বাগেরহাটে দুই এতিম বোনের জমি দখলে সক্রিয় ভূমিদস্যুরা!
প্রকাশ : ২২ মে ২০২৩, ১১:৩৬
বাগেরহাটে দুই এতিম বোনের জমি দখলে সক্রিয় ভূমিদস্যুরা!
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বাগেরহাট সদর রণবিজয়পুরের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট সাদিয়া আফরিন ও নাদিয়া শারমিন কর্মসূত্রে ঢাকায় থাকেন। রণবিজয়পুরে পৈতৃকসূত্রে প্রাপ্ত তাদের ২৬ শতাংশ জায়গা রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সেই জমি দখলে নেয়ার জন্য গেলো ৯ বছর ধরে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় ভূমিদস্যুরা। সেই সূত্রে ভুয়া কাগজ তৈরিসহ জমি দেখাশোনার দায়িত্বে নিয়োজিতদের ওপর একাধিকবার হামলার ঘটনাও ঘটেছে।


ভুক্তভোগীরা বলছেন, ২০১৪ সালে তাদের বাবার মৃত্যুর পর জমিটি দখলে নিতে স্থানীয় ভূমিদস্যু আনোয়ার শেখ দীর্ঘদিন ধরে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। সেই প্রেক্ষিতে নানা সময়ে বাড়ির কেয়ারটেকার ও দারোয়ানের ওপর হামলাও চালিয়েছেন। এছাড়া জমি দখলে নিতে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে মামলা দেয়া এবং নিয়মিত হুমকির মধ্য দিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারটিকে হয়রানি করে চলছেন তিনি। তবে হামলার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত আনোয়ার শেখ বলছেন, ক্রয়সূত্রে জমিটির মালিক তিনি। বরং তার ওপর উল্টো হামলা করা হচ্ছে।


এদিকে এসব ঘটনায় স্থানীয় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের দাবি, পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ থাকার পরও এই বিষয়ে পুলিশ নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলা অধীনে বিআরএস ১১৯নং রণবিজয়পুর মৌজাধীন এসএ ১৯২নং খতিয়ান মোতাবেক বিআরএস ৬৯৮নং খতিয়ানে ১ দশমিক ০৪ একর সম্পত্তি ও বিআরএস ৬৯৫ খতিয়ানে ১ দশমিক ৪৩ একর জমি রেকর্ড হয়। বিআরএস ৬৯৮ খতিয়ানের ১ দশমিক ০৪ একর সম্পত্তিতে আবু তৈয়ব আজিজুর রহমানের নামে ২৫০ অংশে ২৬ শতাংশ সম্পত্তিতে স্বত্ববানা ভোগদখল থাকা অবস্থাতেই ২০১৪ সালের ১৯ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী সৈয়দা তৈয়বা বেগম, দুই কন্যা অ্যাডভোকেট সাদিয়া আফরিন ও নাদিয়া শারমিনকে ওয়ারিশ রেখে যান। মৃত্যুর পর তার মেয়েরা সংশ্লিষ্ট সম্পত্তিতে খাজনা পরিশোধপূর্বক ভোগদখলে আছেন।


এছাড়া নামজারি জমাভাগ নং ৪৯৭২/২০২১ করে সরকারের নিকট কর পরিশোধ করে দাখিলাপ্রাপ্ত হিসেবেও রয়েছেন তারা। আবু তৈয়ব আজিজুর রহমানের মেয়েদের মধ্যে জ্যেষ্ঠকন্যা সাদিয়া আফরিন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং দ্বিতীয় কন্যা নাদিয়া শারমিন বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন একাত্তর টিভিতে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত থাকায় পেশাগত কারণে তারা ঢাকায় অবস্থান করেন। তাই তাদের অনুপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি দেখভালের জন্য কেয়ারটেকার হিসেবে শেখ মোহাম্মদ আলী এবং দারোয়ান ও ভাড়াটিয়া হিসেবে মো. ইউনুচকে রেখেছেন।


