শিরোনাম
তৃণমূলের তালিকায় ছিলো না নাম; তবুও নৌকা পেলেন বহিষ্কৃত রাজাকার পুত্র
প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২১, ১১:১৪
তৃণমূলের তালিকায় ছিলো না নাম; তবুও নৌকা পেলেন বহিষ্কৃত রাজাকার পুত্র
সোহেল আহমদ
প্রিন্ট অ-অ+

তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে পাঠানো মনোনয়ন তালিকায় নাম ছিলো না এফএম অহিদুজ্জামানের। অভিযোগ আছে, উপজেলার সবচেয়ে বড় রাজাকার পরিবারের সন্তান তিনি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কারও হয়েছিলেন। তবে সবকিছুর পরে অদৃশ্য ক্ষমতাবলে তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে খুলনার তেরখাদা উপজেলার সদর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। ।


জানা যায়, এফ এম অহিদুজ্জামান তেরখাদা উপজেলার সবচেয়ে বড় রাজাকার পরিবারের সন্তান। তার পরিবারে তালিকাভূক্ত ১০ জন রাজাকার ছিলো। তার পিতা ভাষা ফকির ওরফে বাশার ফকির একজন রাজাকার। এছাড়াও তার দাদা, দুই চাচা মামাসহ ঘনিষ্ট আত্মীয়রা তৎকালীন থানা কমিটির সদস্য ও রাজাকার ছিলেন। দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকা অহিদুজ্জামান ২০১০ সালে দেশে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে কোনো ধরণের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই জেলা কৃষকলীগের সহ-সভাপতির শুন্যপদে নাম লেখান। ছাত্রলীগ, যুবলীগ না করলেও অভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দল আর আর্থিক ক্ষমতার জোরে ২০১৪ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে যান অহিদুজ্জামান।


২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো মাদক ব্যবসায়ী ও পৃষ্ঠপোষকদের তালিকায় খুলনা জেলা ও মহানগরীর চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী পৃষ্টপোষকদের তালিকায়ও নাম ছিলো এফএম অহিদুজ্জামানের। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেয়া এফএম অহিদুজ্জামানের নাম বর্তমানেও বহিষ্কারের খাতায় রয়েছে। জেলা থেকে কেন্দ্রে পাঠানো ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তালিকায় পাঁচজনের মধ্যেও নাম ছিলো না তার। তবে সবাইকে অবাক করে গত ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত কাগজে তাকে ইউপি চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেয়া হয়। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, রাজাকার সন্তান, বিতর্কিত ও দল থেকে বহিষ্কার হওয়াদের দলীয় মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারে আরো বেশি যাচাই-বাছাই করা দরকার।



জানা যায়, চলতি বছরের জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে তেরখাদা উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি এফএম অহিদুজ্জামানের মানহানিকর বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। গত ১৯ জুলাই তেরখিাদা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী শুধু রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া নয়, তিনি বাংলাদেশের সম্পদ। তিনি বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বর্হিবিশ্বে যান তখন কিন্তু সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী ডোনেশন করেন, টাকা দেন। খুলনা জেলায় অনেক সংসদ সদস্য আমাদের আব্দুস সালাম ‍মুর্শেদীর টাকায় হইছে।


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল হলে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ চলতি বছরের ২৬ জুলাই অনুষ্ঠিত এক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সাময়িক বরখাস্ত করে। দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি বরাবরে সুপারিশ করে জেলা কমিটি। অহিদুজ্জামানের দাবি এ ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তবে জেলা আওয়ামী লীগ বলছে, বহিষ্করাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি তাদের জানা নেই।


স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তেরখাদা সদর ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রে পাঠানো তালিকার ১ নম্বরে নাম ছিলো শিউলি সারোয়ার। তার আপন ভাই ও পরিবারের সদস্যরা বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের সাথে অতীতে কোনো সম্পর্ক না থাকলেও জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে থাকা সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে সরাসরি বাগিয়ে নিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ। সেই সূত্রে উপজেলা কমিটির মত অগ্রাহ্য করে জেলার নেতার আশীর্বাদে তালিকার এক নম্বরে জায়গা করে নেন তিনি।


জানা যায়, শিউলি সারোয়ারের আপন ভাই শেখ নাসির উদ্দিন তেরখাদা উপজেলা বিএনপির সম্মানিত সদস্য। তার চাচাতো ভাই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম লাকু, শেখ আজিবর রহমান ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক এবং আরেক চাচাতো ভাই শেখ ফারুক আহমেদ উপজেলা বিএনপির সম্মানিত সদস্য হিসেবে রয়েছেন। বিএনপি পরিবারের শিউলি সারোয়ারকে সেসময়ে ক্ষেভ জানান উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।


অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তেরখাদা সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এফএম অহিদুজ্জামান বিবার্তাকে বলেন, আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন, গত মাসের ৮ তারিখে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। রাজাকার পরিবারের সন্তান এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ অসত্য।




খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী বিবার্তাকে বলেন, মনোনয়ন কাকে দেয়া হবে এ ব্যাপারে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেয়। এক্ষেত্রে আমার কিছু বলার নেই। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় আমরা তাকে সাময়িক বহিষ্কার করেছিলাম। পরবর্তী পদক্ষেপ কেন্দ্র নেয়ার কথা। তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়েছে এ ধরণের কিছু আমার জানা নেই।


খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও তেরখাদা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ শহীদুল ইসলাম বিবার্তাকে বলেন, উনার বংশে ১০ জন তালিকাভূক্ত রাজাকার রয়েছে। দুই ভাই মাদকের ব্যবসা করে। আমি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। দলের নেতারা নানা সময়ে বলেন, কোনো বিতর্কিত বা যুদ্ধাপরাধী পরিবারের কাউকে মনোনয়ন দেয়া হবে না। এগুলো শুধু কথায় আছে। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেয়ায় উনি (অহিদুজ্জামান) জেলা কমিটির সর্বসম্মতিক্রমে বহিষ্কৃত। এখনো বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়নি এরপরও কিভাবে উনি মনোনয়ন পায়?


এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা যুবলীগের সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমাণ্ড তেরখাদা উপজেলার সাধারণ সম্পাদক শেখ শামীম হাসান বিবার্তাকে বলেন, ছাত্রলীগ, যুবলীগ না করেই অনেকে আজ দলের বড় পদে আছে। অনেক রাজাকার সন্তান দলের মনোনয়ন পেয়েছে। দলের মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে আরো বেশি যাচাই-বাছাই করা দরকার। যাদের পিতা দেশের জন্য রক্ত দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া দরকার।


বিবার্তা/সোহেল/গমেজ/এমবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com