গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধি রাজধানী ঢাকার কর্মজীবী মানুষকে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। করোনাকালের অর্থনৈতিক দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে যখন মানুষ চেষ্টা করছে; তখন বাসভাড়া বৃদ্ধিতে নতুন করে ভোগান্তিতে পড়ে গেছে নাগরিক জীবন।
বিশেষ করে অল্প বেতনে চাকরি করেন, সীমিত আয়ের মানুষ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, যাদের প্রতিদিন কর্মস্থলে যেতে হয় তারা পড়ে গেছেন বিপাকে। তাদের অভিযোগ, জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। গণপরিবহনে ভাড়ার টাকার যোগান দিতে তাদের অন্য খরচ কর্তন করতে হচ্ছে।
তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন বাসভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ব্লগ, টুইটার এমনকি টিভির টকশোগুলোতে গণপরিবহনের অযৌক্তিকভাবে ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ করা হচ্ছে। তাদের বক্তব্য বাস মালিক সমিতি ও বিআরটিএ’র কিছু অসাধু কর্মকর্তা সিন্ডিকেট করে বাসভাড়া বাড়িয়েছেন। বাস্তবতার সঙ্গে এসি রুমে থাকা ওই কর্মকর্তাদের কোনো ধারণা নেই। রবিবার (১৪ নভেম্বর) যাত্রীদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তেলের মূল্য ২৩ শতাংশ বৃদ্ধির পর বাসভাড়া ২৬ শতাংশ এবং লঞ্চভাড়া ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি অবাস্তব ধারণা থেকে করা হয়েছে। কারণ তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাসভাড়া শতকরা ৩ থেকে ৫ শতাংশ বৃদ্ধি হতে পারে। কিন্তু বাস মালিকদের সুবিধামতো বিআরটিএ কিলোমিটারপ্রতি বাসের ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে। তারপরও রাজধানীর বাসগুলোতে সেই নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে আরো বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সিএনজিচালিত বাসে ডিজেলচালিত বাসের ভাড়া নেয়া হচ্ছে।
এ নিয়ে গণঅসন্তোষ চরম পর্যায়ে চলে গেছে। রাজধানীতে প্রতিদিন বাসভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ, মানববন্ধন হচ্ছে। বাসের যাত্রীদের সঙ্গে ড্রাইভার, কন্ডাক্টরদের ঝগড়া-মারামারি হচ্ছে। বিআরটিএ ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা করছে, স্টিকার লাগিয়ে সিএনজি ও গ্যাসের বাস চেনার ব্যবস্থা করেছে, বাস মালিক সমিতি দাবি করছে তারা বেশি ভাড়া আদায়কারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বিবার্তাকে বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। অন্যায় ও অন্যায্যভাবে বাড়ানো বাস ও লঞ্চের ভাড়া বাতিলের দাবি জানান তিনি।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিবহন মালিকরা দেশবাসীকে ধর্মঘটের নামে জিম্মি করে ভাড়া বৃদ্ধির নাটক মঞ্চস্থ করে। পরে সরকারের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ভুয়া অযৌক্তিক একটি ব্যয় বিশ্লেষণ নাটক দেখিয়ে একচেটিয়াভাবে মালিকদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়।
তবে এরশাদ নামের এক বাস চালক বিবার্তাকে বলেন, ভাড়া বেড়েছে ৫ টাকা। গাবতলী থেকে যমুনা ফিউচার পার্ক ২৫ টাকা ছিল, এখন ৩০ টাকা হয়েছে। এভাবে সব স্টেশনে ৫ টাকা বেড়েছে। বাস কিসে চলে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, স্টিকার লাগানো আছে, দেখেন সামনে। বাস চলে ডিজেলে। কিছুক্ষণ আগেই পাম্প থেকে সিএনজি নেয়ার কথা অস্বীকার করেন তিনি।
এ বিষয়ে চালকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো ঝামেলা কইরেন না। বাস থেকে নামেন। এদিকে, ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল হক বিবার্তাকে বলেন, গণপরিবহনের নৈরাজ্য ঠেকাতে ডিএমপি, বিআরটিএ ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা রাজধানীসহ সারা দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।
বিবার্তা/খলিল/গমেজ/আবদাল/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]