শিরোনাম
আশ্রয়ণ প্রকল্প: রৌমারীতে অল্প বৃষ্টিতেই ধসে পড়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর (পর্ব-১০)
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২১, ১৫:৪০
আশ্রয়ণ প্রকল্প: রৌমারীতে অল্প বৃষ্টিতেই ধসে পড়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর (পর্ব-১০)
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীনদের জন্য দেয়া প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর (আশ্রয়ণ প্রকল্প-২) নির্মাণাধীন অবস্থায় ধসে পড়েছে। তবে ঘরগুলো ধসে পড়ার ঘটনা স্বীকার করলেও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘর নির্মাণে ত্রুটির বিষয়টি মানতে নারাজ।


জানা গেছে, উপজেলার দাঁতভাঙা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের হরিণধরা (বগারচর) গ্রামে প্রথম পর্যায়ে ৯টি ঘর নির্মাণ করে হস্তান্তর করা হয়।দ্বিতীয় পর্যায়ে সেখানে আরো ২৬টি ঘর নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু গত ৩১ মে অল্প বৃষ্টিতে উপজেলার দাঁতভাঙা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডে নির্মাণাধীন ঘরের ভিত্তি ওয়ালের পাশের মাটি সরে গিয়ে চারটি ঘর ধসে পড়ে।


বিবার্তায় আরো পড়ুন>>>প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প: কলাপাড়ায় আড়াই কোটি টাকা লোপাট (পর্ব-১)
বিবার্তায় আরো পড়ুন>>>প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প: নির্মাণ শেষ হতে না হতেই ভেঙ্গে গেল ঘর (পর্ব- ২)



নির্মাণাধীন ২৬টি ঘরের মধ্যে চারটি ঘর ধসে পড়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন রৌমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. আজিজুর রহমান।


স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণ ত্রুটির কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই এসব ঘর ধসে পড়েছে। মাটি ভরাটের পর পর্যাপ্ত কম্পেকশন করার আগেই তাড়াহুড়ো করে ঘর নির্মাণ করায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মাটি ভরাটের পর, সময় নিয়ে এসব ঘর নির্মাণ করলে এমন সমস্যা হতো না।



উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ‘ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন প্রকল্প’ নামে মুজিব শতবর্ষে রৌমারীতে প্রথম পর্যায়ে ৫০টি ঘর নির্মাণ করে তা ভূমিহীন পরিবারগুলোকে হস্তান্তর করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে সেখানে ২০১টি ঘরের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৬১টি ঘর নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা।


গ্রামের বাসিন্দা মতিয়ার রহমান বলেন, নিচু জায়গা ও বালুমাটিতে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। ঘরের ফাউন্ডেশন না থাকায় নিচের মাটি ধসে ৪টি ঘর ভেঙে পড়েছে। নামমাত্র বালু ভরাট করে কাজ করায় এমনটি হয়েছে।


বিবার্তায় আরো পড়ুন>>>আশ্রয়ণ প্রকল্প: মেহেন্দিগঞ্জেও ভেঙে পড়ছে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের সেই ঘরগুলো (পর্ব-৩)
বিবার্তায় আরো পড়ুন>>>আশ্রয়ণ প্রকল্প: মির্জাপুরেও প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ভেঙে তছনছ! (পর্ব- ৪)


উপকারভোগী শাহাজামাল ও ফুলো রানি বলেন, জমি নিচু ও বালু হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই ঘরের নিচের মাটি ধসে ৪টি ঘর ভেঙে গেছে। এভাবে ঘর ভেঙে পড়লে আমরা যাব কই?


তবে নির্মাণ ত্রুটি কিংবা নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পিআইও আজিজুর রহমান। তিনি জানান, মূলত বৃষ্টির পানির প্রবাহে ঘরের পাশের মাটি সরে গিয়ে ঘরগুলোর ওয়াল ধসে গেছে।


বিবার্তায় আরো পড়ুন>>>প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প: লক্ষ্মীপুরেও ভেঙে পড়ছে ঘর, কয়েকটিতে ফাটল (পর্ব-৫)
বিবার্তায় আরো পড়ুন>>>আশ্রয়ণ প্রকল্প : ৬ মাস না যেতেই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে ফাটল (পর্ব-৬)


পিআইও বলেন, আমরা খবর পাওয়ার পরই ইউএনও স্যারসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দ্রুততার সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো মেরামতের ব্যবস্থা নিয়েছি। পাশাপাশি মাটি সরে গিয়ে সৃষ্টি হওয়া গর্তগুলো ভরাটের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আশা করছি পরবর্তীতে ভারি বর্ষণ হলেও আর এমন সমস্যা হবে না।


রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল ইমরান বিবার্তাকে বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মাণাধীন ওই ঘরগুলোতে সারারাত বৃষ্টিপাত হওয়ায় ঘরের ভেতরে ও বাইরে বৃষ্টির পানির প্রবাহে পাশের মাটি সরে গিয়ে দুইটা ঘরের ওয়াল ধসে পড়েছিলো, রান্নাঘরের পেছনে ক্র্যাক হয়েছিলো। আমরা তিনদিনের মধ্যে সেগুলো মেরামত করেছি।



ইউএনও আরো বলেন, ঘর নির্মাণে ইট, সিমেন্ট বা বালুর কোনো কমতি করা হয়নি। ওই এলাকার মাটি বালুময় হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে সেগুলো ধুয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো ঠিক করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক আছে। প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পের ঘরগুলোর উদ্বোধনের পর গৃহগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে। ওখানে মোট ৩৫টা ঘর আছে। প্রতিটি ঘরেই এখন প্রকল্পের বাসিন্দারা আছেন।


বালু মাটিতে প্রকল্পের ঘর তৈরি করা হয়েছে। তাই ভবিষ্যতে বৃষ্টির ফলে প্রকল্পের বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিবার্তাকে বলেন, ওখানে বালু মাটি থাকায় বৃষ্টিতে মাটি সরে গিয়েছিলো। প্রকল্পের আশপাশেই গ্রামের লোকজনের বাড়িঘর আছে। আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের চারপাশে গাইড ওয়াল করে দিয়েছি। আশা করছি ভবিষ্যতে প্রকল্পের বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।



আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন বিবার্তাকে বলেন, যে মানুষটি ঘর পাবে তার জন্য এটি নতুন একটি স্বপ্নের শুরু হবে। প্রকল্প অফিসের নির্দেশনা ছিল উপযুক্ত খাস জমি পেলে সেখানে ঘর নির্মাণ করার। কাউকে নদীর পাড়ে, খালের পাড়ে মাটি ভরাট করতে বলা হয়নি। সরকারি টাকা অপচয় হোক, পানিতে যাক এটি আমরা চাইনি। সুতরাং এটি নিয়ে অবহেলা করবো না, আর কেউ অবহেলা করলে তাও সহ্য করবো না। ইতিমধ্যে পাঁচটি টিম গঠন করা হয়েছে। যারা পর্যায়ক্রমে সব জেলায় যাচ্ছেন।


বিবার্তা/সোহেল/গমেজ/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com