শিরোনাম
হান্নানসহ তিন জঙ্গির ফাঁসি
২০০৪ সালে সিলেটে যা ঘটে ছিল
প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০১৭, ০৫:৪৮
২০০৪ সালে সিলেটে যা ঘটে ছিল
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটের হযরত শাহজালালের (র.) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। ওই হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত হয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন আনোয়ার চৌধুরী, সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ আরো ৭০ জন। তবে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল ওই হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে।


বুধবার রাতে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার ও কাশিমপুর কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলতে হয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষনেতা মুফতি হান্নান, তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুল ও দেলওয়ার ওরফে রিপনকে। বুধবার রাত ১০টার সময় তাদের ফাঁসির আদেশ কার্যকর করা হয়।


যেভাবে হামলা হয়েছিল:
২০০৪ সালের ২১ মে শুক্রবার। ওই দিন সিলেটে আসেন তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী। সিলেট পৌঁছেই তিনি হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারত করতে যান। এ সময় তাকে স্বাগত জানান তৎকালীন সিলেট জেলা প্রশাসক আবুল হোসেন। এরপর মাজার জিয়ারত শেষে বেলা ১টায় শাহজালাল মাজার মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন তারা।


এদিকে, আনোয়ার চৌধুরীর আগমন উপলক্ষে শাহজালাল মাজার এলাকাসহ সিলেট নগরীতে ছিল কড়া নিরাপত্তা। কিন্তু ওই নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা স্বত্বেও গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে।


জানা গেছে, শাহজালাল মাজার মসজিদে জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিদেও ভীড়ের মধ্যে বের হয়েছিলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী। এ সময় তার সাথে ছিলেন সিলেটের জেলা প্রশাসক, সিলেট জেলা বারের সাবেক সভাপতিসহ অন্যান্যরা। এক পর্যায়ে আনোয়র চৌধুরীকে লক্ষ্য করে হঠাৎ করে শক্তিশালী গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটনো হয়। মাজার প্রাঙ্গনের মুসল্লিরা আতঙ্কে দিগ-বিদিগ দৌঁড়াদৌঁড়ি ও চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। কালো ধোয়ায় অন্ধকার হয়ে যায় পুরো এলাকা।


এ ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন পুলিশের এক সদস্যসহ তিন জন। আহত হয়েছিলেন প্রায় ৭০ জন। সেদিনের গ্রেনেড হামলায় যারা নিহত হয়েছিলেন, তারা হচ্ছেন- পুলিশ পরিদর্শক কামাল উদ্দিন, কলেজছাত্র রুবেল আহমদ এবং দিনমজুর হাবিল মিয়া। এছাড়া সিলেটের তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবুল হোসেন, সিলেট জেলা বারের সাবেক সভাপতি আবদুল হাই খান, সাংবাদিক মুহিবুর রহমানসহ প্রায় ৭০ জন আহত হয়েছিলেন।


সেদিন আনোয়ার চৌধুরীই ছিলেন হামলার মূল টার্গেট। সরাসরি তার বুকের উপর গ্রেনেড ছুঁড়ে মারা হয়েছিল। অলৌকিকভাবে সেই গ্রেনেড তার বুকে বিস্ফোরিত না হয়ে গড়িয়ে গিয়ে পায়ের একটু দূরে বিস্ফোরিত হয়েছিল। আর তাতেই ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান আনোয়ার চৌধুরী। তবে তার পায়ে স্পি­ন্টারের আঘাত লেগেছিল। সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয় তাকে।


এদিকে, দীর্ঘ এক যুগ পর চাঞ্চল্যকর সেই হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল ওরফে বিপুল, দেলওয়ার ওরফে রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেন সিলেট দ্রুত বিচার আদালত।


রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা। গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি পূর্বোক্ত রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট। পরে আসামিদের আপিল গত ৭ ডিসেম্বর খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আসামিরা রিভিউ আবেদন করেন। ১৯ মার্চ সে আবেদন খারিজ হয়। পরে গত ২১ মার্চ রিভিউ খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।


২২ মার্চ হুজি নেতা মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল এবং দেলওয়ার ওরফে রিপনের রিভিউ আবেদন খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে এসে পৌঁছায়। সিলেট কারাগারে থাকা দেলওয়ার ওরফে রিপনকে এ রায় শুনানো হয়। পরে ওইদিন সন্ধ্যায় এ তিন জঙ্গির মৃত্যু পরোয়ানা বিচারিক আদালত থেকে কারাগারে পৌঁছায়।


এরপর, গত ২৩ মার্চ নিজের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সিলেট কারাগারে বন্দী থাকা দেলওয়ার ওরফে রিপন। পরে ২৭ মার্চ তিনি লিখিতভাবে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত রবিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তিন জঙ্গির প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি নাকচ করে দিয়েছেন। কারাবিধি অনুযায়ী তাদের দণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতি চলছে।


মঙ্গলবার সকালে রিপনের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার চিঠি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে এসে পৌঁছায়। এরপর ফাঁসি কার্যকর প্রক্রিয়া শুরু করে কারা কর্তৃপক্ষ।


অবশেষে বুধবার রাত ১০টার সময় সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটে। এক সাথে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার ও কাশমির কারাগারে নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষনেতা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ‘মুফতি’ আব্দুল হান্নান ও জঙ্গি শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল ও রিপনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।


এদিকে, মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত মফিজুর ও আবু জান্দাল আপিল করেননি। ফলে তাদের ওই সাজাই বহাল থাকে।


বিবার্তা/খলিল/আকবর

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com