শিরোনাম
ইংরেজী শিক্ষক থেকে মানবপাচারকারী
প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০১৭, ১৮:৩২
ইংরেজী শিক্ষক থেকে মানবপাচারকারী
জব্দকৃত পাসপোর্ট, জাল ভিসা, অবৈধ ভিসা তৈরী সামগ্রী ও বিদেশী মুদ্রা
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

মো. সেলিমুজ্জামান(৪১), ব্রাক্ষণবাড়ীয়ার কসবা উপজেলার মান্দারপুর গ্রামের আব্দুল ওয়াদুদের ছেলে। শিক্ষাজীবন শেষে তিনি ইংরেজী শিক্ষক ছিলেন। সেই সুবাদে সবার কাছে তিনি সেলিম মাস্টার নামে পরিচিত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তিনি বদলে যান। সেলিম মাস্টার থেকে হয়ে যান একজন পারদর্শী মানবপাচারকারী চক্রের মাস্টার। সম্প্রতি র‌্যাবের অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।


র‌্যাব জানায়, শিক্ষকতার পাশাপাশি সেলিম এক পর্যায়ে তিনি স্টুডেন্ট কনসালটেন্সির মাধ্যমে মানবপাচারে জড়িয়ে পড়েন। এমনকি আরো অনেকেই তিনি মানবপাচার চক্রের সদস্য বানিয়েছেন। যাদেরকে নতুন মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য বানানো হতো, তাদের শিক্ষা দিতেন তিনি। এছাড়া তাকে সহযোগিতা করতেন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ওমরপুর গ্রামের আব্দুল কাইয়ুমের ছেলে মো. রাশেদ খান(৩৯), নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার আকানগর গ্রামের মো. মিয়া উদ্দিনের ছেলে এএসএম মাহমুদুল হাসান ওরফে সুজন(৩৮) ও শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচ্ছন্নতাকর্মী রাসেল খান(৩২)।


র‌্যাব আরো জানায়, মানবপাচারে জড়িত হওয়ার পর সেলিম মাস্টার গাজীপুরের জয়দেবপুর শিমুলতলী এলাকায় বসবাস করে। এছাড়া তার সহযোগী রাশেদ খান রাজধানীর ভাটারা থানার জোয়ারসাহারায় একটি ফ্লাটে এবং এএসএম মাহমুদুল হাসান ওরফে সুজন ভাটারা বোটগার্ড নুরে চলা এলাকায় একটি বাসায় ভাড়া করে থাকেন। তাদের মধ্যে রাশেদ খান জাল ভিসা ও প্রয়োজনীয় জাল কাগজপত্র তৈরী করতো। সুজন ও রাসেল ইমিগ্রেশন ও বিমানবন্দর অতিক্রম করার কাজ করতো।


সেলিম মাস্টার ও রাশেদ সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের সাথে যুক্ত রয়েছেন। বাংলাদেশের জেলাগুলোতে তাদের অনেক এজেন্ট রয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্যদেশেও তাদের কয়েকটি এজেন্ট রয়েছে। বিদেশী এজেন্টরা পাচারকারীদের তাদের দেশের ইমিগ্রেশন অতিক্রম করাতো। তবে উন্নত দেশে প্রেরণের ক্ষেত্রে তাদের বিদেশী এজেন্টরা বেশি দায়িত্ব পালন করতো বলে জানিয়েছে র‌্যাব।


র‌্যাব আরো জানান, এই সংঘবদ্ধ চক্র কৌশলে সাধারণ মানুষকে লিবিয়া পাঠানোর পর সেখান থেকে বন-জঙ্গল ও সাগর পথেও অন্যান্য দেশে পাঠানোর কাজ করে। এ সময় অনেকেই মারা যায়, অনেককে জিম্মি করে তারা মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। টাকা না দিলে তাদের মারধরও করা হয়।



এদিকে, সেলিম মাস্টার বাহিনীর কাছে জিম্মি এক ভিকটিমকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, লিবিয়াস্থ বাংলাদেশী দূতাবাস ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের সহায়তায় সুমন নামের ওই ভিকটিমকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব। বুধবার রাতে সমুন দেশে ফিরেছে।


বৃহস্পতিবার দুপুরে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সুমন জানান, তিনি সেলিম মাস্টারের মাধ্যমে লিবিয়া গিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর তাকে জিম্মি করে নির্যাতন করা হয়। তার কাছে সাড়ে ৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। পরে তিনি দেশে থাকা স্বজনদের মাধ্যমে ওই মুক্তিপনের টাকাগুলো তাদের কাছে পৌঁছে দেন। কিন্তু বন্ধ হয়নি নির্যাতন। এরপর আরো এক লাখ ২০ হাজার টাকা মুক্তিপন চাওয়া হয়। পরে র‌্যাবের দ্বারস্ত হন সুমনের স্ত্রীর বড় ভাই মো. নূরুল আলম। এক পর্যায়ে মুক্তিপনের টাকা আদায়কালে র‌্যাব সদস্যরা সেলিম মাস্টার, রাশেদ ও মাসুমকে আটক করে।


এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানিয়েছেন র‌্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্ণেল খন্দকার গোলাম সারোয়ার।


তিনি জানান, সেলিম মাস্টার ইংরেজী শিক্ষক থেকে মানবপাচারকারী চক্রের মূলহোতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলো। এছাড়া তাদের বিশাল একটি চক্রের সন্ধানও পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে ওই চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে আটক করা হয়েছে।


তারা হলো- মো. আনোরুল আজিম(৩৮), মো. আল আমিন(৪০), আমির হোসেন(৫৭), মো. কাওছার উদ্দিন(৩৯), মো. রাশেদ খান(৩৯), মো. রায়হান খান(৩০), মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে আলম(৩৩), মো. জাহিদ হোসেন ওরফে মঈনুল(৩৪), এএসএম মাহমুদুল হাসান ওরফে সুজন(৩৮), মো. জসিম উদ্দিন(৩২), মো. রাসেল খান(৩২) ও মোছাম্মদ সাহিদা বেগম(৩২)।


র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন ওই অফিসার জানান, এ বাহিনী অবৈধভাবে কয়েকজনকে মালয়েশিয়ায় পাঠাচ্ছিল। খবর পেয়ে র‌্যাব ১৭ জানুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আরো ১০ ভিকটিমকে উদ্ধার করে।


উদ্ধারকৃতরা হলেন- মো. রাজি(১৮), মো. হামিদুল ইসলাম(৩২), মো. রানা মিয়া(২০), মো. সাইদুল ইসলাম(৩৫), মো. মাসুদ রানা(২০), মো. মনিরুজ্জামান(২২), মো. শরিফুল ইসলাম(২৫), মো. ইসলাম শেখ(২৫), দিপু মিয়া(২২) ও আব্দুল মান্নান(৪০)।


র‌্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার গোলাম সারোয়ার আরো জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের সাথে জড়িত। তাদের কাছ থেকে আলামত হিসেবে বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট, বিভিন্ন দেশের জাল ভিসা, অবৈধ ভিসা তৈরী সামগ্রী ও বিদেশী মুদ্রাসহ ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ৬১৩ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।


বিবার্তা/খলিল/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com