তাদের অভিযোগ, বাড়ির কেয়ারটেকার ও দারোয়ানকে হত্যার হুমকি দেয়া, তাদের উপর যখন-তখন হামলা করা, বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভাঙা ও জিনিসপত্র চুরি- সবই চালিয়ে যাচ্ছেন আনোয়ার শেখ। এসব কারণে তার বিরুদ্ধে অন্তত আটবার ফৌজদারি মামলা ও জিডি করলেও পুলিশ নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। সর্বশেষ গত ১৪ মে আসামি আনোয়ার শেখ ও তার পরিবার ১৫/২০ জন সন্ত্রাসী নিয়ে আরেকদফা হামলা চালিয়েছে।


হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের একটি দল। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রতিকার চেয়ে এর আগে করা সবকটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাগেরহাট মডেল থানার এসআই তারিকুল ইসলাম। তিনি সেদিন ঘটনাস্থলে গেলেও পুরো সময় কোন ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টাই করেননি। উল্টো সেখানে তার সামনেই হামলার কথা স্বীকার করে কেয়ারটেকার মোহাম্মদ আলীকে মারতে যান আনোয়ার শেখ ও তার লোকজন। জমির কেয়ারটেকার মোহাম্মদ আলীর অভিযোগ, এসময় এসআই তারিক আসামি আনোয়ারকে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে ‌'আর দু’চারদিন দেরিও সহ্য হচ্ছে না' -বলে চলে যান।


তবে সেদিন ঘটনাস্থলে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বাগেরহাট সদর থানার এসআই তারিকুল ইসলাম। তিনি বিবার্তাকে বলেন, আমি সেদিন ডিউটি অফিসার ছিলাম। সেখানে অন্য অফিসার এসআই জাহিদ গেছিল। ওখানে নাকি বেড়া দিচ্ছিল, না করে এসেছে।


এদিকে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম আজিজুল ইসলাম । সবশেষ হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই ধরণের কোন অভিযোগ আমি পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিব।’


ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, চলতি বছরের ১১ মার্চ সকালে ওই জমির দারোয়ান ইউনুচকে আনোয়ার শেখ গংরা পিটিয়ে ফেলে যায়। এই ঘটনায় হাসপাতালে চিকিৎসা নেবার পর সেদিন রাতে মামলা করলে পরদিন ভোরেই ওই ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় আসামিরা। এ ঘটনায় সেদিন রাতে বাগেরহাট সদর থানায় মামলা দায়ের করেন ইউনুচ শেখ। মামলায় আনোয়ার শেখ (৫৫) ও তার ছেলে সাদমান শেখ (২৫) সহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনকে আসামি করা হয়।


ঐ বাসায় থাকেন ও দারোয়ান হিসেবে কাজ করেন উল্লেখ করে মামলার এজাহারে ইউনুচ শেখ বলেন, আনোয়ার হোসেন ও সাদমান হোসেন- সাদিয়া আফরিন এর বসতবাড়ির জায়গা ভোগপ্রাপ্ত দখলে বিভিন্ন সময়  প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছিল। ১১ মার্চ সকাল ৭টার দিকে আমি বাগেরহাট থানাধীন ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের অন্তর্গত রণবিজয়পুরের সাদিয়া আফরিন এর বসত ঘর থেকে বাইরে বের হওয়া মাত্র আসামিরা অজ্ঞাতনামা আরো ২/৩ জন শাবল, লাঠি বাড়িতে প্রবেশ করে। পরে আমাকে এলোপাথাড়িভাবে মারপিট শুরু করে। আনোয়ার হোসেন লোহার শাবল দিয়ে ও সাদমান হোসেন লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আমার ডান পা, বাম পায়ের হাঁটুর উপরসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। এসময় আশপাশের লোকজন আমাকে উদ্ধারে আসলে খুনের হুমকি দিয়ে আসামিরা চলে যায়। পরে আমি বাগেরহাট ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করি।


