শিরোনাম
স্বজনদের ফিরে পেতে চান দুঃখিনী সালমা
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৫:৩০
স্বজনদের ফিরে পেতে চান দুঃখিনী সালমা
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

সালমা বেগমের নেই বাড়ি গাড়ি অঢেল সম্পদ। সেসব পাওয়ার জন্য পাগলও নন তিনি। তার একটাই চাওয়া : হারানো বাবা-মা-ভাইবোনদের ফিরে পাওয়া, একবার কাছে পাওয়া।


কিন্তু কীভাবে তাদের পাবেন? তাদের ঠিকানাই যে ভুলে গেছেন সালমা! তার শুধু মনে আছে, তার গ্রামের বাড়ি বগুড়ায়, কিন্তু কোন উপজেলা বা গ্রাম, তাও আজ মনে নেই। বাপের নাম আলিম উদ্দিন এবং তিনি পেশায় ট্রাকচালক ছিলেন, তা জানা থাকলেও মায়ের নামটা বেমালুম ভুলে গেছেন। তবে মনে আছে এক মামার নাম - গিয়াস উদ্দিন। ওই মামা ছিলেন কৃষক।


এইটুকু স্মৃতি নিয়ে কীভাবে হারানো স্বজনদের ফিরে পেতে পারেন দুঃখিনী এই নারী?


সালমা বেগমের বর্তমানে বসবাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনের ফুটপাতে। বিবার্তার সাথে আলাপকালে তিনি জানান তার জীবনের করুণ ইতিহাস।


জানান, কোলের শিশু থাকাকালে তাকে লালন-পালনের জন্য দিয়ে দেয়া হয় বগুড়ায় বসবাসকারী খালা জরিনা বেগমের বাড়িতে। তার বয়স যখন চার থেকে পাঁচ, তখন সালমার বড় বোন হুসনে আরা তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। উদ্দেশ্য : বাসা-বাড়িতে কাজ করা। রাজধানীর মিরপুর এলাকায় কাজও শুরু করে তারা।


সেই স্মৃতিচারণ করে সালমা বেগম বলেন, আমরা দুই বোন ঢাকায় বাসা-বাড়িতে কাজ করতাম। কয়েক বছর কাজ করার পর একবার আমরা দু’জন বগুড়া যাই। কিন্তু বগুড়া গিয়ে কীভাবে যেন বোনকে হারিয়ে ফেলি। তখন আবার ঢাকায় চলে আসি। শুরু করি বাসা-বাড়িতে কাজ।


গৃহকর্মীজীবনের করুণ চিত্র তুলে ধরে সালমা বেগম বলেন, যখন বাসায় কাজ শুরু করি, তখন অনেক ছোট্ট ছিলাম। কিছুই বুঝতাম না। তখন আমাকে অনেক মারধর করা হতো। এক দিন মীরপুরের একটি বাসায় কাজ করছিলাম। তখন ওই বাসার মহিলা আমাকে মারধর করলে রাগ করে ওই বাসা থেকে বের হয়ে যাই। এ সময় জীবন নামের এক ছেলের সাথে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে ওই জীবনই তার জীবনসঙ্গী হয়।


সালমার ভাই-বোন ক'জন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার জানামতে আমরা চার বোন - নসু বেগম, হুসেনে আরা, আর আমি। একেবারে ছোট বোনটির নাম মনে নেই। সে ছোটবেলায়ই মারা গেছে। তবে বাকি বোনরা এখনও বেঁচে আছে কীনা, থাকলে কোথায় আছে, কি করে কিছুই জানি না আমি।


এভাবেই জীবন বদলে যায় সালমা বেগমের। শুধু কি জীবন, এমনকী নাম পর্যন্ত পাল্টে গেছে সালমা বেগমের।


তিনি জানান, ছোটবেলায় পিতা-মাতা নাম রেখেছিলেন মনোয়ারা বেগম। কিন্তু ঢাকায় এসে অনেক বাসায় গৃহকর্মী হয়েছেন। সেই সময় অনেকেই নাম বদলে দিয়েছেন। এভাবে মনোয়ারা বেগম এক পর্যায়ে হয়ে যান সালমা বেগম। এখন তিনি সবার কাছে সালমা নামেই পরিচিত। জাতীয় পরিচয়পত্রেও তিনি ওই নামই নাম দিয়েছেন। মায়ের নাম জানা না থাকায় জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম দিয়েছেন ফাতেমা বেগম।


তবে জাতীয় পরিচয়পত্র বানালেও তিনি সেটা দেখাতে পারেনি। বললেন, ‘ভাই ফুটপাতে থাকি, সেটা হারাই গেছে।’


সালমার কোনো ঘর নেই, তবু তিনি 'ঘর' বেঁধেছেন চাঁদপুরের মতলব উপজেলার রায়েরকান্দি গ্রামের মোহাম্মদ জীবনের সঙ্গে। জীবন জানালেন, তাদের বিয়ে হয়েছে প্রায় ১০/১২ বছর আগে। রাজধানীর মিরপুর এলাকায় ঘুরত ঘুরতে দেখা, প্রেম এবং এক পর্যায়ে বিয়ে।


সালমার একটিই স্বপ্ন, পিতা-মাতার সন্ধান পাওয়া - একথা জানিয়ে জীবন বলেন, ‘সবার বাপ-মা আছে। কিন্তু তার বাপ-মা নেই। সেটাই তার দুঃখ। আমি অনেক বার চেষ্টা করেছি। কিন্তু গ্রামের নাম জানা না থাকায় কিছু করতে পারিনি। সালমা সব সময় তার বাপ-মা’র জন্য কাঁদে। সে পিতা-মাতাকে পেতে চায়, সবার মতো মা’কে মা বলে ডাকতে চায়, বাবাকে বাবা বলে ডাকতে চায়।


তিনি বলেন, সালমার এখন এখন স্বামী ছাড়া কেউ নাই। মা-বাবাকে পেলে, আমরা যেভাবে নিজের বাড়িতে যাই, সেও তার গ্রামের বাড়িতে যেতে পারতো। তার কিছু চাওয়া-পাওয়া নাই। সে শুধু বাবাকে বাবা বলে ডাকবে। মাকে মা বলে ডাকতে চায়। ভাই-বোনের পরিচয় জানতে চায়। এটাই চাওয়া, আর কিছু নয়।


সালমা বেগম এখনো বাসা-বাড়িতে কাজ করে বলে জানিয়ে জীবন বলেন, আমাদের দুই সন্তান ছিল। এর মধ্যে ছোট ছেলে মারা গেছে। বড় সন্তান রাকিব একটি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। আমি লেখাপড়া না করলেও ছেলেকে লেখাপড়া করাতে চাই।


বিবার্তা/খলিল/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com