শিরোনাম
স্কুল-কলেজ খুলছে, বিশ্ববিদ্যালয় কবে?
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২০:৪৪
স্কুল-কলেজ খুলছে, বিশ্ববিদ্যালয় কবে?
প্রতীকী ছবি
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর অবশেষে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ সিদ্ধান্তের আওতায় খোলা হবে। তবে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার ক্ষেত্রে এখনো পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের।


জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে ৫ সেপ্টেম্বর ( রবিবার) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আন্তমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তের কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।


এসময় তিনি জানান, আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সশরীর ক্লাস শুরু হবে। প্রথম দিকে শুধু চলতি বছরের এবং আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস হবে। বাকি শ্রেণিগুলোর ক্লাস সপ্তাহে এক দিন করে হবে।


তবে এক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর জানিয়েছে, প্রাক-প্রাথমিক স্তরের (শিশু শ্রেণি, নার্সারি, কেজি ইত্যাদি) শিক্ষার্থীদের সশরীর ক্লাস আপাতত বন্ধ থাকছে। করোনা পরিস্থিতি আরো স্বাভাবিক হলে এগুলো সশরীরে চালু করা হবে।


শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ ও ২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস হবে। এর বাইরে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে এক দিন করে ক্লাসে আসবে। একই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দুটি বা কোথাও প্রয়োজনে আরো বেশি শ্রেণিকক্ষে ভাগ করে বসানো হবে।


এদিকে অষ্টম শ্রেণির ক্লাস অন্যান্য শ্রেণির মতো সপ্তাহে একদিন রাখায় এ পরীক্ষা ঘিরে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে এবার জেএসসি ও জেডিসির বোর্ড পরীক্ষা হবে কিনা? নাকি এসব শিক্ষার্থীদের অটোপাস দিয়ে দেয়া হবে।


জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, তারা এই পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা পাননি। মন্ত্রণালয় থেকে সবুজ সংকেত পেলে প্রস্তুতি শুরু করবেন।


করোনা সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে টানা প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর অবশেষে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন স্কুল-কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। দীর্ঘদিন ঘরবন্দি হয়ে থাকা এসব শিক্ষার্থীরা এখন অপেক্ষার প্রহর গুণছেন কখন আসবে ১২ সেপ্টেম্বর।


এ উচ্ছ্বাসের উল্টো চিত্র দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে। এখনো পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসায় হতাশ তারা।


এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিলাদ হোসাইন বিবার্তাকে বলেন, বারবার আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে আশ্বাস দেয়া হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। আমাদের যে বছরের পর বছর চলে যাচ্ছে সেদিকে কারো খেয়াল নেই! কি একটা অবস্থা আমাদের, বলে বোঝাতে পারবো না।


আবদুর রহমান নামের আরেক শিক্ষার্থী বিবার্তাকে বলেন, টিকার ডোজ নেয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় খুলে আমাদের হলে তোলার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু কে রাখে কার কথা? আমরা টিকাও নিলাম। কিন্তু এখন স্কুল-কলেজ খুললেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো খবর নাই।


ক্ষোভ প্রকাশ করে আতাউর রহমান নামের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী মুঠোফোনে বিবার্তাকে বলেন, হল বন্ধ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেনসহ পরিবহনও বন্ধ অথচ আমাদের পরীক্ষার তারিখ দেয়া হলো। আমরা থাকবো কোথায়, আসবো কিভাবে সেসব নিয়ে প্রশাসনের কিছু যায় আসে না।


বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ৫ সেপ্টেম্বর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগকে টিকা দেয়া সম্ভব হয়েছে। অনাবাসিক শিক্ষার্থীদেরও টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই, তাদের টিকা দেয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। এই সপ্তাহে আবারো উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় অক্টোবরের আগেই প্রস্তুতি থাকলে তারা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খোলার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। পরিষ্কার -পরিচ্ছন্নতা অভিযান, ভবন রং করা, স্বাস্থ্য বিধির উপকরণ ঢেলে সাজানোসহ নানাবিধ কার্যক্রম করছে তারা।


সরেজমিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুম সঙ্কট দূরীকরণে স্যার এ এফ রহমান হলসহ কয়েকটি হলে সীট বসানোর কাজ চলছে। এদিকে বিভিন্ন হলগুলোতে চলছে রং করা, পরিচ্ছন্নতা অভিযান, স্বাস্থ্যবিধির জন্য দূরত্ব বজায় রেখে বেসিন বসানোসহ নানা কার্যক্রম।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, খুব শিগগিরিই হলসহ বিশ্ববিদ্যালয় খোলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। এবার হলে অছাত্র ও বহিরাগতদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলেও জানিয়েছে তারা।


বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বিবার্তাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির সভায় যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো, সে রোডম্যাপ অনুযায়ী খোলা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


এর আগে গত ২৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে রোডম্যাপ করে ২৫ আগস্ট ডিনস কমিটির সভায় তা চূড়ান্ত করা হয়। এই রোডম্যাপ অনুযায়ী অক্টোবরের শুরুতে পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্স পরীক্ষার্থীদের জন্য হল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। তাদের পরীক্ষা শেষে তারা চলে যাবে। এরপর নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে অন্যান্য বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য খোলা হবে বিশ্ববিদ্যালয়।


জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বিবার্তাকে বলেন, আমাদের সবকিছু চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। জবি অনাবাসিক হলেও আমরা শিক্ষার্থীদের টিকার বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছি। একইসঙ্গে আমরা পরিস্থিতিও পর্যবেক্ষণ করছি।


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার বলেন, আমরা চাচ্ছি বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে। কিন্তু স্কুল-কলেজের মতো হঠাৎ করেই তো খুলতে পারবো না। আমাদের হল খুলতে হবে, শিক্ষার্থীদের টিকাগুলো নিশ্চিত করতে হবে। এ পর্যায়গুলো আগে পেরিয়ে আসতে হবে।


বিবার্তা/রাসেল/গমেজ/শাহিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com