কিন্তু ইউনুচ চিকিৎসা নেয়ার পর এ নিয়ে রাতে মামলা করলে পরদিন অর্থ্যাৎ ১২ মার্চ ভোর ৬টায় আবার ওই ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় আসামিরা। এরপর ৯৯৯ এ কল দিয়ে জানালে সেই এসআই তারিক এসে তদন্তের বদলে উল্টো হুমকি-ধামকি দিয়ে যায় বাড়ির দারোয়ান ইউনুস ও তার ছেলে তানভীর এবং কেয়ারটেকার আলীকে। পরদিন বাড়ির কেয়ারটেকার শেখ মোহাম্মদ আলী (৫২) বাগেরহাট জেলার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় আনোয়ার হোসেন (৫৩) ছাড়াও তার স্ত্রী নাজমা বেগম (৪২) ও ছেলে সাদমান হোসেনকে (২৫) আসামি করা হয়।


মামলার এজাহারে তিনি লিখেন, আসামিরা পরসম্পদ লোভ অন্যের সম্পত্তি জোর জবরদখলে ভোগ দখলের পায়তারায় লিপ্ত রয়েছেন। আসামিরা উক্ত সম্পত্তি জোর জবরাণে দখলের চেষ্টায় লিপ্ত। তাদের বিরুদ্ধে বাদীপক্ষের একাধিক মামলা রয়েছে। সর্বশেষ জিআর ৮৩/২৩ বাগেরহাট মামলাটি বাদী পাহারাদারকে মারপিট করায় আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় দায়ের করলে তারা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে চলতি বছরের ১২ মার্চ বাড়ির পাহারাদার ইউনুচ শেখের ঘরে প্রবেশ করে তাকে সাধারণ মারপিট করে ঘর থেকে বের করে দেয়। পরে ঘরে খাটের উপর লেপ, তোশক, বালিশ ও কাথায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।


মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই তারিকুল ইসলাম বিবার্তাকে বলেন, সেই মামলার চার্জশিট হয়ে কোর্টে চলে গেছে।


ভুক্তভোগী বাড়িমালিকরা বলছেন, ২০১৪ সালে তাদের বাবার মৃত্যুর পর থেকে জমিটি দখলে নিতে স্থানীয় ভূমিদস্যু নিউ বসুন্ধরা কোম্পানির দালাল আনোয়ার হোসেন জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে নানা সময়ে বাড়ির কেয়ারটেকার ও দারোয়ানের ওপর হামলা চালিয়েছেন। এ ঘটনায় ২০১৪ থেকে এবছর পর্যন্ত কয়েকদফা থানায় জিডি, মামলা করেছেন তারা। এরইমধ্যে দখল নিতে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে মামলা দেয়া এবং নিয়মিত হুমকির মধ্য দিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারটিকে হয়রানি করে চলছেন আনোয়ার।


সাদিয়া আফরিন ও নাদিয়া শারমিনের অভিযোগ, রাস্তার পাশে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকা জমিটি দখলের দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টায় আছে আনোয়ার হোসেন। ২০১৪ সালে তাদের পিতা আবু তৈয়ব আজিজুর রহমানের মৃত্যুর পর থেকে হুমকি দিয়ে এবং হামলা চালিয়ে জমিটি দখলের অপচেষ্টা করছেন তিনি। আর এজন্য অভিযুক্ত আনোয়ার আবু তৈয়ব আজিজুর রহমানের মৃত্যুর পর তার ২৬ শতাংশ জমির অর্ধেক অর্থ্যাৎ ১৩ শতাংশের জন্য ব্যাকডেটে একটি ভুয়া আমমোক্তারনামা দলিল তৈরি করেন। যা সম্পাদনের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০১২। অথচ তার আগের রাতেই আবু তৈয়ব আজিজুর রহমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ফ্লাইটে রওনা দেয়ার পরে আবার বিমান থেকে কী করে রেজিস্ট্রি অফিসে ভুয়া দলিলটি করার জন্য তাদের বাবা পৌঁছাতে পারে, এমন হাস্যকর দাবি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ওয়ারিশরা।


