শিরোনাম
নওগাঁয় এক পরিবারের ঢেঁকিই শুধু সম্বল
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০১৭, ১৪:৫৮
নওগাঁয় এক পরিবারের ঢেঁকিই শুধু সম্বল
আশরাফুল নয়ন
প্রিন্ট অ-অ+

বয়সের ভারে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন অনেক আগেই। দৃষ্টিশক্তি নেই, কানেও ঠিকমতো শুনতে পান না। সারা জীবন অন্যের বাড়িতে কামলা দিয়ে আসা প্রায় শত বছর বয়সী জহির উদ্দিন এখন খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন। 

 

জহির উদ্দিনের বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলার নবগ্রাম গ্রামে। মেয়ে আবিয়া বেওয়া (৬৫) ও প্রতিবন্ধী জুলেখা খাতুনকে (৬০) নিয়ে একটি কুঁড়েঘরে বাস করেন। থাকার ঘর বলতে শুধু ওটিই। ঘরটির বাঁশের বেড়ায় কাদামাটির প্রলেপ, টিনের ছাউনি। ঘরে ভাঙ্গা একটা চৌকি ছাড়া আর কিছুই নেই।

 

১১ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর বড় মেয়ে আবিয়া বেওয়া বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তার এক মেয়ে। বিয়ে দিয়েছেন পাশের গ্রামে। জামাইয়েরও নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা। ফলে তারাও কোনো খোঁজখবর রাখে না।

 

ছোট মেয়ে জুলেখা খাতুন জন্মের পর থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার দৃষ্টিশক্তি কম, কথাও অস্পষ্ট। চলাফেরা করেন লাঠি ধরে। এখনও তার কোনো প্রতিবন্ধী কার্ড হয়নি।

 

এক সময় মানুষের বাড়িতে বছরওয়ারি চুক্তিভিত্তিক কাজ করেছেন জহির উদ্দিন। বয়সের ভারে আজ তিনি অক্ষম। অন্যের সহযোগিতায় চলাচল করেন। প্রায় ২৫ বছর থেকে কোনো কাজ করতে পারেন না। গত ১০ বছর থেকে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন। তবে তা দিয়ে তিন সদস্যের ভরণ-পোষণ কষ্টকর। ফলে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে তাদের।

 

 

ঘরের পাশেই তাল পাতার ভাঙ্গাচোরা ছাউনির নিচে একটি ‘ঢেঁকি’। এই ‘ঢেঁকি’ই তাদের একমাত্র সম্বল। গত ১০-১১ বছর ঢেঁকি দিয়ে প্রতিবেশীদের চাল ভেঙ্গে যা পান, তা দিয়ে দিন পার করেন। এ কাজে সহযোগিতা করেন বড় মেয়ে আবিয়া বেওয়া। তবে বয়স হওয়ায় তিনিও এখন আর তেমন কাজ করতে পারেন না। তবে বর্ষা মৌসুমে ঝড়বৃষ্টিতে তাল পাতার ভাঙ্গাচোরা ছাউনি দিয়ে পানি পড়লে ঢেঁকির কাজ বন্ধ রাখতে হয়।  

 

ঢেঁকিতে ধান-চাল ভানা ছাড়া আয়ের অন্য কোনো উৎস না থাকায় এই পরিবারের তিন প্রবীণ সদস্য মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জীবনের অন্তিম মুহূর্তে এসে তারা যেন খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারেন, সেজন্য সরকার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা কামনা করেন এলাকাবাসী।

 

স্থানীয় শিক্ষক বেলাল হোসেন বলেন, পরিবারটা খুবই অসহায়। এক বেলা খেয়ে দু’বেলা না খেয়ে দিন পার করতে হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তাদের প্রতি কোনো গুরুত্ব দেন না। তারা যেন দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারেন এজন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।   

 

মান্দা সদর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ বলেন, এমন অসহায় পরিবারের কথা জানা নেই। তবে জরুরি ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওই পরিবারকে সাধ্যমতো সাহায্য করার চেষ্টা করা হবে।

 

বিবার্তা/আশরাফুল /নিশি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com