শিরোনাম
নির্দিষ্ট দিনের আগেই বসছে হাট, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২১, ০৮:১৪
নির্দিষ্ট দিনের আগেই বসছে হাট, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত
আদনান সৌখিন
প্রিন্ট অ-অ+

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজধানীর উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত কয়েকটি স্থানে বসছে কোরবানির পশুর হাট। ১৭ থেকে ২১ জুলাই কোরবানির হাট বসার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের আগেই বসছে এসব হাট। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যাপারিরা কোরবানির পশু নিয়ে আসছেন। এসব পশু কিনতে ও দেখতে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে মানুষ আসছে। ফলে ভিড় জমছে হাটে। যেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই।


মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) রাজধানীর মিরপুর ১২ সেকশনের ইস্টার্ন হাউজিং গরুর হাটে গিয়ে এই চিত্র দেখা গেছে।



ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্দেশনা মতে আগামী ১৭ থেকে ২১ জুলাই পাঁচ দিনব্যাপী উত্তর সিটিতে নয়টি অস্থায়ী ও ১টি স্থায়ী কোরবানির হাট বসার কথা রয়েছে।


সরেজমিনে হাট ঘুরে দেখা গেছে, এই হাটে সকাল থেকে ট্রাক বোঝাই গরু প্রবেশ করছে। ইতিমধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে প্রায় ২০০ গরু আনা হয়েছে। ২/১ দিনের মধ্যে আরো গরু আসার কথা রয়েছে। যদিও সমস্ত হাটের প্রস্তুতি পর্ব এখনো চলমান। তবে হাটের পশ্চিম প্রান্ত প্রায় ভরে গেছে কোরবানির পশুতে। পূর্ব দিকের অংশেও জোর কদমে প্রস্তুতি চলছে। ২/১ দিনের মধ্যে সেখানেও পশু বিক্রির জন্য তৈরি হয়ে যাবে।



এছাড়া হাটে আসা ক্রেতা বিক্রেতার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ছোট-বড় বেশ কিছু খাবার হোটেল, চায়ের ছোট ছোট টং দোকানসহ অস্থায়ী কিছু খাবার দোকান। এসব দোকানে ইতিমধ্যেই মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করেই হোটেলের ভেতরে বসে খাচ্ছে মানুষ। হাট কমিটির উদ্যোগে মাইকিং করে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। কিন্তু সে যেন কেবলই বলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এমনকি মাইকিং কাজে নিয়োজিতদের মাঝেও কোনোরকম স্বাস্থ্যবিধি চোখে পড়েনি। মাইকিং বুথের সামনে ও কিছু দূরেই ৮/১০ জনের মুখে মাস্ক ছিল না।


চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছয়টি গরু নিয়ে এসেছেন নুরু শেখ। বসে ছিলেন গরুর পাশেই। আগ্রহী ক্রেতারা দরদাম করছিলেন তার সাথে। এক ফাঁকে তিনি বিবার্তাকে বলেন, এ বছর কোরবানিতে বিক্রির উদ্দেশে আমি ১০টা গরু তৈরি করছি। কিন্তু সবগুলো এই হাটে আনিনি। আমার বড় ভাই চারটা গরু নিয়ে গাবতলি গেছেন। আর আমি ছয়টা নিয়ে আজকে ভোরেই আসছি এই হাটে। আমার সব গরু ১ লাখের উপরে দাম চাচ্ছি। দেখা যাক কি হয়।



এসময় মুখে মাস্ক না থাকায় করোনা স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে নুরু বলেন, আমরা থাকি গরুর সাথে। আমাদের করোনা হবে না। আর হাটে কি এসব মেনে চলা যায় নাকি? সকাল থেকে কত শত মানুষের সাথে কথা বললাম। কারো মুখেই তো মাস্ক দেখিনি।


বিকেলে হাটে গরু দেখতে আসেন সেনাবাহিনী সাবেক কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী। ঘুরে ঘুরে গরু দেখছেন। আর বাদাম খাচ্ছেন। তিনি বিবার্তাকে বলেন, আমার বাসা পাশেই ডিওএইচএস। প্রতিদিনই আমরা এখানে হাঁটতে আসি। আজকেও এসে দেখলাম হাট বসে গেছে। তাই স্ত্রীকে নিয়ে একটু ঘুরে ফিরে দেখছি। দরদাম যাচাই করছি। আমার ইচ্ছা আছে ঈদের ২ দিন আগে গরু কেনার।