সেই সূত্র ধরে আবু তৈয়ব আজিজুর রহমানের পাসপোর্ট যাচাইয়ে তাদের অভিযোগের সত্যতা পায় বিবার্তা। এছাড়া দেখা যায়, দলিলটি রেজিস্ট্রির তারিখ দেয়া হয়েছে ২০১৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি। এদিন দাতা আবু তৈয়ব আজিজুর রহমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই অবস্থান করছিলেন এবং তিনি সেখান থেকে ফিরে আসেন একই বছরের ১৩ জুলাই। সেটিও তার পাসপোর্টে ভিসার সিলে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। এভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা অবস্থায় বাগেরহাট তো দূর, দেশে এসেই দলিল রেজিস্ট্রি করার মত অসম্ভব এবং হাস্যকর দাবি নিয়ে করা এই আমমোক্তারনামা ভূয়া প্রমাণে আর কিছুই দরকার হয় না- বলছেন তারা। তারা বলেন, আমমোক্তারনামা কোন বিক্রয় দলিলও নয়। স্বাভাবিকভাবেই আইনত সেই ভূয়া আমমোক্তারনামাও দাতার মৃত্যুর পর অকার্যকার হয়ে যায়। ফলে প্রমাণ হয় দলিলটি জাল এবং সম্পূর্ণ অবৈধভাবে অপকর্মের উদ্দেশ্যে সৃজিত।


সাদিয়া আফরিন বলছেন, তার পিতা মৃত আবু তৈয়ব আজিজুর রহমানের সর্বকনিষ্ঠ অর্থ্যাৎ তৃতীয় ভাই সাহাদাতুর রহমান পরিবারসমেত ৩০ বছরের অধিক সময় ধরে স্থায়ীভাবে আমেরিকায় বসবাস করেন। তারা বাগেরহাটে আসেন না। জমিতে তার কোন দখল না থাকলেও সর্বশেষ ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে সাহাদাতুর রহমানের আমমোক্তার হতে বেআইনী প্রক্রিয়ায় নালিশি সম্পত্তি খরিদ দেখিয়ে তার বড় ভাই আবু তৈয়ব আজিজুর রহমান ও তার ওয়ারিশদের দখল, দাখিলায় থাকা সেই একই  সম্পত্তি নতুনভাবে আবারও দখল করার চেষ্টা করছেন আনোয়ার শেখ। ২০২১ সালের শেষভাগে সাহাদাতুর রহমানের ঢাকা থেকে সম্পাদিত বলে দেখানো কোন সুনির্দিষ্ট চৌহদ্দি না দেয়া একটি আমমোক্তারনামা দলিলের কথা উল্লেখ করে সাহাদাতুর রহমান বাংলাদেশে বেড়ানো শেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার পরপরই নতুনভাবে হামলা শুরু করে আনোয়ার গং।
আনোয়ার, শেখ সাহাদাতুর রহমানের অজান্তেই নিজের আত্মীয়ের সাথে যোগসাজশ করে ওই চৌহদ্দি না থাকা আমমোক্তারনামা দিয়ে আরেকটি দলিল বানিয়ে মনগড়া চৌহদ্দি দিয়ে হয়রানি শুরু করে পরিবারটিকে। যদিও সেই চৌহদ্দিও ভুল, এলাকার অন্য ব্যক্তির অংশসহ লেখা। আনোয়ার বা আমমোক্তারদাতা সাহাদাতুর রহমান কারোরই ওই চৌহদ্দি মোতাবেক নালিশি সম্পতিতে কোন ভোগদখল কখনোই ছিল না, এখনও নেই।


