শিরোনাম
সম্মেলন: পরিবর্তন হচ্ছে না শীর্ষ দুই পদে
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০১৬, ০৮:২৯
সম্মেলন: পরিবর্তন হচ্ছে না শীর্ষ দুই পদে
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

আওয়ামী লীগে সভাপতি পদে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার বিকল্প নেই, দলের মধ্যে এ কথা সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত। তবে আসন্ন সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক কে হবেন? এ নিয়ে চলছে জল্পনাকল্পনা। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে এ তালিকায় আছে ওবায়দুল কাদের ও মোহাম্মদ নাসিমের নাম। কিন্তু এটা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গেছে. দলের শীর্ষ দুই পদে কোনো পরিবর্তন আসছে না। এদিকে প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে বড় কোন পদ দেয়া হবে কি-না এ নিয়েও কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে চলছে ব্যাপক আলোচনা।


আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় দলের ত্রিবার্ষিক এ সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হবে। নির্ধারণ হবে কোন নেতা কোন পদ পাবেন। দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতে পদ রক্ষা এবং নতুন পদ পাওয়ার আশায় চলছে নেতাদের শেষ মুহূর্তের দৌড়ঝাঁপ।বিগত সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদের পরিবর্তন হয়নি। দ্বিতীয়বারের মতো এ পদে বহাল রয়েছেন জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এবারও পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না এমন মন্তব্য একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার।


এক্ষেত্রে সততা, দলীয় প্রধানের প্রতি আনুগত্য এবং দলীয় প্রধানের আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে এগিয়ে আছেন আশরাফ। তবে কেউ কেউ আবার সাধারণ সম্পাদক পদে সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য ওবায়দুল কাদের ও মোহাম্মদ নাসিমের কথা বলছেন। লড়াকু ছাত্রনেতা, কর্মঠ এবং শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসেবে ওবায়দুল কাদের আলোচনায় আছেন। জাতীয় নেতা এম মনসুর আলীর ছেলে হিসেবে শুধু নয়, দলে এবং মন্ত্রিপরিষদে (স্বরাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য) সফল হিসেবে সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার আলোচনায় আছেন নাসিমও।


এদিকে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। আসন্ন সম্মেলনে তিনি রংপুরের কাউন্সিলর হিসেবে যোগ দেবেন। জয়ের পদ কি হবে? তাকে সভাপতিমণ্ডলীতে যুক্ত করা হবে নাকি গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে নতুন কোন পদ সৃষ্টি করা হবে? এসব নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই নেতাকর্মীদের। দলের শীর্ষ নেতাদের মুখেও জয়ের নাম। এবারের সম্মেলনে জয়কে হাইলাইট করার, ফোকাস করার কথা বলছেন অনেকে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমানে আছেন মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি ও অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক।


দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, হানিফ এবং দীপু মনিকে পদোন্নতি দিয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। সেক্ষেত্রে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে পদোন্নতি পেতে পারেন বর্তমান সাংগঠিনক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই বাহাউদ্দিন নাছিম বর্তমানে মাদারীপুরের সংসদ সদস্য। তিনি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বরিশাল বিভাগের দায়িত্বে আছেন।


খালিদ মাহমুদ চৌধুরী দিনাজপুরের সংসদ সদস্য। তিনি রংপুর বিভাগের দায়িত্বে আছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্য আলোচিত নেতা ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। বর্তমানে তিনি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যপদের জন্য নতুন যারা আলোচনায় আছেন তাদের মধ্যে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নাম শোনা যাচ্ছে।



জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় বোনের স্বামী আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আবদুর রব সেরনিয়াবাতের ছেলে জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ এবং বরিশাল-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ শেখ হাসিনা এবং দলের নেতাকর্মীদের প্রিয় মুখ। বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় সদস্য। জাতীয় নেতা এএইচএম কামরুজ্জামানের ছেলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকেও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করা হতে পারে বলে জানা গেছে।


কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুকে এবার পদোন্নতি দিয়ে সম্পাদক করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। সম্পাদক পদে জায়গা পেতে পারেন তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গেছে, উভয়েই দলে এবং সরকারে যথেষ্ট শ্রম দিয়ে দলীয় প্রধানের আস্থা অর্জন করেছেন। পদোন্নতির তালিকায় আছেন জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। পদোন্নতি পেতে পারেন মুন্সীগঞ্জের সংসদ সদস্য ও উপ-দফতর সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস। দীর্ঘদিন এই পদে থেকে তিনি দলের জন্য যেমন কাজ করেছেন তেমনি প্রধান দলীয় প্রধানেরও আস্থা অর্জন করেছেন।


সজীব ওয়াজেদ জয় প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ইতিমধ্যে তাকে (জয়কে) রংপুর থেকে সম্মেলনের কাউন্সিলর করা হয়েছে। সজীব ওয়াজেদ জয় দেশের তথ্য ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন। তিনি দেশের সম্পদ। আওয়ামী লীগে তাকে নেয়া হলে তিনি হবেন দলের বড় সম্পদ।


কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা বলেন, সাধারণ সম্পাদক পদের আকাঙ্ক্ষা অনেকেরই আছে। তবে দলীয় প্রধানের সবুজ সংকেত ছাড়া এ পদে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বী হবে না। বঙ্গবন্ধু কন্যা যতদিন আছেন, তার মতামত সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, সর্বজনস্বীকৃত। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তিনি দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছর টানা এই দায়িত্ব পালন করেছেন। তাকে অব্যাহতি দেয়া হলে তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন। দলের অন্য পদে কে বা কারা আসবেন- সে বিষয়ে তিনি বলেন, এটা একা আমার সিদ্ধান্ত নয়। সবার মতামত নিয়েই পদ চূড়ান্ত করা হবে।


দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত যেকোন সময়ের তুলনায় এবারের সম্মেলন হবে বেশি জাঁকজমকপূর্ণ। সম্মেলনে সাড়ে ছয় হাজার কাউন্সিলরের পাশাপাশি লক্ষাধিক নেতাকর্মী অংশ নেবেন। আসবেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রতিনিধিরা। সম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে গঠন করা হয়েছে ৬৯ সদস্যের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি।


কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিতব্য ২০তম জাতীয় কাউন্সিলে (সম্মেলন) গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন, পরিবর্ধনের মাধ্যমে কার্যনির্বাহী কমিটির আকার বৃদ্ধি এবং নতুন আঙ্গিকে দলের ঘোষণাপত্র পেশ করবে আওয়ামী লীগ। ঘোষণাপত্রে থাকবে পরবর্তী (একাদশ) জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিক-নির্দেশনা।আওয়ামী লীগের বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি, সভাপতিমণ্ডলী, সাধারণ সম্পাদক (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ), সম্পাদকমণ্ডলী, কোষাধ্যক্ষ এবং সদস্য এই ৬ ধরনের পদ নিয়ে কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত। এর মধ্যে একজন সভাপতি, ১৩ জন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, একজন সাধারণ সম্পাদক ও ৩ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সম্পাদকমণ্ডলীতে ২১টি পদে (সাংগঠনিক ৭) ২৮ জন, কোষাধ্যক্ষ পদে একজন এবং সদস্য ২৬ জনসহ মোট ৭৩ জনের একটি কমিটি রয়েছে।


একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এবার সভাপতিমণ্ডলী এবং সাংগঠনিক সম্পাদকের আকার বাড়বে। সভাপতিমণ্ডলীতে আরও ৩ জন এবং ময়মনসিংহ নতুন বিভাগ হওয়ায় সেখানে একজন সাংগঠনিক সম্পাদক পদ সৃষ্টি করা হবে। সম্পাদকমণ্ডলীতে একটি প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদকসহ আরও তিনটি নতুন পদ হতে পারে। সবমিলে কার্যনির্বাহী কমিটির আকার ৭৭ থেকে ৮১ সদস্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।


বিবার্তা/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com