শিরোনাম
ডেঙ্গু: সরকারি হাসপাতালে শয্যা শঙ্কট, ঝুঁকতে হচ্ছে বেসরকারিতে
প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২১, ০৮:৫৩
ডেঙ্গু: সরকারি হাসপাতালে শয্যা শঙ্কট, ঝুঁকতে হচ্ছে বেসরকারিতে
আদনান সৌখিন
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানীতে ডেঙ্গু এখন মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। সরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যা শঙ্কট থাকায় অনেক রোগীকেই বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালে। অনেক রোগীই বেশ কিছুদিন সরকারি হাসাপাতালে চিকিৎসা নিয়ে এসে ভর্তি হচ্ছেন বেসরকারি হাসপাতালে। এছাড়া ব্যাক্তিগত নানাবিধ কারনেও রোগীরা বদল করছেন হাসপাতাল।


সম্প্রতি রাজধানীর কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের ডেঙ্গু বিশেষায়িত ওয়ার্ড ঘুরে ও কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে এই চিত্র উঠে এসেছে।


ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, চলতি মাসের প্রথম দিকে রোগীর তেমন চাপ না থাকলেও সপ্তাহান্ত তা আবার বাড়তে শুরু করে। মাসের এই সময়টাতে প্রতিদিন গড়ে ২০-২৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালটিতে। ১০ থেকে ৪০ বছরের রোগীদের সংখ্যাই তাদের মধ্যে বেশি। রোগীর অবস্থাভেদে আবার কাউকে নিতে হচ্ছে আইসিইউতে। এদিকে রোগী সুস্থ হবার হার গড়ে প্রায় ১০ জন । ফলে শয্যা সঙ্কট দেখা দেয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।



খিলগাঁওয়ের ব্যাংক কর্মকর্তা আফজাল হোসেন। ১৭ বছরের ছেলে ফায়াজকে নিয়ে ৩দিন ধরে এসেছেন হাসপাতালটিতে। আফজাল বিবার্তাকে জানায়, আমাদের বাসায় কারো ডেঙ্গু ছিলো না। ও যে জায়গায় ক্লাস করতে যায় সেখান থেকে হয়ত মশায় কামড়েছে। আমার একমাত্র ছেলে। ভালো চিকিৎসার জন্য আমরা ওকে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। আর এখান থেকে আমার বাসা অফিস দুটিই কাছে। তাই আমি এখানেই ভালো মনে করেছি।


চানখাপুলের বাসিন্দা মিনহাজ উদ্দিন বিবার্তাকে বলেন, আমার বাসার ৫ জন আক্রান্ত। আমাদের পুরো বাড়ীর অন্য ফ্ল্যাটেরও অনেকেেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। মিটফোর্ড হাসপাতালে সারা রাত বসে থেকেও সিট জোগাড় করতে পারিনি। পরদিন সকালে এই হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে আলহামদুলিল্লাহ ভাল চিকিৎসা হচ্ছে।


ডেঙ্গু আক্রান্ত ১২ বছরের ছেলে আরমানকে নিয়ে ৫ দিন ধরে হাসপাতালে আছেন ব্যাংক কর্মকর্তা ফয়সাল হোসেন। ছেলের শারীরিক অবস্থা জানিয়ে তিনি বিবার্তাকে বলেন, শুরুর দিকে ওর অবস্থা বেশ নাজুক ছিলো। ৪ ব্যাগের উপরে রক্ত দিতে হয়েছে। প্লাটিলেটও সকাল বিকাল উঠানামা করছিলো। তবে এখন আলহামদুলিল্লাহ্‌ বেশ ভাল অবস্থায় আছে। তবে প্লাটিলেট নরমাল না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হবে।


সাভার থেকে নিলুফা পারভিন এসেছেন তার ডেঙ্গু আক্রান্ত স্বামীকে নিয়ে। তিনি জানান, আমার বাসার আরো ৩ জন আক্রান্ত হয়েছিলো। তারা বাসায় চিকিৎসা নিয়েই ভালো হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ২ দিন ধরে আমার স্বামীর প্রচণ্ড জ্বর মাথাব্যাথা, সাথে বমি। দেরি না করে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসি। সেখানে সিট না পেয়ে আমার এক পরিচিত জনের সহায়তা নিয়ে এখানে ভর্তি করেছি। ৩ ব্যাগ রক্ত দেয়ার পর এখন অবস্থা আগের চেয়ে ভালো।



ডেঙ্গু ওয়ার্ডে কর্তব্যরত মেডিক্যাল অফিসার জারিন তাসনিম বিবার্তাকে জানান, আমাদের এখন রোগীর বেশ চাপ যাচ্ছে। একটি সিটও খালি রাখা যাচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে যে এখন রোগী ছাড়পত্র পাবার আগেই নতুন রোগীর স্বজনরা গিয়ে সীট দখল করে রেখেছেন। আর এবারের ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে আমাদের প্রেডিকশন করার সুযোগ নেই। ফলে যেকোনো সময় রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আর যাদের প্লাটিলেট সমস্যা বা অন্য কোন শারীরিক জটিলতা আছে তাদের ক্ষেত্রে ঝুকি বেড়ে যাচ্ছে।


এদিকে ডেঙ্গু নিধন করতে জনগণকে উৎসাহিত করছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান। তিনি বলেন, হঠাৎ করে ডেঙ্গু বেড়ে যাবার কারন হচ্ছে বর্তমান আবহাওয়া। এই যে থেমে থেমে ৩ দিন রোদ হচ্ছে , আবার একদিন সারাদিন বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে আশে পাশের খোলা জায়গায় পানি জমছে যা ডেঙ্গুর লার্ভা জন্মানোর আদর্শ জায়গা। সুতরাং সিটি কর্পোরেশন তো বছরব্যাপী লার্ভা নিধন কার্যক্রম চালু রেখছেই । জনগণকেও সচেতন হতে হবে। তাদের নিজেদের আবাসস্থলের জায়গা পরিষ্কার রাখতে হবে। পানি জমে থাকে এমন যেকোনো কিছু নষ্ট করে ফেলতে হবে।


বিবার্তা/আদনান/গমেজ/শাহিন/এমবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com