ভুক্তভোগীরা বলছেন, ২০২২ সালে বাগেরহাটে জমিটিকে নিজের এবং মালিকরা সেটি দখল নিতে হামলা করছে- এমন মিথ্যা অভিযোগে ভুয়া ১৪৪ ধারার একটি মামলা করেন আনোয়ার শেখ। যদিও ওই দিন জমির ওয়ারিশরা ঢাকায় নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে কর্মরত থাকা এবং জমিতে তার কোন আইনগত অধিকার ও দখল না থাকার প্রমাণ তদন্তে উঠে আসায় মিথ্যা মামলাটি খারিজ হয়ে যাবে বুঝে সেটি তুলে নেয় আনোয়ার। এরপর সে তথ্য গোপন করে অবৈধভাবে এ নিয়ে আদালতে আরেকটি মামলা করে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চান। কিন্তু সেটিও মিথ্যা এবং জমিটিতে তার আইনগত ও দখলগত কোন ধরনের অধিকার প্রমাণ করতে না পারায়, কোন বন্টননামাও দেখাতে না পারায় আদালত আনোয়ারের সেই আবেদন গতবছর খারিজ করে দেন। সেই তথ্যও গোপন করে আরেক দফায় ১৪৪ ধারার মামলাটি মিসকেসের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত করলে সেটিও  খারিজ হয়ে যায় গত সপ্তাহে। এরপরই জমিটি দখলে মরিয়া আনোয়ার দফায় দফায় হামলা চালাচ্ছে। পাশাপাশি বারবার মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করে যাচ্ছে। একইসাথে এলাকার বাইরে থাকা সাধারণ মানুষদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাদের কাছে প্রতারণার মাধ্যমে অবৈধভাবে জমিটি বিক্রির ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষও প্রতারিত হবার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।  


নাদিয়া শারমিন বলেন, আমরা এতিম দুই বোন পেশাগত কারণে ঢাকায় অবস্থান করায় বাগেরহাটে থাকতে পারি না। আমাদের এলাকাতে তেমন কেউ নেই। জমি বাড়ি দেখাশোনা করেন দারোয়ান ইউনুচ শেখ ও কেয়ারটেকার মোহাম্মদ আলী। স্থানীয় প্রভাবশালী আনোয়ার হোসেন আমাদের জমি দখলে নিতে দীর্ঘদিন ধরে অপচেষ্টার কৌশল হিসেবে আমাদের বাড়ির কেয়ারটেকার ইউনুচকে মারপিট ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে এলাকা ছাড়া করতে চাইছে। যেকোন মুহূর্তে এই কেয়ারটেকার ও দারোয়ানদের হত্যা বা কোন ভুয়া মামলায় ফাঁসাবে বলে আনোয়ার এলাকায় প্রকাশ্যেই বলে বেড়ানোয় তাদের নিরাপত্তার বিষয়েও আশঙ্কার কথা জানান তিনি।


তিনি বলেন, থানায় বারবার অভিযোগ করেও কখনোই প্রতিকার পাইনি। আসামি আনোয়ার বাগেহাটের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেটের জমির দালাল। প্রতারণার দায়ে ইতোমধ্যে ওই রিয়েল এস্টেটের মালিক জেলে রয়েছেন। তবে তার অনুসারীরা এখনও সাধারণ মানুষের জমি দখলের চেষ্টায় লিপ্ত। তাই প্রভাবশালী এ জমির দালাল চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাদের জমি দখলে সাহায্য করছে  থানা, স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের একাংশ।


তবে হামলার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেনের দাবি, ক্রয়সূত্রে জমিটির মালিক তিনি। বিবার্তাকে বলেন, ওনার (সাদিয়া আফরিন) আব্বার জায়গা ছিলে ২৬ শতক। এর মধ্যে ওনার বাবা আমাকে দিছে ১৩ শতক আর মাছুম মাস্টারকে দিছে ১৩ শতক, কবলা দলিল। ওনার বড় ও ছোট ফুফুর কাছ থেকে নিছি ২৬ শতক আর ওনার ছোট চাচা আমাকে দিছে ২৬ শতক। এখন উনি মাছুম মাস্টারকে কিছু না বলে শুধু আমাকে বলে। সেই থেকে আমারে ৪টা মামলা দিছে। আমার ঘর-দুয়ার উনি আইসা ভাইঙা গেছে। হামলার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এসব মিথ্যা কথা। এসব খালি খালি…।


