাথ ও ভবেন্দ্র নাথের নামে ৫.৩৩ একর রেকর্ড হয়েছে। যার আর, এস খতিয়ান ২৪ এবং হাল দাগ ১৬৮৯ ও ১৬৯৫।


অভয়নগর উপজেলার আকাম আলীর ছেলে আব্দুর রশিদ মোল্যা, ওমর আলী মোল্যা, আব্দুর জব্বার মোল্যা, রফিকুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম ও হাফিজুর রহমানের নামে ৫.৪৩ একর রেকর্ড হয়েছে। যার আর, এস খতিয়ান ৮৯, ৯১ এবং হাল দাগ ১৬৮, ১৬৯১, ১৬৮৯ ও ১৬৯৩।


এভাবে একই উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে খলিলুর রহমান ও সাহেব আলী, দিঘলিয়া গ্রামের জুলমত আলীর ছেলে জামেদ আলী, একই গ্রামের কাশেম আলীর ছেলে মতিয়ার রহমান মোল্যা, হাশেম আলীর ছেলে ওহিদুজ্জামান মোল্যা, চাদঁ আলীর ছেলে খালেক সরদার, মোশারেফ হোসেন ও গুয়াখোলা গ্রামের আজহার সরদারের নামে বাকি জমি রেকর্ড হয়। চলতি বছর ফাইনাল প্রিন্ট পর্চা বের হলে এই রেকর্ডের বিষয়টি ধরা পড়ে। সরকারের পক্ষ থেকে চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারিতে খাল দখলকারি ১৮ জনের বিরুদ্ধে এলএসটি (ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনাল) আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। যার নং ৯৭৫/১৭।


সরেজমিন ওই এলাকায় দেখা যায়- খাল পাটা-নেট দিয়ে ঘিরে মাছের ঘের করেছেন স্থানীয় কামরুজ্জামান, লাভলু সরদার, বাপ্পিসহ একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি। এ সময় ঘের মালিক লাভলু সরদারের সাথে কথা হলে তিনি এটি খাল স্বীকার করে বলেন, কয়েকজনের কাছ থেকে তিনি লিজ নিয়ে মাছের ঘের করেছেন।


এ সময় উপস্থিত বালিদহ গ্রামের গোলাম মোস্তফা বলেন, ওই খালে মাছ ধরে বিক্রি করে তার সংসার চলে। শুধু তিনি নন, ওই এলাকার আলী আহম্মেদ, আব্দুর রশিদ গাজী, সিরাজ সরদার ও রাজবংশী পাড়ার অমোল, নির্মল, বিনোদসহ একাধিক ব্যক্তি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, এখন খালে মাছ ধরতে কাউকে নামতে দিচ্ছে না ঘের মালিককরা।


তাদের দাবি অচিরেই খাল দখলমুক্ত করে তাদের মাছ ধরতে দেয়া হোক। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আমিন উদ্দীন বলেন, বোরো মৌসুমে জমিতে জমে থাকা পানি সেচ দিয়ে বোরো ধানের আবাদ করা হয়। কিন্তু ঘের মালিকরা এখন সেচ কাজ করতে দিচ্ছে না। মুঠোফোনে জানতে চাইলে ঘের মালিক কামরুজ্জামান বলেন, নবুয়ার (নাগর) বলে কোন খাল নেই। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুস সা’দত জানান, নাগর খালের অধিকাংশই শ্রেণি গোপন রেখে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল দখল করে মাছের ঘের তৈরি করেছেন।


পাউবো’র (পানি উন্নয়ন বোর্ড) এর নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর গোশ্মামী জানান, ওই খালের মুখে একটি স্লুইচ গেট রয়েছে। শুধু তাই নয়, চলতি অর্থ বছরে বিলকেদারিয়ার পানি নিস্কাশনে খাল পুনঃখননের জন্য একটি প্রকল্প ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। একই সাথে খাল দখলমুক্তের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশও দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ অতুল মন্ডল জানান, অবৈধ দখলমুক্ত করতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে খাল দখলকারী একাধিক ব্যক্তির নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে।


বিবার্তা/তুহিন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com