শিরোনাম
ঘরবন্দি শিশুরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে বেশি
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২১, ০৮:২৩
ঘরবন্দি শিশুরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে বেশি
আদনান সৌখিন
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগীর চাপ কিছুটা কম থাকলেও কমছে না শিশু রোগীর সংখ্যা। রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই ১০ বছরের কম বয়সী শিশু ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, আবহাওয়া পরিস্থিতি, দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা ইত্যাদির কারণে শিশুরা ঘর-বন্ধী, ফলে তারা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।


সম্প্রতি রাজধানীর নিউ ইস্কাটন রোডের হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে সরেজমিনে ঘুরে ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়।


সরেজমিনে দেখা যায়, হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে পাশাপাশি ৩টি ডেঙ্গু ওয়ার্ডে যথাক্রমে পুরুষ, মহিলা ও শিশু ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা চলছে। প্রতিটি ওয়ার্ডই কম বেশি ডেঙ্গু রোগীতে পরিপূর্ণ। সবচেয়ে বেশি রোগী দেখা যায় শিশু ওয়ার্ডে। তবে মহিলা ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অনেকটাই কম। এ সংখ্যা গত ১ সপ্তাহে ১৫ জনের বেশি অতিক্রম করেনি বলে জানান কর্তব্যরত চিকিৎসক।



৬ বছরের শিশু সাবিহা। হাতে লাগানো ক্যানোলার ব্যাথায় অনবরত কাঁদছে। পাশে বসা তার মা খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা মালিহা পারভিন তাকে সান্ত্বনা দেয়ার যেন ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না।


মালিহা বিবার্তাকে জানান, ৬ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছি। অবস্থা আগের থেকে ভাল। তবে হাতের ক্যানোলার ব্যথায় বাবু খুব কষ্ট পাচ্ছে। বারবার শুধু বাসায় চলে যেতে চাচ্ছে। ওর প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে। ডাক্তার আমাদের ৪ জন ডোনার ঠিক করে রাখতে বলছেন। ডোনার পেতে আমাদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।


পাশের বেডেই ১৩ মাসের অবুঝ শিশু আইরিনের অবস্থা আরো বেশি খারাপ। ডেঙ্গু ও নিউমোনিয়া একসাথে দুটি রোগে আক্রান্ত শিশুটি। পায়ে লাগানো ক্যানোলার কষ্টের কথা সে মুখ ফুটে বলতেও পারছে না। সাব্বির ও আনিকা দম্পতির একমাত্র মেয়ের এই অবস্থায় তাদের চোখেও যেন ঘুম নেই।


মা আনিকা বিবার্তাকে বলেন, ওকে আমরা শুরুতে হাসপাতালে নিয়ে আসি নিউমোনিয়ার সমস্যার জন্য। গত ৭ দিন ধরে নিউমোনিয়ার চিকিৎসা করার পর কিছুটা উন্নতির দিকে ছিলো। তবে গত রাত থেকে আবার ১০২ জ্বর, কিছুতেই নামছে না। এরপর ডাক্তার দেখা মাত্র বললেন মনে হচ্ছে ডেঙ্গু পজেটিভ।


তালতলার বাসিন্দা আফরোজা আক্তার। তার ৯ মাস ও ৭ বছর বয়সি দুই সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন ৭ দিন আগে৷ তার দুই সন্তানই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত৷


আফরোজা বিবার্তাকে বলেন, আমার বড় ছেলে তো বাইরে যায়, বাসার নিচে খেলাধুলা করে। কখন ডেঙ্গু আক্রান্ত হলো আমরা জানি না। হঠাৎ করে জ্বর আসল; বমি, পাতলা পায়খানা শুরু হল। তারপর টেস্ট করে ডেঙ্গু পজেটিভ আসলো। এরপরে দেখলাম আমাদের এলাকার আরো একাধিক পরিবারে এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে একই পরিবারের একাধিক সদস্য ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন।



গত ৫ দিন ধরে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকা মধ্য বাড্ডার ৭ বছরের ছেলে আলিফের মা জান্নাতুল মাওয়া বিবার্তাকে বলেন, ছেলের প্রচণ্ড জ্বর ছিলো, কমছিলোই না। ১০৩ এর নিচে জ্বর নামছিলো না। সাপোজিটরি দিয়ে ১০/ ১৫ মিনিট ঠিক থাকার পর আবার জ্বর উঠত। পরে ডাক্তার পরীক্ষা করে জানালেন ডেঙ্গু হয়েছে। প্লাটিলেট কমতে শুরু করেছিলো, তখনই হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।


আলিফের বাবা লতিফুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের বাসার পাশেই একটি বিল্ডিং করার জন্য মাটি খুঁড়ে রাখছে, ওখানে পানি জমে আছে। আমার মনে হয় ওখান থেকেই ডেঙ্গু মশার উৎপত্তি। সিটি কর্পোরেশনে অভিযোগ জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। মশার ওষুধ নিয়মিত স্প্রে করলে আমাদের আজকের এই ভোগান্তি হত না।


তবে এখনো ডেঙ্গু নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করতে পারছেন না হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মো. আনিসুজ্জামান। তিনি বিবার্তাকে জানান, বৃষ্টি কিন্তু এখনো থেমে থেমে হচ্ছে, আবার মাঝে মাঝে প্রচণ্ড গরম পড়ছে। এধরনের মিশ্র আবহাওয়া ও আশে পাশে জমা থাকা বৃষ্টির পানিতে এডিস মশার বংশ বিস্তার হচ্ছে। ফলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীও কমছে না। প্রকোপটা আগের মতই থেকে যাচ্ছে।


শিশুদের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের বিষয়ে এই চিকিৎসক বলেন, করোনার কারণে বাচ্চাদের স্কুল দীর্ঘদিন বন্ধ ছিলো। ফলে তারা বাইরে যাবার তেমন সুযোগ পাচ্ছে না। বাবা মা হয়ত ব্যাস্ততার কারণে বাইরে নিয়েও যেতে পারছে না। ফলে শিশুরা ঘরবন্দি হয়ে ঘরোয়া খেলাধুলায় অভ্যস্ত হচ্ছে। দীর্ঘ সময় বাসার একই জায়গায় বসে থাকছে। এতে মশা নির্বিঘ্নে তাদের কামড়াচ্ছে। তাই বাবা মায়ের উচিত তাদের বাচ্চার দিকে নজর দেয়া। কী করছে সেটা পর্যবেক্ষণ করা। নিজেদের বাসার আশে পাশে পানি জমে থাকলে তার পরিস্কার করার উদ্যোগ নিতে হবে।


বিবার্তা/আদনান/আরকে/এমও

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com