আমমোক্তারনামাটি ভুয়া- ভুক্তভোগীদের এমন অভিযোগে বিষয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, উনি দলিল করে দিয়ে ওনার (সাদিয়া আফরিন) ছোট চাচার কাছে বেড়াতে গেছে। তখন আমারে তেজগাঁও রেজিস্ট্রি অফিসে একটা কাগজ করে দিয়ে যায়। বাগেরহাটে একটা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করা হয়। উনি আইসা কবলা দলিল করে দিয়ে যাবে কিন্ত সেটা উনি পারেনি, মারা গেল। তেজগাঁও রেজিস্ট্রি অফিস তো আমার না। আমার কথায় ওঠে না। সেখানে ডকুমেন্ট আছে, বাগেরহাটেও আছে।


তবে তার এইসব দাবিকে মিথ্যা জানিয়ে নাদিয়া শারমিন বিবার্তাকে বলেন, আজ পর্যন্ত আমার বাবা তাকে জমি বিক্রি করেছে বা কোন আর্থিক লেনদেন করেছে এমন কোন প্রমাণ সে আমাদের দেখাতে পারেনি। আমমোক্তারনামাটি ভুয়া এবং অকার্যকর তা আমার বাবার পাসপোর্ট-ভিসা এবং স্বাক্ষর যাচাই-বাছাই করে আমরা সম্পূর্ণ নিশ্চিত। আমার বাবা দেশে ফেরার পরও বছরখানেকের বেশি বেঁচে ছিলেন। সেসময় ঘুণাক্ষরেও এই দাবি বা চেষ্টা আসামি কখনোই করেনি। কাজেই আমার বাবা এসেই মারা যাওয়ায় তাকে দলিল করে দিতে পারেনি, এ দাবিও  ভুয়া। বরং বাবা মারা যাবার পরপরই সহজ টার্গেট ভেবে আমাদের পুরো পরিবারকে ভয় দেখাতে সে পথ আটকে এলাকায় না আসার হুমকি দিলে আমরা তার অপচেষ্টা সম্পর্কে নিশ্চিত হই এবং সেসময়ই জিডি করি।


তিনি বলেন, আমার পরদাদা ও দাদীর কাছ থেকে ওয়ারিশসূত্রে পাওয়া অনেক জমির মধ্যে শুধু একটি-দুটি খতিয়ানের জমি এটি। পরিমাণে তা আরও বেশি ছিল। সেখান থেকে ১৩ শতাংশ অনেক আগেই মাসুম মাস্টার আমার বাবার কাছ থেকে কিনে রেজিস্ট্রেশন এবং নামজারি করে ভোগদখল করছে। সেটুকু জমি তারা নামজারি করে আলাদা করে ফেলার পর ওইখানে বাকি ২৬ শতাংশ জমি আমার বাবা বেঁচে থাকা অবস্থায় এবং বংশ পরম্পরায় আমরা ভোগদখল করে আসছি। নিউ বসুন্ধরা নামের স্থানীয় ভূমিদস্যু কোম্পানির এই দালাল আব্বা মারা যাওয়ার পর সহজ টার্গেট ভেবে আমারা মেয়ে হওয়া ও ঢাকায় থাকার সুবাদে জমিটি দখলের ষড়যন্ত্র করে। এজন্য প্রতারণা করতে খোঁজ খবর নিলেও আমার বাবার জমির পরিমাণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ছিল না আনোয়ারের। তাই সে দখলের উদ্দেশ্যে অর্ধেক জমির জন্য ভুয়া নথি তৈরি করে। কিন্তু দখল করতে না পারায় এবং জমি আরও বেশি আছে জানায় সে আরও বড় পরিকল্পনা করে। সেটার অংশ হিসেবে অন্য এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার আমাদের পাশের পিছনদিকে আমার ছোট ফুপুর জমি কিনে সেখানে আমার দাদার বানানো পুরনো বাড়িটিতে ২০১৬/১৭ সালের দিকে এসে ওঠে। নতুনভাবে সেখানে অবস্থান নিয়ে আমাদের জমিতে ঢোকার পথ খুঁজছে সে। এভাবে জবরদখলে অভ্যস্ত এই ভূমিদস্যু জমিটি দখল করে বিক্রির চেষ্টা চালাচ্ছে।


বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com