শিরোনাম
হানিফের সহযোগিতায় মানবসেবায় অনন্য কুষ্টিয়া ছাত্রলীগ
প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২১, ১৬:৩৪
হানিফের সহযোগিতায় মানবসেবায় অনন্য কুষ্টিয়া ছাত্রলীগ
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

চলমান বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নানামুখী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে মানবসেবায় অনন্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগ।ছাত্রলীগের এ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জের নেতৃত্বে গঠিত ৬৫ সদস্য বিশিষ্ট স্বেচ্ছাসেবক টিমের মাধ্যমে করোনায় মৃতদের লাশ দাফন, অসহায় কর্মহীনদের বাড়ি বাড়ি খাদ্য পৌঁছে দেয়া, হাসপাতালে ডাক্তার-নার্সদের সার্বিক সহায়তা, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, মাস্ক এবং হ্যাণ্ড স্যানিটাইজার বিতরণ, অক্সিজেন সার্ভিসসহ নানামুখী উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়েছে। যা এখনো চলমান রয়েছে।এসব উদ্যোগের সার্বিক সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনায় আছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর-৩ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি। করোনার এ সঙ্কটকালে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নানামুখী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করায় ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এ অঞ্চলের মানুষ।


জানা গেছে, বাংলাদেশে যখন প্রথম করোনা হানা দেয় তখন মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকারের মাধ্যমে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তার, নার্সসহ নানাবিধ সঙ্কটের কথা জানতে পারেন। এ হাসপাতালে করোনা ইউনিট পরিচালনার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার কাছ থেকে জনবলসহ সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। এরপর তিনি জেলা ছাত্রলীগের সাথে যোগাযোগ করে তাদের হাসপাতালে করোনা ইউনিট পরিচালনায় সার্বিকভাবে সহযোগিতা করার দায়িত্ব দেন। এরপরে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ৬৫ সদস্য বিশিষ্ট গঠিত স্বেচ্ছাসেবক টিম হানিফের সার্বিক সহযোগিতায় এ হাসপাতালসহ এলাকায় নানামুখী উদ্যোগ বাস্তবায়ন শুরু করে।



করোনার শুরুর দিকে মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা শুরু করে তারা। এরপর লিফলেট ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করে তারা। কর্মহীন, অসহায়, হতদরিদ্র পরিবারের সদস্যদেরকে হানিফের উপস্থিতিতে বেশ কয়েকবার খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়।


দেশে করোনা যখন মারাত্মক আকার ধারণ করে মানুষের মৃত্যু হতে শুরু করলো তখন প্রথমদিকে ভয়ে এলাকায় কেউ মৃতের কাছে না গেলেও মৃতদের লাশ দাফন করেছে ছাত্রলীগের এই টিম। ৬৫ সদস্যের এই টিম খবর আসার সাথে সাথে গিয়ে মৃতদের লাশ দাফন করেছে। এ পর্যন্ত ৩৬টি লাশ দাফন করেছে তারা। শুধু মুসলিম নয়, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অনুরোধে তাদের পুরোহিতের উপস্থিতিতে ধর্মীয় রীতি মেনে মৃতদের শেষ বিদায় জানিয়েছে তারা।



ছাত্রলীগের ৬৫ সদস্য বিশিষ্ট এই স্বেচ্ছাসেবক টিমের সদস্যরা নিরবিচ্ছিন্নভাবে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে, হোম আইসোলেসনে করোনা পজেটিভ রোগী নেয়া থেকে শুরু করে রোগীর অক্সিজেন, খাবার, ঔষধ সরবরাহ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহসহ নানাবিধ কাজ করে যাচ্ছেন।


এদিকে কুষ্টিয়া জেলায় প্রতিদিন করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ায় অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল।ক্রমবর্ধমান এই করোনা রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ করতে কুষ্টিয়ার স্বাস্থ্য অধিদফতরকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল।কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তিনটি ওয়ার্ড করোনা রোগীতে ঠাসা।কিন্তু রোগীদের চাপে হাসপাতালে থাকা সরকারি অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা যেন কোনোভাবেই চাহিদা মেটাতে পারছিল না।এমন খবর জানার পরপরই কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ এক ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে অক্সিজেনসহ ১০০ সিলিন্ডার সরবরাহের জন্য জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ অজয় সুরেকাকে নির্দেশ দেন।অজয় সুরেকা দ্রুত শহরের মনির অক্সিজেন ডিপোতে গিয়ে সিলিন্ডার নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে দেন।হানিফের একটি উদ্যোগই বদলে দিল করোনা ওয়ার্ডে অক্সিজেন সরবরাহ চিত্র।তার উদ্যোগে একদিনের মধ্যে সরকারি অক্সিজেন সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত হলো অক্সিজেনসহ ২০০টি সিলিন্ডার। সাংসদের এই মহতী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন চিকিৎসক, রোগী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।



