শিরোনাম
হারিয়ে যাওয়া মানুষের সন্ধানে...
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০১৭, ১৭:২৬
হারিয়ে যাওয়া মানুষের সন্ধানে...
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগ, ফরেনসিক বিভাগ, বিভিন্ন ওয়ার্ড এবং হাসপাতালের আশপাশের দেয়ালে সাঁটানো রয়েছে অনেকগুলো হারানো বিজ্ঞপ্তি। হারিয়ে যাওয়া মানুষের স্বজনরা এসব বিজ্ঞপ্তি লাগিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে সম্প্রতি বিবার্তা২৪ডটনেটের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর সর্বশেষ অবস্থা।


ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, জরুরী বিভাগের দেওয়ান আব্দুল মালেক, মো. সামছুল হক, মুক্তা, মাসুদসহ আরো অনেকের ছবি দিয়ে হারানো বিজ্ঞপ্তি সাঁটানো রয়েছে। এছাড়া ফরেনসিক বিভাগ, বার্ন ইউনিট এবং আশপাশের এলাকায়ও বিভিন্ন দেয়ালে ছবি দিয়ে হারানো বিজ্ঞপ্তি লাগানো রয়েছে। জানা গেছে, ইতোমধ্যে তাদের অনেকের সন্ধান পাওয়া গেছে, আবার অনেকের পাওয়া যায়নি।


মোক্তার হোসেন বাবুল নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার একরামপুর এলাকার বাসিন্দা। তার বয়স ৬০ বছর। ২০১৬ সালের ১৫ অক্টোবর বাড়ি থেকে হাটতে বের হয়ে আর ফেরেননি। তার পরণে ছিল বাদামী রংয়ের শার্ট ও লুঙ্গি। তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। তাই সঠিকভাবে তার ঠিকানা বলতে পারেন না। হারিয়ে যাওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। হারানো বিজ্ঞপ্তিতে তিনটি মোবাইল টেলিফোন নাম্বারও (০১৭১৩-৪৮৮৩৬৯, ০১৯৮০-৫০০২৯৫ ও ০১৮২৭-৮৬৮৮৯৮) দেয়া আছে।


এর মধ্যে একটি নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে সোহেল মাহমুদ নামের এক ব্যক্তি ফোন রিসিভ করেন। তিনি মোক্তার হোসেন বাবুলের ছেলে পরিচয় দিয়ে বিবার্তাকে বলেন, তার বাবাকে এখনো পাওয়া যায়নি।



শুধু মোক্তার হোসেন বাবুল নন, সামছুল হক নামের আরেক ব্যক্তির ছবি দিয়ে হারানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ৪ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজের নতুন ভবনের নিচ তলার মসজিদ থেকে তিনি হারিয়ে গেছেন। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার রুদ্ররামপুর গ্রামে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে মো. কবির হোসেন ও মো. এমরান হোসেন নামের দুই ব্যক্তির মোবাইল টেলিফোন নাম্বার দেয়া রয়েছে।


বিবার্তার পক্ষ থেকে এমরানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সামছুল হককে পাওয়া গেছে। হারিয়ে যাওয়ার কয়েক দিন পর তিনি কুমিল্লা থেকে নোয়াখালী যান। সেখান থেকে তিনি নিজ বাড়িতে ফিরে যান।


সিতারা বেগম নামের এক মুমূর্ষু রোগীও ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে হারিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর হাসপাতালের দেয়ালে হারানো বিজ্ঞপ্তি লাগানো হয়। এর দুই দিন পর সিতারা বেগমকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে পাওয়া যায়। এ তথ্য জানিয়েছেন সিতারা বেগমের নাতি মফুর আলী।


সিতারা বেগমের মতো রোমান নামের এক প্রতিবন্দ্বী শিশুকেও ফিরে পেয়েছেন তারা বাবা তোফাজ্জাল হোসেন। তিনি জানান, ২০১৫ সালের ২ আগষ্ট সকালে রোমান হারিয়ে যায়। সাত বছরের রোমান বাক প্রতিবন্ধী ছিল। পরে ভাটারা থানায় জিডি করা হয়।


তোফাজ্জাল জানান, অনেক খোঁজাখুজির পর টঙ্গিতে চেরাগ আলী নামের একটি শিশু আশ্রয় কেন্দ্রে রোমানকে পাওয়া যায়।


এদিকে, বাবুল, সিতারা ও রোমানের মতো আবুল বাশার, মাসুদ ও দেওয়ান আব্দুল মালেক নামের আরো তিন ব্যক্তির ছবি দিয়ে হারানো বিজ্ঞপ্তি ঢামেকে সাঁটানো রয়েছে। তাদের মধ্যে মালেককে এখনো পাওয়া যায়নি।



দেওয়ান আব্দুল মালেকের জামাতা পলাশ জানান, গত বছর ১৩ আগষ্ট ঢাকার খিলগাঁও থেকে হারিয়ে যান মালেক। তার বসয় আনুমানিক ৬৫ বছর। উনি শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারেন না। হারানোর সময় তার পরনে ছিল সাদা রংয়ের ফতুয়া এবং কালো রংয়ের চেক লুঙ্গি। কেউ তার সন্ধান পেলে ০১৭৪৯৯০৫০৬৬ বা ০১৭৯৯ ৩২৪০৯০ মোবাইল টেলিফোন নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছেন পলাশ।


মালেকের স্বজনের সাথে যোগাযোগ করা গেলেও বাশার ও মাসুদ নামের ওই ব্যক্তির কোনো স্বজনের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাদের মধ্যে আবুল বাশার (৬৫) গত ৯ সেপ্টেম্বর সকালে ঢাকার টিটি পাড়ার ড্রিমলাইন পরিবহনের কাউন্টার থেকে হারিয়ে গেছেন। তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাটে। তার সন্ধান পেলে ড্রিমলাইন কাউন্টার ০১৮৫২৫৩৮৩৭৪ ও রাজন ০১৮২৯৯৪৩২২১ মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার জন্য বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।


এছাড়া গত ২৪ অক্টোবর ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানার মানিকদী থেকে মাসুদ নামের এক ব্যক্তি নিখোঁজ হন। তিনি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, শারীরিকভাবেও অসুস্থ। তার সন্ধান পাওয়া গেলে তিনটি মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার কথা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। তবে ০১৭১৭৩৮৭১৩৬ ওই নাম্বারটি ছাড়া বাকি নাম্বারগুলো অস্পষ্ট।


এদিকে জানা গেছে, কোনো মানুষ হারিয়ে যাওয়ার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছবি দিয়ে হারানো বিজ্ঞপ্তি সাঁটানো হয়। এতে অনেকের সন্ধান পাওয়া যায়, আবার অনেকের সন্ধান পাওয়া যায় না।


এছাড়া হাসপাতালের মর্গে অজ্ঞাতপরিচয় অনেক লাশ আসে। তাদের মধ্যেও হারিয়ে যাওয়া অনেকের সন্ধান পাওয়া যায়।


বাংলাদেশ মেডিকেল রিপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও ঢামেকের প্রবীন সাংবাদিক আজিম উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল জানান, লোকজন হারিয়ে যাওয়ার পরে তাদের স্বজনরা হাসপাতালে বিজ্ঞপ্তি লাগিয়ে থাকে। এতে অনেকের সন্ধান পাওয়া যায়।


ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, ঢামেকের মর্গে অনেক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির লাশ আসে। ফরেনসিক বিভাগের আশপাশের দেয়ালে লাগানো হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের ছবির সাথে মিল পাওয়া গেলে তাদের স্বজনদের বিষয়টি জানানো হয়।


বিবার্তা/খলিল/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com