দেশের জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল বিবার্তা২৪ডটনেটে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে থাকা অভিজাত সুপারশপের বিভিন্ন অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের পর অভিযানে নেমেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ অন্যান্য সংস্থার সংশ্লিষ্টরা কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, গুলশান, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট সুপারশপগুলোকে জরিমানা করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বিবার্তাকে জানায়, সম্প্রতি বিবার্তা২৪ডটনেটে ‘রাজধানীতে সুপারশপে অনিয়ম’ শিরোনামে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। দুই পর্ব প্রকাশের পর থেকে নড়েচড়ে বসে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ অন্যান্য সংস্থা। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন এলাকায় সুপারশপে অভিযানে নামে তারা। মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি করায় গত ৪ অক্টোবর গুলশানে একটি সুপারশপকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) ভ্রাম্যমাণ আদালত।
আরো পড়ৃন:রাজধানীতে সুপারশপে অনিয়ম (পর্ব-২)
বিএসটিআইয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাফিসা নাজ নীরার বিবার্তাকে বলেন, গুলশান এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘জহির অ্যান্ড ব্রাদার্স সুপারশপে’ ওজনযন্ত্রের ভেরিফিকেশন সনদ না পাওয়ার পাশাপাশি পেঁয়াজ বাটা, আদা বাটা, রসুন বাটা, আতপ চালের গুঁড়া মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় বিক্রির প্রমাণ পান ভ্রাম্যমাণ আদালত। পাশাপাশি দুটি বিদেশি ব্র্যান্ডের বেশকিছু পণ্যের মোড়কে প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা উল্লেখ না থাকায় প্রতিষ্ঠানটিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালত।
এছাড়া গত ৬ অক্টোবর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ‘জাকের ডেইরি’ ও ‘সাদিক এগ্রো’কে লাখ টাকা জরিমানা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যপণ্য তৈরির অপরাধে ‘সাদিক এগ্রো’কে ৫০ হাজার টাকা এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য পণ্য তৈরি ও পণ্যের মোড়কে এমআরপি (সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য) লেখা না থাকায় ‘জাকের ডেইরি ফার্ম’কে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাকের ডেইরি ফার্ম মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের লিমিটেড-৩ নম্বর সড়কের বিপরীতে অবস্থিত। দীর্ঘ সময় ধরে এখানেই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। যদিও যে জায়গায় প্রতিষ্ঠানটি তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে তা পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা। সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেই তারা ব্যবসা চালিয়ে আসছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির দক্ষিণ পাশে লাগোয়া অবস্থায় রয়েছে সিটি করপোরেশনের অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র (এসটিএস)। জাকের ডেইরি ফার্মের চারপাশে কোনো প্রাচীর নেই। ফলে এসটিএস এর দুর্গন্ধ সার্বোক্ষণিক থাকে ফার্মটিতে।
আরো পড়ুন:রাজধানীতে সুপারশপে অনিয়ম (পর্ব-১)
খাদ্য সামগ্রী উৎপাদন ও পরিবেশনের ক্ষেত্রেও মানা হয় না স্বাস্থ্যবিধি। করোনাকালে প্রতিষ্ঠানটির অধিকাংশ কর্মীদের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এদিকে বেড়িবাঁধ নবীনগর হাউজিংয়ের ৭ নম্বর সড়কের মুখে অবস্থিত জরিমানা গোনা আরেক এগ্রো প্রতিষ্ঠান ‘সাদিক এগ্রো’। স্থানীয়দের ভাষ্য, প্রতিষ্ঠানটি একদিকে খাদ্য পণ্য উৎপাদক ও বিক্রি করছে, একই জায়গায় পালন করা হচ্ছে গরু-ছাগল। কর্মীদের মধ্যেও নেই স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো প্রবণতা।
গত ঈদুল আযহায় আমদানি নিষিদ্ধ ব্রাহামা জাতের গরু আমদানি করে আলোচনায় আসে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া মোহাম্মদপুরে প্রতিষ্ঠানটির তিনটি খামার রয়েছে। যার প্রতিটিতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার জমি দখল করে আছে সাদেক এগ্রো। এ বিষয়ে এরইমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে।
এদিকে, রাজধানীর মিরপুরে ল্যাব ছাড়াই তৈরি হচ্ছিল দেশি-বিদেশি নামিদামি ব্র্যান্ডের নকল স্কিন কেয়ার (ত্বকের যত্নের প্রসাধনী) সামগ্রী। সেগুলো আবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রির জন্য বাজারজাত করা হচ্ছিল। গত ৫ অক্টোবর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব) সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় প্রায় চার ঘণ্টার অভিযানে জব্দ করা হয় বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের বিপুল পরিমাণ প্রসাধনী।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বিবার্তাকে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর মিরপুর-৬ নম্বরের ডি-ব্লকের একটি নকল ও ভেজাল প্রসাধনী তৈরির কারখানায় অভিযান চালানো হয়। সেখানে পাকিস্তানি নুর হোয়াইটিং ক্রিম, ইলোরা হোয়াইটিং ক্রিম, স্কিন গ্লো ক্রিম, ভারতের ফেস মি বিউটি ক্রিম, ফেয়ার লুক ক্রিম, লোটাস হোয়াইটিং ক্রিম এবং ফোর কে প্লাস হোয়াইটিং ক্রিম তৈরি হচ্ছিল। মানুষ এসব প্রসাধনী ত্বকের যত্নে ব্যবহার করলেও এগুলো তৈরিতে ওই কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে মোম, ভ্যাসলিন, সাবানের পাউডার, ইউরিয়া সার ও নকল সুগন্ধি ব্যবহার করছিল। পরে ব্লেন্ডার করে মোড়কজাত অবস্থায় বিদেশি পণ্য বলে রাজধানীর চকবাজারসহ দেশের বিভিন্ন মার্কেটে বাজারজাত করা হচ্ছিল।
আরো পড়ৃন:রাজধানীতে হকারদের দখলে ফুটপাত, ভোগন্তি চরমে
তিনি বলেন, এ ধরনের কারখানা পরিচালনার জন্য কেমিস্ট ও ল্যাবসহ অন্যান্য যা কিছু দরকার ওই কারখানায় সেসবের কোনোকিছুই ছিল না।
র্যাব-১ এর সিও আরো বলেন, কারখানাটির মালিক আনিছুর রহমান। তার বিরুদ্ধে আগেও রঙ ফর্সা হওয়ার ক্রিমসহ ভুয়া কোম্পানি খোলার অপরাধে কুষ্টিয়া আদালতে তিনটি মামলা রয়েছে। এছাড়া বিএসটিআই একটি মামলা করেছে।
বিবার্তা/খলিল/রাসেল/গমেজ/জহির
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]