শিরোনাম
প্রতারণার নতুন কৌশল ‘কল স্পুফিং’
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৬:৫৫
প্রতারণার নতুন কৌশল ‘কল স্পুফিং’
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে অপরাধীরাও পাল্টাচ্ছে তাদের কৌশল। বিভিন্ন জেলার ডিসি, ইউএনও ও সরকারের অন্য দফতরের কর্মকর্তাদের মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে ‘কল স্পুফিং’-এর মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। ইতোমধ্যে ওই চক্রের বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।


জানা গেছে, ‘কল স্পুফিং’-এর মাধ্যমে গত ১২ ডিসেম্বর ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন চাঁনের মোবাইলে ফোন দেয় প্রতারকরা। তারা মোফাজ্জলের কাছ থেকে সরকারি প্রকল্পে বরাদ্দের কথা বলে বিকাশের মাধ্যমে ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে বিষয়টি বুঝতে পেরে ১৪ ডিসেম্বর ঝিনাইগাতী থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন তিনি।


এর আগে ৬ অক্টোবর ব্রাক্ষণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসকের (ডিসি) মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে ফোন দিয়ে বিকাশের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালানো হয়। ওই চেয়ারম্যান বিষয়টি বুঝতে পারেন এবং সাথে সাথে ডিসিকে অবগত করেন। এ ঘটনায় ১৯ নভেম্বর আশুগঞ্জ থানায় একটি মামলা করা হয়।


এভাবে সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তার মোবাইল নাম্বার স্পুফিংয়ের মাধ্যমে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতারকদল।


এদিকে, ১ ফ্রেব্রুয়ারি র‌্যাব সদস্যরা প্রতারক চক্রের ৯ সদস্যকে আটক করে। তারা হলো- আশরাফুল ইসলাম ওরফে আপেল (২০), মাহমুদল হাসান ওরফে হাসান ওরফে হৃদয় চৌধুরী ওরফে রবিন (১৯), রফিকুল ইসলাম, মহিদুল ইসলাম ওরফে মিলন (২০), আবু কাওছার ওরফে সাবু (১৯), নাজমুল হাসান (১৯), আমানউল্লাহ আমান (২৮), সাগর হোসাইন (২৬) ও বিল্লাল হোসেন (২১)।


আপেল ওই চক্রের হোতা। রবিন ইয়েস কার্ড দিয়ে স্পুফিং করতে সরাসরি সহযোগিতা করতো। রাকিবুল কখনো পিয়ন, কখনো বাড়ির দারোয়ান, কখনো কাজের লোক সেজে প্রতারণার শিকার ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা আনতো। মিলন, নাজমুল ও কাউছার বিকাশের টাকা সংগ্রহ করতো। আমান ও সাগর অবৈধ ইন্টারনেট ব্যবসায়ী এবং বিল্লাল তাদের কর্মচারি।


ওই পাঁচ প্রতারকের কাছ থেকে র‌্যাব ২২টি মোবাইল ফোন, ৫৩টি সিম, দুইটি ল্যাপটপ, চারটি সিপিইউ, পাঁচটি মনিটর, একটি মডেম ও প্রতারণালব্ধ নগদ ১৭ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে র‌্যাব।


র‌্যাব জানিয়েছে, এই প্রতারকরা ইতোমধ্যে কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ, নীলফামারী, দিনাজপুর, ব্রাক্ষণবাড়িয়াসহ বেশ কয়েকটি জেলার ডিসির মোবাইল নাম্বার স্পুফিং করে প্রতারণা করেছে। এছাড়াও ভোলা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, ঠাকুরগাঁও, চাঁদপুর, মেহেরপুর, বাগেরহাটসহ প্রায় ৪০টি উপজেলার নির্বাহী অফিসারের পরিচয় দিয়ে এখন পর্যন্ত ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।


র‌্যাব আরো জানায়, প্রতারকরা ইয়েস কার্ডের অ্যাপসের মাধ্যমে মোবাইল নাম্বার স্পুফিং করে ডিসি ও ইউএনও এর নাম ভাঙ্গিয়ে সরকারি কাজের বরাদ্দের কথা বলে জনপ্রতিনিধিদের সাথে প্রতারণা করে থাকে।


এ ব্যাপারে র‌্যাব-৪ এর কমান্ডিং অফিসার, অ্যাডিশনাল ডিআইজি লুৎফুর কবির জানান, মোবাইল স্পুফিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে প্রতারকরা যে কারো মোবাইল নাম্বার তৈরি করে সেই নাম্বার থেকে ফোন দিতে পারে।


তিনি জানান, প্রতারকরা ‘আইটিইএল মোবাইল ডায়ালার’ নামের একটি সফটওয়ারকে ডেভলপ করে ‘ইয়েস কার্ড মোবাইল অ্যাপস বানায়। পরে ইয়েস কার্ড অ্যাপস মোবাইলে ইনস্টল করে সেখানে একটি ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করে। ফোন করার সময় মিনিট কিনতে হয়। ওই মিনিট দিয়ে মোবাইলের সফটওয়্যারের মাধ্যমে তারা প্রতারণা করে থাকে।


তিনি আরো জানান, এ ধরনের প্রতারণার সাথে জড়িত কয়েকজনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।


বিবার্তা/খলিল/হুমায়ুন/পলাশ


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com