শিরোনাম
রাতের কারওয়ান বাজার
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০১৭, ১৭:৪৭
রাতের কারওয়ান বাজার
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

গভীর রাতে রাজধানীবাসী যখন ঘুমে বিভোর, ঠিক তখনই সরগরম কারওয়ান বাজার এলাকা। পুরো এলাকায় অসংখ্য মানুষের হাঁকডাক। এর পাশাপাশি সারা রাত ওই এলাকায় চলে লাখ লাখ টাকার লেনদেনও।


সোমবার রাত ১টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৫টা পর্যন্ত রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।


রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে শাহবাগ যাওয়ার এবং হাতিরঝিল থেকে পান্থপথ যাওয়ার পথে কারওয়ান বাজারের অবস্থান।


ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমল থেকে কারওয়ান বাজার আছে। কারওয়ান সিং নামের এক মাড়োয়ারি ব্যবসায়ী প্রথমে একটি মার্কেট খোলেন। পরবর্তীতে তার নামেই কারওয়ান বাজার পরিচিত হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮০ সালে ওই বাজারে ক্ষুদ্র কাচাঁবাজারে্র আড়ৎ নামের একটি মার্কেট সিটি করপোরেশনের আওতায় নেয়া হয়। এরপর থেকে সিটি করপোরেশন বাজারটি পরিচালনা করছে।


কারওয়ান বাজারে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শাক-সবজি নিয়ে আসা হয়। বিশেষ করে যশোর, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, চট্টগ্রাম ও মানিকগঞ্জ থেকে শাক-সবজি আসে। সেই বাজারে সবজি আড়ৎ ছাড়াও ফলের আড়ৎ, শুটকি ও মাছের আড়ৎ রয়েছে। ওই আড়ৎগুলোতে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকেও মাছ ও ফল আসে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।



তারা জানান, ওই বাজার কাঁচামালের জন্য পরিচিত হলেও সেখানে সব ধরনের মালামাল পাওয়া যায়। তবে কাঁচামালের বাজার হওয়াতে বাজারটি রাতের আধাঁরেই সরগরম হয়ে উঠে। রাত ১০টা থেকে বেপারীরা তাদের কার্যক্রম শুরু করেন। শেষ হয় পরদিন সকাল ১০টায়। এ সময় শত শত মানুষের সমাগম ঘটে ওই বাজারে। সরেজমিন গিয়েও এর প্রমাণ পাওয়া গেছে।


সোমবার রাত ১টায় কাওরান বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, আইটি পার্কের সামনে থেকে শুরু করে পল্লী ভবন পর্যন্ত পুরো রাস্তা বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা বেচাকেনা করছেন। এছাড়াও সিএ ভবনের গলি, ইত্তেফাক গলি, রেল লাইন গলিসহ আশপাশের সকল গলিতে ব্যবসায়ীরা অবস্থান নিয়েছেন। রয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। এমনকি গলিগুলোতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্য সামগ্রী নিয়ে আসা ট্রাক, মিনিট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ অন্যান্য যানবাহন রাখা হয়েছে।


রাত ২টায় কারওয়ান বাজারের ক্ষুদ্র কাঁচামাল আড়তে গিয়ে দেখা গেছে, আড়ৎদাররা বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি নিয়ে দোকান সাজিয়েছেন। আবুল কালাম নামের এক আড়ৎদার জানান, কারওয়ান বাজারে রাত ৮টার পর থেকে দোকান খোলা হয়। দোকান সকাল ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে গভীর রাত ও ভোর বেলা বেশি বেচাকেনা হয়।


তিনি জানান, সেখানে ভৈরব, মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শাকসবজি আনা হয়। ওসব শাক-সবজি রাজধানীর আশপাশের এলাকায় যায় বলে জানান তিনি।


