রাজধানীর গুলশানের হোলে আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে গত বছরের জুলাই মাসে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ নামক অভিযান চালিয়ে ওই ঘটনার সমাপ্তি টানে। এরপর জঙ্গি দমনে আরো তৎপর হয় তারা। শুরু হয় একের পর এক অভিযান। সর্বশেষ গত শুক্রবার ঝিনাইদহের পোড়াহাটি এলাকায় একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। ওই অভিযানের নাম দেয়া হয় ‘সাউথ প’। শনিবার বেলা ২টার দিকে অভিযানটি সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে চলতি বছরের ২২ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ১৬টি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। এতে ৪৬ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। তাদের ৩৫ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী জঙ্গি। এছাড়া বাকি ৫ জন শিশু।
এক নজরে গুলশান থেকে ঝিনাইদহ
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে পাঁচ জঙ্গি গুলশান ২-এর ৭৯ নম্বর সড়কে অবস্থিত হোলে আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় হামলা চালায়। এ হামলায় নিহত হন দেশি-বিদেশি ২০ নাগরিক। জঙ্গিদের হামলায় নিহত হন পুলিশের দুজন কর্মকর্তাও। পরদিন সকালে সেনা নেতৃত্বে অভিযানের মধ্য দিয়ে জঙ্গিদের ১২ ঘণ্টার জিম্মি-সংকটের অবসান হয়। ওই অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হন। ওই অভিযানের নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’।
মাস না ফুরাতেই ২৬ জুলাই কল্যাণপুরে একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। ওই অভিযানের নাম ‘অপারেশন স্টোর্ম-২৬। এতে ৯ জঙ্গি নিহত হয়। ওই অভিযানে ২৪ ঘন্টার মতো সময় লেগেছিল।
২০১৬ সালের ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় একটি জঙ্গি আস্তানায় অপারেশন হিট স্ট্রং ২৭ চালায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। এতে নব্য জেএমবি নেতা, গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম আহমেদ চৌধুরীসহ আরো দু'জন নিহত হয়। এ অভিযানে মাত্র ৩০ মিনিট সময় লাগে।
২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মিরপুরের রূপনগরের একটি জঙ্গি আস্তানায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হয় জাহিদুল ইসলাম নামে অবসরপ্রাপ্ত এক মেজর। সে জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতা বলে জানিয়েছিল পুলিশ। ওই অভিযানেও সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট। ওই অভিযানের নাম ‘অপারেশন রূপনগর’।
২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরের একটি বাড়িতে অভিযান চালায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। সেখানে নব্য জেএমবির অন্যতম শীর্ষ নেতা ও আশ্রয়দাতা তানভীর কাদেরী নিহত হয়। সেখান থেকে আটক করা হয় তিন নারী জঙ্গি ও তানভীরের ১৪ বছরের ছেলেকে। এ অভিযানের সময় লাগে দুই ঘণ্টার মতো। সেই অভিযানের নাম ‘অপারেশন আজিমপুর’।
২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর গাজীপুর, আশুলিয়া ও টাঙ্গাইলে র্যাব-পুলিশ চারটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায়। ওই অভিযানের নাম দেওয়া হয় অপারেশন ‘স্পেইট-এইট’। এ সময় গাজীপুরে পৃথক দুই অভিযানে ৯ জঙ্গি, টাঙ্গাইলে দুই জঙ্গি এবং আশুলিয়ায় নিহত হয় জঙ্গিদের আশ্রয়দাতা। এ অভিযানে সময় লাগে ১২ ঘণ্টার মতো। এছাড়াও চারটি অভিযানের আলাদা চারটি নাম দেয়া হয়েছিল। এগুলো হলো- গাজিপুরের পাতারটেকে ‘অপারেশন শরতের তুফান’, হারিনালে ‘অপারেশন হারিনাল’ আশুলিয়ায় ‘অপারেশন গাজীরাস্ট’ ও টাঙ্গাইলে ‘অপারেশন কাপমারা’।
২০১৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর আশকোনায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। দুই দিনের এ অভিযানের নাম অপারেশন ‘রিপল ২৪’। এসময় ওই আস্তানায় দুই জঙ্গি নিহত হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল চারজনকে ।
২০১৭ সালের ১৫ মার্চ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। ওই অভিযানের নাম ‘অপারেশন সীতাকুণ্ড'।
পরদিন ১৬ মার্চ একই এলাকায় প্রেমতলা নামক স্থানে আরেকটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শুরু হয়। অভিযানের নাম দেয়া হয় অপারেশন ‘অ্যাসল্ট ১৬’। ওই আস্তানা থেকে মোট ১৮ জন বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়। ১৭ মার্চ শেষ হয় ওই অভিযান। ওই অভিযানে চার জঙ্গি নিহত হয়।
২০১৭ সালের ২৫ মার্চ সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়ি নামক স্থানে আতিয়া মহল নামের একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মিলে। পরবর্তীতে ঢাকা থেকে সোয়াট টিমের সদস্যরা সেখানে গিয়ে অভিযান চালায়। এরও পরে ওই জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নামে সেনাবাহিনী। 'অপারেশন টোয়াইলাইট’ নামের ওই অভিযানে চার জঙ্গি নিহত হয়। ২৮ মার্চ পর্যন্ত চলে ওই অভিযান। ওই অভিযান একজন নারীসহ চার জঙ্গি নিহত হয়।
একই রাতে আতিয়ার মহলের জঙ্গি আস্তানা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গোটাটিকর নামক স্থানে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ সদস্যসহ ৬ জন নিহত হন।
২০১৭ সালের ২৯ মার্চ মৌলভীবাজার জেলায় দুটি জঙ্গি আস্তানায় সন্ধান পায় পুলিশ। সদর উপজেলার নাসিরপুরের আস্তানায় অভিযানের নাম দেওয়া হয় অপারেশন ‘হিট ব্যাক’। এতে চার শিশু, দুই নারী ও এক শিশুসহ সাত জন নিহত হয়।
এছাড়া শহরের বড়হাট এলাকার ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন মেক্সিমাস’। এতে এক নারী ও দুই পুরুষ জঙ্গি নিহত হয়।
২০১৭ সালের ২৯ মার্চ কুমিল্লা শহরে আরো একটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশ। ৩১ মার্চ ওই আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। ওই অভিযানের নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন স্ট্রাইক আউটের’। তবে এ আস্তানায় কোনো জঙ্গির সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এদিকে, গত শুক্রবার (২১ এপ্রিল) ঝিনাইদহের পোড়াহাটি উপজেলায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়ি ঘেরাও করে রাখে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এক পর্যায়ে ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট ‘সাউথ প’ নাম দিয়ে অভিযান শুরু করে। শনিবার বেলা ২টার দিকে ওই অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে।
ঝিনাইদহের আস্তানায় কোনো জঙ্গিকে না পাওয়া গেলেও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, গুলি, অস্ত্র ও জিহাদী বই পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদ।
অভিযান শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ঝিনাইদহের পোড়াহাটি জঙ্গি আস্তানা থেকে বিস্ফোরক তৈরির রাসায়নিকভর্তি ২০টি ড্রাম, একটি নাইনএমএম পিস্তল, একটা ম্যাগাজিন এবং সাত রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও অভিযানে পাঁচটি বোমা নিস্ক্রিয় করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিবার্তা/খলিল/হুমায়ুন/মৌসুমী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]