যথাযথ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণ শেষ করেও ইউনিয়ন পরিষদে যোগদান করতে পারেননি কুড়িগ্রাম চিলমারী উপজেলার এক নারী গ্রাম পুলিশ। চেয়ারম্যানের দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় ৫ মাস ধরে যোগদান প্রক্রিয়া ঝুলে আছে। উল্টো তার নিয়োগ বাতিল প্রক্রিয়াধীন বলে উপজেলা পরিষদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
ওই গ্রাম পুলিশের দাবি, উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. গোলাম আশেক আকা যোগদানপত্রের জন্য ৮ লাখ টাকা দাবি করেছেন। বিষয়টি জানিয়ে তিনি স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু যোগদান প্রক্রিয়ার অগ্রগতি না হয়ে উল্টো নিয়োগ বাতিলের পাঁয়তারা হচ্ছে বলে অভিযোগ তার।
ভুক্তভোগী ওই গ্রাম পুলিশের নাম ঐশি আক্তার। তিনি উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়ন ২নং ওয়ার্ডের মিস্ত্রিপাড়া গ্রামের ওবায়দুল ইসলামের মেয়ে। তার নানা গোলজার হোসেন একই ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ ছিলেন। কয়েক মাস আগে তিনি মারা গেলে পদটি শূন্য হয়।
অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী ওই গ্রাম পুলিশ উল্লেখ করেন, উপজেলা প্রশাসনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী তিনি আবেদন করে যথাযথ নিয়ম প্রতিপালন করে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। এরপর তিনি ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)-এর কার্যালয়ে যোগদান করেন। কার্যালয়ের পত্র মোতাবেক তিনি স্বাস্থ্য পরীক্ষার শেষে চিলমারী থানায় এক মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর তিনি আবারও ইউএনও অফিসে যোগদান করলে তাকে রমনা মডেল ইউনিয়ন পরিষদে পদায়ন করা হয়। গত ৫ ডিসেম্বর তিনি যোগদানপত্র নিয়ে রমনা মডেল ইউপিতে গেলে চেয়ারম্যান গোলাম আশেক আকা তার যোগদানপত্র গ্রহণ করেননি। অভিভাবকসহ বিভিন্ন সময় যোগাযোগ করে যোগদানপত্র গ্রহণের অনুরোধ করলে যোগদানের জন্য ৮ লাখ টাকা দাবি করেন চেয়ারম্যান। অন্যথায় তিনি যোগদানপত্র গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
গ্রাম পুলিশ পদে নিয়োগ পাওয়া ঐশি আক্তার বিবার্তাকে বলেন, অতি দরিদ্র্য পরিবারের মেয়ে হওয়ায় এই টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমি ৮ লাখ টাকা কোথায় থেকে দেব। টাকা না দেওয়ায় চেয়ারম্যান এখনও আমার যোগদানপত্র গ্রহণ করেননি। উল্টো আমার নিয়োগ বাতিলের পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে জানতে পেরেছি।
ঐশি বলেন, আমি নিয়োগের যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করে নিয়োগ পাই কিন্তু এখন চেয়ারম্যান টাকা চাচ্ছেন। বিষয়টি লিখিত ভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করি তারা বিবেচনায় নেবেন।
রমনা মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. গোলাম আশেক আকা বিবার্তাকে বলেন, আমি ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছুই জানি না। নিয়ম অনুযায়ী এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চেয়ারম্যানের চাহিদাপত্র থাকতে হবে। এরপর নিয়োগ বোর্ডে চেয়ারম্যান সদস্য সচিব থাকবেন। কিন্তু আমি এসবের কিছুই জানি না। যে নিয়োগের আমি কিছুই জানি না, সেই নিয়োগের যোগদানপত্র আমি কেন গ্রহণ করব?
টাকা দাবির প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন, প্রশ্নই আসে না। তারা উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করতেই পারে। যে নিয়োগ সম্পর্কে আমি জানি না, সেই নিয়োগের টাকা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। এমন অভিযোগ দিয়ে থাকলে আমি ওই মেয়ের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে পারি।
জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. মিনহাজুল ইসলাম বিবার্তাকে বলেন, আমি বিষয়টি দেখার জন্য ইউএনওকে বলেছি। তবে যতদূর জানি ওই গ্রাম পুলিশের উচ্চতা কমতি সংক্রান্ত ঝামেলা কারণে তার নিয়োগ বাতিল প্রক্রিয়াধীন। বিষয়টি ইউএনও ভালো বলতে পারবে।
চিলমারীর ইউএনও মো. মাহবুবুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, ঐশির উচ্চতা কম হওয়ায় তদন্ত করে নিয়োগ বাতিল করা হবে। নিয়োগ বাতিল প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বিবার্তা/রোমেল/জবা
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]