রাত তিনটায় সিএ ভবন ও শাহ্ আম্বর (রহ.) জামে মসজিদের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েকটি ট্রাক, মিনি ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও ভ্যান গাড়ি রাখা হয়েছে। শ্রমিকরা এতে কাঁচামাল বোঝাই করছেন। এ সময় শ্রমিক ও গাড়ি চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে বেপারীরা কারওয়ান বাজারে আসেন প্রতিদিন। সেখান থেকে কাঁচামাল কিনে নিয়ে যান।



কারওয়ান বাজার থেকে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারেও হকাররা ভ্যান গাড়ি দিয়ে শাক-সবজি নিয়ে যান। আহমেদ আলী নামের এক শ্রমিক জানান, তিনি দীর্ঘ দিন ধরে কারওয়ান বাজারে কুলির কাজ করছেন। তিনি প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে ৯টার দিকে একটি টুকরি নিয়ে বাজারে আসেন, সকাল ১০টায় বাসায় ফিরেন। এরপর সারা দিন ঘুমান তিনি।


ময়মনসিংয়ের ওই বাসিন্দা জানান, প্রতি রাতে তিনি ৫ থেকে ৭শত টাকা আয় করে থাকেন। বেপারীরা পরিচিত কুলিদের দিয়ে বেশি কাজ করাতে পছন্দ করে। তাই পুরানো কুলিদের আয়ও বেশি বলে জানান আহমেদ আলী।


রাত সাড়ে ৩টায় কারওয়ান বাজারে মাছের আড়তে গিয়ে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। সবজি বাজারে উপচে পড়া ভিড় থাকলেও মাছ বাজার ফাঁকা। তবে রেল ক্রসিং থেকে হোটেল সোনারগাঁও পর্যন্ত রাস্তায় অনেকগুলো ট্রাক রয়েছে। সেই ট্রাকগুলো থেকে মাছ আনলোড করছেন শ্রমিকরা। এ সময় তাদের তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন ভোরে মাছ বাজারে বেচাকেনা শুরু হয়। ভোর ৪টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত মাছ বাজারে উপচে পড়া ভিড় থাকে। এই বাজারের মাছ রাজধানীর আশপাশের এলাকাগুলোতে যায় বলে জানান করিম মিয়া নামের এক শ্রমিক ও আবুল হোসেন নামের এক মাছ ব্যবসায়ী।


তারা জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ভারত থেকে কাওরান বাজারে মাছ আসে। সেই মাছগুলো ছোট ছোট পাইকাররা ক্রয় করে নিয়ে যায়।


রাত পৌনে ৪টার দিকে টিসিবি ভবনের নিচে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েকজন ভ্যানচালক ভ্যান গাড়ি নিয়ে বসে আছে। কয়েকজন ভ্যান গাড়িতে ঘুমিয়ে আছে। এ সময় শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভ্যান চালকরা সময় ভাগ করে এলাকা ভিত্তিক কাজ করে। তারা কয়েক গ্রুপে ভাগ হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ট্রাকগুলো থেকে মাল আনলোড করে আড়তে নিয়ে যায়। আড়তে নিয়ে গেলে ভ্যান প্রতি তাদের ১০০ টাকা দেয়া হয়।


প্রতি ভ্যানে ২৫ মন মাল বোঝাই করা যায় জানিয়ে চালক আল আমিন জানান, মেইন রোড থেকে আড়তে মাল নিয়ে গেলে ১০০ টাকা। এছাড়াও ৮০ কেজির বস্তা ভর্তি মাল আড়তে নিয়ে গেলে প্রতি বস্তা ২০ টাকা করে ভাড়া নেন তারা। একটি ভ্যানে ১০টি বস্তা নেয়া সম্ভব বলে জানান তিনি।


কারওয়ান বাজারের ফল ব্যবসায়ী গাজি মিন্টু ও এমরান মাস্টার জানান, প্রতি রাতে কারওয়ান বাজার সরগরম হয়ে উঠে। আর দিনের বেলা কাচাঁবাজার এলাকা প্রায় ফাঁকা থাকে।


বিবার্তা/খলিল/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com