শিরোনাম
হঠাৎ রাজধানীবাসীর দুর্ভোগ চরমে
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২১, ১৯:০৩
হঠাৎ রাজধানীবাসীর দুর্ভোগ চরমে
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পুনরায় বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গণপরিবহনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এই নির্দেশনার পর থেকে ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীর বাসিন্দারা। শুধু তাই নয়, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় রাইডশেয়ারিং সার্ভিসের মাধ্যমে মোটরসাইকেলে যাত্রী তোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তাই বিক্ষোভ করেছেন মোটরসাইকেল চালকরা। এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভোগান্তির শিকার বাসিন্দারাও বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে।


বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।


জানা গেছে, গতকাল বুধবার সকাল থেকে সারাদেশে ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়ায় অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী পরিবহন শুরু করেন পরিবহন মালিকরা। সরকারি নির্দেশনায় আগামী দুই সপ্তাহ এ ব্যবস্থাপনায় যানবাহন চলবে। এ দুই দিন সকাল থেকে কোনো পরিবহনে অর্ধেক যাত্রীর বেশি পরিবহন করতে তেমন একটা দেখা যায়নি। ফলে হঠাৎ করে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন শুরু হওয়ায় অফিসগামী মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। এ সুযোগেই রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকসহ অন্যান্য পরিবহনগুলো অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছে।



পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে একটি ৫৩ আসনের পরিবহনে তারা কমপক্ষে ৭০ জন করে যাত্রী পরিবহন করতেন। প্রতিটি আসনে বসিয়ে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি দাঁড়িয়েও যাত্রী পরিবহন করা হতো। কিন্তু বুধবার থেকে সেই ৫৩ আসনের পরিবহনে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে ২৬ জন করে। পরিবহন সেবা অর্ধেকে নেমে আসলেও যাত্রী কমেনি।


রাজধানীর ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, মতিঝিল, বাংলামোটর, খিলগাঁও, বাসাবো, রাজারবাগ, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা, পল্টন, গুলিস্তান, কাকরাইল, শান্তিনগর, মৎস্যভবন, শাহবাগ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাসের জন্য রাস্তায় মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। বাসের থেকে যাত্রী বেশি। এ জন্য ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে অনেকেই। বিশেষ করে অফিসগামী যাত্রীরা বেশি ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। বাসে অর্ধেক যাত্রী নেয়ার কারণে ভোগান্তিতে পড়েন তারা।


বিমাননবন্দর এলাকার বাসিন্দা পলাশ মিয়া বিবার্তাকে বলেন, তিনি বাংলামোটর এলাকায় একটি অফিসে চাকরি করেন। তাই প্রতিদিন বাসে করে অফিসে আসতে হয় তাকে। তিনি গতকালের অভিজ্ঞতায় সকাল সাতটায় বাস স্টপেজে এসে দাঁড়ান। কিন্তু প্রতিটি বাসই স্টপেজে আসার আগেই যাত্রীতে ভরপুর। দীর্ঘ চার ঘণ্টা অপেক্ষার পর তিনি একটি বাসে উঠতে পেরেছেন।


তিনি আরো বলেন, অতীতে কখনও এমন দুর্ভোগে পড়িনি। সরকার সাধারণ মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে এভাবে গণপরিবহন পরিচালনা করার যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তা অযৌক্তিক। সরকারের উচিত ছিল আগে প্রতিটি অফিস-আদালত এবং কর্মস্থলে অর্ধেক জনবল দিয়ে অফিস পরিচালনা নিশ্চিত করা।


তিনি বলেন, এখন একটি বাসের নির্ধারিত যাত্রীর দুই জন বেশি নিলে মামলা করে দেয়া হয়। কিন্তু সরকারেরতো নির্দেশনা রয়েছে অর্ধেক জনবল দিয়ে অফিস পরিচালনা করার। যারা তা করছে না তাদের বিরুদ্ধেতো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।