পাশের মাইকিং বুথ থেকে কাউকে হাটে অযথা ঘোরাফেরা না করে সবাইকে ঠিকমত মাস্ক পরে চলাচল করার কথা বার বার করে বলা হচ্ছিল। কিন্তু হাটে আসা মানুষেরা বিষয়টা যেনো তেমন গুরুত্বই দিচ্ছেন না।


দিনাজপুরে থেকে ১০টি গরু নিয়ে এসেছেন বাতেন সরকার। তার সাথে গরুর দরদাম করছিলেন মজুরুল তালুকদার। কারো মুখেই ছিল না কোনো মাস্ক। কেন মাস্ক পরেনি জানতে চাইলে মঞ্জুর তালুকদার খানিকটা হেসেই বিবার্তাকে জানান, আমার এর মধ্যেই একবার করোনা হয়ে আবার ভাল হয়ে গেছে। আমার মনে হয় না আর করোনা হবে। তাই মাস্ক তেমন একটা পরি না।



পাশে থেকে গরুর ব্যাপারি বাতেন সরকার এই প্রতিবেদককে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি সারাদিন একটু মাস্ক পরে এই কড়া রোদে বসে থাইকেন, বুঝবেন কেমন লাগে। আজকে সকাল থেকে আমার গরু দেখতেই প্রায় ৫০০ মানুষ আসছে। মাস্ক পরে কথা বলা যায় নাকি? আর এই গরমে সারাদিন মাস্ক পরে থাকা অসম্ভব কাজ।


হাট উপলক্ষে অস্থায়ী চা সিগারেটের দোকান দিয়েছেন এলাকার বাসিন্দা আফজাল, আলামিন ও রাসেল মিয়ার মত আরো বেশ কয়েকজন। তাদের প্রায় সবার দোকানেই জটলা করে বসে চা সিগারেট খাচ্ছিলেন হাটে আসা ক্রেতা বিক্রেতারা। স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না এখানেও।



জানতে চাইলে আফজাল হোসেন বিবার্তাকে বলেন, আমি চার বছর ধরে এই হাটে দোকানদারি করি। এই সিজনেই আমার কিছুটা বেচাকেনা ভাল হয়। এখন চা সিগারেট তো মানুষ বাইরে বসে খায় না। তাই দোকানেই চেয়ার বেঞ্চের ব্যবস্থা করেছি। আর উনারা বসে খেতে পারলে আমার কি দোষ?


মিরপুর ১২ সেকশনের ইস্টার্ন হাউজিং গরুর হাটের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাট আয়োজক কমিটির একজন কর্মকর্তা বিবার্তাকে জানান, আমাদের এমপি সাহেবের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে এই হাট হচ্ছে। উনি এসে হাটের কাজকর্ম দেখে গেছেন। আমাদের তরফ থেকে সচেতনতার কোনো কমতি নেই। আমরা সারাদিনই কিছু সময় পর পর হাটে মাইকিং করে সবাইকে সচেতন করছি। ২/১ দিন পর থেকে সচেতনতামূলক লিফলেটও বিতরণ করা হবে।



হাটে মানুষের উপস্থিতি ও স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে তিনি বলেন, সরকার ও সিটি কর্পোরেশন থেকে অনুমতি নিয়েই হাট চালু হয়েছে। এখন আমরা তো সবাইকে ধরে ধরে মাস্ক পরিয়ে দিতে পারব না। আর সেটা সম্ভবও না। তবে আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টার কোনো কমতি নেই। মানুষ নিজেরা সচেতন না হলে আমাদের কি করার আছে।



কিছু দূরে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে তিনি বলেন, দেখেন, ওই খানে কিন্তু এখনো গরুও আসেনি, কিন্তু দেখেন মানুষ জটলা করে দাঁড়িয়ে আছে। সেলফি তুলছে। তাদের কিছু বললেই বলে আমরা স্থানীয়।


বিবার্তা/আদনান/গমেজ/জাই/এনকে

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com