বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও বিআরটির যৌথ উদ্যোগে রাজধানীতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সিটিং ও গেটলক সার্ভিস। কিন্তু নির্দেশনা অমান্য করেই রাজধানী জুড়ে এখনো বেশ কিছু পরিবহন কোম্পানি সুযোগ পেলেই হাঁকাচ্ছেন বাড়তি ভাড়া।
যাত্রীর চাপ কম থাকলে জোর করেই আদায় করা হচ্ছে সিটিং ভাড়া। মালিক সমিতি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ তদারকি থাকলেও যাত্রীদের ভোগান্তি কিছুতেই কমছে না। গত রবিবার (১৪ নভেম্বর) সিটিং সার্ভিস বন্ধের ঘোষণার দিন থেকে ২/৩ দিন সরেজমিনে রাজধানীর ব্যাস্ততম পয়েন্টগুলো ঘুরে ও গণপরিবহনের যাত্রীদের সাথে কথা বলে এসব বিষয় উঠে আসে।
মালিক সমিতি ও বিআরটিএর যৌথ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশজুড়ে বাসভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি কিলোমিটার হিসাবে বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও তা মানা হচ্ছে না। সিটিং ও গেটলক সার্ভিসের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি বাস রুট কোম্পানি ওয়েবিল নামে একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে। ফলে যাত্রীরা অনেকটাই জিম্মি হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে ওয়েবিল সিস্টেমের প্রতিবাদ করে ও শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া নিশ্চিত করতে রাজধানীর বাড্ডা,শনির আখড়াসহ বেশ কিছু স্থানে শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণের রোষানলে পড়েছে বেশ কিছু কোম্পানির বাস।
সিটিং সার্ভিস বন্ধ হবার দিন থেকে প্রতিদিনই সকাল থেকে মালিক সমিতি ও ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভিজিলেন্স টিম ও ভ্রাম্যমাণ আদালত দেখা যায় রাজধানীর ভিভিন্ন পয়েন্টে। ভিজিলেন্স টিম সময় সুযোগ বুঝে বাসে উঠে যাত্রীদের সাথে কথা বলছে ও বাড়তি ভাড়াসহ অন্য কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা জানতে চেষ্টা করছে। অনিয়ম পেলে জরিমানাসহ চালকের লাইসেন্স জব্দসহ আইনানুগ ব্যাবস্থা নিচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ক্ষোভ প্রকাশ করে মোস্তাফিজ নামক একজন নিয়মিত গণপরিবহন ব্যবহারকারী বিবার্তাকে বলেন, দফায় দফায় আমাদের সাধারণ জনগণের উপরেই যত বোঝা আসে। ডিজেলের দাম বেড়ে গেছে, বাস ভাড়াও বাড়ানো হলো। সেই সাথে কাঁচাবাজারসহ নিত্য-প্রয়োজনীয় জিনিসের দামও বেড়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। বলার কোনো ভাষা নেই। আপনারা জোর করে যা চাপাবেন আমরা তাই মেনে নেবো। এ ছাড়া আমাদের কি-ই-বা করার আছে। এদিকে অফিসের বেতন বাড়ার কোনো খবর নাই।
আনিস নামের এক বাসযাত্রী বিবার্তাকে বলেন, আমার প্রতিদিন একটি লম্বা দূরত্ব পার হয়ে অফিসে যাতায়াত করতে হয়। সিটিং সার্ভিস বন্ধের পর অল্প দূরত্বের ভাড়া কমলেও বেশি দূরত্বের ভাড়া আগের চেয়ে বেড়েছে।
রাজধানীতে চলমান বিভিন্ন কোম্পানির পরিবহন শ্রমিক ও বাসচালকদের সাথে কথা বলেও এসব ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। বিহঙ্গ পরিবহনের হেল্পার সাইফুল বিবার্তাকে বলেন, সদরঘাট থেকে মিরপুরের ভাড়া ৩৫ টাকা নিচ্ছি। আমাদের এটা গেইটলক পরিবহন। সদরঘাট থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট থেকে মিরপুর- দুই ভাগে ভাড়া দিতে হয়। এই দুই গন্তব্যের মধ্যে যেখানেই নামা হোক ভাড়া দিতে হয় একই। এটা শুধু আমাদের না, বেশ কিছু কোম্পানি এই নিয়মেই এখনো বাস চালাচ্ছে। না হলে বাসের তেল খরচও ওঠে না।
একই চিত্র দেখা যায় আয়াত, খাজাবাবা পরিবহনে। যাত্রাবাড়ীগামী যাত্রীদের কাছ থেকে সিটিং বা গেইটলকের ভাড়া নিচ্ছেন হেল্পার আরাফাত। সিটিং ভাড়া কেন আদায় করছেন জানতে চাইলে তিনি বিবার্তাকে বলেন, আমরা নিয়মের মধ্যেই ভাড়া নিচ্ছি। একজন যাত্রীও দাড়িয়ে নেই না আমরা। আমাদের এটা গেইটলক সার্ভিস। যেখানেই নামেন মাঝখানে ফার্মগেট এবং চিড়িয়াখানার ভাড়া দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে মিরপুর থেকে ফার্মগেট দিতে হবে ২৫ টাকা এবং ফার্মগেট থেকে যাত্রাবাড়ী গেলে দিতে হবে ২৫ টাকা। এটা নিয়ে আমাদের কোনো যাত্রী তো কিছু বলছেন না, আপনাদের কেন এত সমস্যা হচ্ছে বুঝি না।
কিছু সময় পরেই খাজাবাবা বাসের যাত্রী সেলিম হোসেনের সাথে বাকবিতণ্ডা শুরু করেন বাসের কন্ডাক্টর হায়দার। অগত্যা অতিরিক্ত ভাড়া পরিশোধ করেই বাস থেকে নামতে হয় ব্যাংক কর্মকর্তা সেলিমকে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি জানান, মিরপুর ১ থেকে ফার্মগেট যেখানে ২০ টাকা ভাড়া সেখানে সে দাবি করছে ৩৫ টাকা। এগুলা কি কোন ধরনের সভ্য আচরণ হতে পারে? মান-সম্মান বাঁচাতেই এদের সাথে কথা বেশি বাড়াই না। আমরা এদের কাছে অসহায়। দেখার যেন কেউ নেই।
শাহবাগ মোড়ে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা এস আই মাহবুব বিবার্তাকে জানান, সিটিং অফ হয়ে যাবার পরে রাস্তায় যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে কিছুটা। তবে আমাদের সাথে মালিক পরিবহন ও ভিজিলেন্স টিম কাজ করছে । আশা করছি এই সমস্যা বেশিদিন থাকবে না। তবে চালক হেল্পারদের আরও বেশি যাত্রীবান্ধব হতে হবে ।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বিবার্তাকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ১৯৬টি গ্যাসচালিত বাস ছাড়া সব বাসে নতুন ভাড়ার তালিকা লাগিয়ে দিয়েছি। স্টিকার লাগাচ্ছি। তদারকির জন্য সরেজমিনে আমাদের ১১ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১১টি ভিজিলেন্স টিম রয়েছে। দরকার হলে আরো বাড়ানো হবে।
বিবার্তা/আদনান/কেআর/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]