একই অভিজ্ঞতার কথা জানান, মিরপুরের বাসিন্দা বিল্লাল মিয়া। তিনি বিবার্তাকে বলেন, তার অফিস মতিঝিল এলাকায়। প্রতিদেনের মতো বাসা বের হলেও দুপুর ১২টায় অফিসে পৌঁছাতে হয়েছে। আগে সরকারের উচিত কর্মক্ষেত্রে অর্ধেক জনবল নিশ্চিত করা। তারপর বাকি মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা সুরক্ষিত করা। আমার মনে হচ্ছে করোনাই গণপরিবহন নিয়ে সরকারের কোনও সঠিক কর্ম পরিকল্পনা ছিল না। যদি থাকতো এভাবে যাত্রীদেরকে দুর্ভোগে পড়তে হতো না।


অপরদিকে, রাইডশেয়ারিং সার্ভিসের মাধ্যমে মোটরসাইকেলে যাত্রী তোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন চালক ও যাত্রীরা। এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কয়েশ’ মোটরসাইকেল চালক তাদের যান রাস্তায় রেখে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান। পরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। শাহবাগ এলাকা অবরোধ করেন রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেল চালকরা।


আব্দুর রহিম নামের এক চালক বিবার্তাকে বলেন, আমি রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে পরিবারের খরচ বহন করি। কিন্তু হঠাৎ করে রাইড শেয়ারিং বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে আমি বিপদে পড়ে গেছি। এখন কিভাবে বাসা ভাড়া ও পরিবারের খরচ বহন করব। এজন্য রাস্তায় আন্দোলনে নামছি।


বাসে উঠতে না পেরে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ


সময়মতো অফিস পৌঁছাতে বাসস্ট্যান্ডে এসেও বাসে উঠতে না পেরে রাজধানীর খিলক্ষেতে বিক্ষোভ করেছেন যাত্রীরা। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে খিলক্ষেত বাসস্ট্যান্ডে রাস্তা আটকে তারা বিক্ষোভ করেন।


যাত্রীরা বলেন, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বিআরটিএর পক্ষ থেকে জানানো হয় বাসে অর্ধেক সিট খালি রেখে বাস চলাচল করতে হবে। সেকারণে পরিবহনগুলো উত্তরা কিংবা গাজীপুর বাস স্টপেজ থেকে যাত্রী উঠিয়ে বাসের গেট বন্ধ করে অন্য গন্তব্যের দিকে রওনা হয়। এতে করে রাস্তায় থাকা যাত্রীরা, আমরা পরিবহন সংকটে রয়েছি। সব বাস গেট বন্ধ করে চলাচল করছে। যে কারণে আমরা সকাল থেকে অপেক্ষা করেও কোনও বাসেই উঠতে পারছি না। এই কারণেই আমরা রাস্তায় অবরোধে বাধ্য হয়েছি।


খিলক্ষেত বাসস্ট্যান্ডের দুই পাশের রাস্তা বন্ধ থাকায় সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। রাস্তার দুই পাশে যাত্রীরা গরমে আরো নাকাল হয়ে পড়েন।


খিলক্ষেত থানার ওসি মুন্সী সাব্বির আহমেদ বলেন, বাস সংকটের কারণে অফিসগামী যাত্রীদের বিক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তা অবরোধ করে। প্রায় ঘণ্টা খানেক রাস্তা বন্ধ ছিল। সকাল ১০টার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। বর্তমানে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।


এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, সবেমাত্র একটা সরকারি নির্দেশনা জারি হয়েছে। কিন্তু এটা কার্যকর করতে হলে তো একটা প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। এরমধ্যে একদিন ছিল সরকারি বন্ধ। আমি নিজেও অর্ধেক জনবল দিয়ে অফিস পরিচালনার জন্য আজ অর্ডার জারি করতে নির্দেশ দিতে পেরেছি।


বিবার্তা/খলিল/গমেজ/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com