সাংসদ হানিফের সার্বিক সহযোগিতায় জেলা ছাত্রলীগের মানবসেবার কার্যক্রম নিয়ে এলাকাবাসী বলেন, করোনা মহামারীর শুরু থেকে ৬৫ সদস্যের ছাত্রলীগ টিম কুষ্টিয়া জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগীদের পাশে থেকে সেবা দান করে আসছে। যখন করোনা রোগীকে ফেলে প্রিয়জনরা পালিয়ে যেত, পিতা তার সন্তানের লাশের পাশে যেতো না, সন্তান তার পিতার লাশের কফিন কাঁধে নিতে সাহস পেতো না, তখন এই ছাত্রলীগ টিম’ রাত-দিন যখন ডাক পড়েছে তখনই সে দায়িত্বটি পালন করেছে। করোনা রোগীর হাসপাতালে ভর্তি, সেবাদান, তাদের ঔষধ, খাদ্য সরবরাহ, সেনিটাইজার, মাস্ক, পিপিই বিতরণ, মৃত ব্যক্তিদের হাসপাতাল থেকে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া, গোসল করানো, লাশের কফিন বহন, কবর খোড়া, জানাযা পড়ানো, দাফন সম্পন্ন এমনকি করোনায় আক্রান্ত পরিবারের বাহিরেও অসহায়, দরিদ্র, কর্মহীন পরিবারকে ঔষধ-খাদ্য সহায়তা দান, হিন্দু সম্প্রদায়ের মৃত ব্যক্তিদের সৎকারে অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করে আসছে।


এলাকার বাসিন্দারা বলেন, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নীল গেঞ্জি পড়া ছাত্রলীগের এই কর্মীরা দিনরাত করোনা রোগীদের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এ হাসপাতালে গেলে মানুষ এখন বঙ্গবন্ধুর ছবিযুক্ত, ছাত্রলীগের লোগোযুক্ত, হানিফ ভাইয়ের ছবিযুক্ত গেঞ্জি পরিহিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের খোঁজে। এ এলাকায় মানুষের আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসা অর্জন করেছে ছাত্রলীগের নীল গেঞ্জি পড়া এই নেতাকর্মীরা।



কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার বলেন, করোনার এই মুহূর্তে সাংসদ হানিফের সার্বিক সহযোগিতায় জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যে মহতী কাজ করছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। এই দুর্যোগকালে জেলা ছাত্রলীগ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তারা কখনও খাদ্য নিয়ে ছুটে গেছেন করোনায় কর্মহারা মানুষের বাড়ি বাড়ি, কখনও লাশ দাফন করেছেন আবার কখনও অক্সিজেন সার্ভিস পৌঁছে দিয়েছেন। জীবনের সর্বাধিক ঝুঁকি নিয়ে তারা এ কাজগুলো করে যাচ্ছেন সফলভাবে।


এ বিষয়ে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, জেলার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ বার করে হলেও জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, চিকিৎসক সবার সঙ্গে কথা হয়। তাদের প্রয়োজনের কথা শোনা হয়। সেটা পূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। কুষ্টিয়াতে প্রতি মাসেই দুই থেকে তিনবার যাওয়া হয়। গেলেই হাসপাতালে যাই। নিজে হাসপাতালের চিত্র দেখে সবকিছু করে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে আরো করব।



মানবসেবা দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ বিবার্তাকে বলেন, কুষ্টিয়ার মাটি ও মানুষের নেতা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জননেতা মাহবুবউল আলম হানিফ ভাইয়ের সার্বিক সহযোগিতায় ও নির্দেশনায় আমরা এসব সেবা দিয়ে যাচ্ছি। যখনই তাকে ফোন করে যে সমস্যার কথা বলেছি সাথে সাথে সমাধান করে দিয়েছেন। ফোন করে বলেছি, নেতা অক্সিজেনের দরকার কিছু রোগীর অবস্থা খুব খারাপ, রোগীর কষ্ট দেখতে পারছি না। তখন নেতা বলেন, একজন রোগীও যেন অক্সিজেন অভাবের কারণে কষ্ট ভোগ না করে, আমি দেখছি।ঠিক তার ৩৫ মিনিটের মধ্যে চলে এসেছে অক্সিজেন ভর্তি সিলিন্ডারের গাড়ি।



তিনি বলেন, করোনার এ কঠিন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আমরা যেমন পেয়েছি মানুষের অসীম ভালোবাসা তেমনি কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। ৪০ বছর একসাথে সংসার করার পরও বউ কোভিডে মারা গেলে স্বামী তার স্ত্রীর পাশে গেল না! হাসপাতালে একব্যক্তি বাবাকে বাবা না বলে চাচার পরিচয় দিল! বাবা-ছেলে দুইজনে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরেও ছেলে বাবার সাথে পাশাপাশি থাকতে রাজি না! কারণ বাবার বয়স হয়েছে, তাই ঝুঁকি বেশি! শুধু মুসলমান নয়, অন্য ধর্মের লোকেরা তাদের মৃতদের শেষ বিদায় জানাতে আমাদের অনুরোধ করলো। কিন্তু আমরা তো তাদের ধর্মীয় রীতি জানি না। তাই তাদের পুরোহিত দূর থেকে নির্দেশনা দিলে সে অনুযায়ী আমরা কাজ করেছি। কয়েক জায়গায় লাশ নিয়ে গেলে এলাকাবাসী ঢুকতে দিচ্ছিল না, তখন হানিফ ভাইকে জানালে তিনি পুলিশ পাঠিয়ে যাবতীয় ব্যবস্থা করেছেন।



তিনি আরো বলেন, আমি নিজেসহ আমাদের টিমের ২৭ জন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছে। এরপরেও আমরা আমাদের সেবা চালিয়ে গেছি। আর এ সেবা অব্যাহত থাকবে। মানুষের দোয়া ও ভালোবাসা আমাদের এগিয়ে চলার শক্তি। হানিফ ভাইয়ের সার্বিক সহযোগিতা, দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণায় এমন মানবিক কাজে মুজিব আদর্শের সৈনিকদের নিয়ে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে মানুষের জন্য কাজ করবেন জানান তিনি।


বিবার্তা/রাসেল/গমেজ/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com