শিরোনাম
ডিএসসিসির পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মোটা অংকের টাকায় মিলে ফ্ল্যাট
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২০, ১৭:৩৯
ডিএসসিসির পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মোটা অংকের টাকায় মিলে ফ্ল্যাট
মইউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

ব্যস্ততম নগরী ঢাকাকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখা যাদের কাজ, তারাই নিজেরা নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়ে গেছেন। শুধু তাই নয়, রাস্তা পরিস্কারের কাজে যোগদান করলেও তারা ডিএসসিসির ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের পরিচালনা করার অভিযোগ রয়েছে। আর তাদের কথামত ডিএসসিসির কর্মকর্তারাও নানা অপকর্ম করে যাচ্ছেন। এতে উভয়পক্ষই অবৈধভাবে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।


ডিএসসিসি সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পুনর্বাসনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণের নির্দেশ দেন। এর পর পূর্বের ঝুঁকিপূর্ণ ১২টি ৪ তলা ভবন ভেঙে ১৩টি ১০ তলা ভবনে মোট এক হাজার ১৪৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য ডিপিটি প্রণয়ন করা হয়। পরে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। পুরো প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ১৯০ কোটি টাকা।


মোট ১৩টি ভবনের মধ্যে দয়াগঞ্জে ৫টি ভবনে ৪৪৩টি ফ্ল্যাট, ধলপুরে ৫টি ভবনের ৪৮০টি ফ্ল্যাট এবং সূত্রাপুরে ৩টি ভবনে ২২৮টি ফ্ল্যাট থাকছে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আকার ৪৭২ বর্গফুট। প্রতিটি ফ্ল্যাটে দুটি শয়ন কক্ষ, একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট ও দুটি বারান্দা রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি ভবনে লিফট ও সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের জন্য জেনারেটর রয়েছে। ভবনগুলোতে আলাদা বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন ও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাও আছে।


এ ছাড়া পর্যাপ্ত আলো-বাতাস, কমিউনিটি সেন্টার, খেলাধুলার স্থান রাখা হয়েছে। দলিত সম্প্রদায় পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষে উন্নত পরিবেশে নিজের পরিবার-পরিজন নিয়ে যাতে ভালো থাকে এটা বিবেচনা করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এমন উদ্যোগ বাস্তবায়নের পর একটি চক্র এটাকে পূঁজি করে চালিয়ে যাচ্ছে নানা অপর্কম। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ফ্ল্যাট বিক্রি করা হচ্ছে। এতে ফ্ল্যাটের আসল দাবিদাররা বঞ্চিত হচ্ছেন।


অসুনন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর ধলপুরে দুইটি দশতলা ভবন রয়েছে। এর প্রতিটিতে ৪৭২ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট রয়েছে। এতে ১৯০টি পরিবার বাস করতে পারবেন। কিন্তু সেখানে পরিচ্ছনতাকর্মীদের নেতা হান্দু মিয়াও তার সহযোগিতায় গড়ে তুলেছেন একটি সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ফ্ল্যাট নিতে হচ্ছে।


অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, মোটা অংকের টাকার মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতাকর্মী ডিএসসিসিতে অস্থায়ী নিয়োগ পান। নিয়োগ পাওয়ার কয়েক দিন তারা নিয়মিত কাজ করেন। পরবর্তীতে তাদের কাজ অন্যকে দিয়ে ডিএসসিসির কর্মকর্তাদের সাথে অবৈধকাজে লিপ্ত হন তারা।


অভিযোগ রয়েছে, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা অষ্টম শ্রেণি পাসের সার্টিফিকে দিয়ে নিয়োগ পাওয়ার কথা। কিন্তু অনেকেরই কোনো অষ্টম শ্রেণি পাসের সার্টিফিকেট নেই। তার পরও তদবির করে তারা ডিএসসিসির ফাইলে ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে চাকরি পেয়ে যান। এছাড়াও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তাদের দায়িত্ব পালন না করলে কেউ কেউ ব্যবসা বা অন্য কাজে ব্যস্ত দিন অতিবাহিত করছেন। তাই তারা তাদের কাজ অন্য একজনের মাধ্যমে করালেও মাস শেষে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন তরা।


শুধু তাই নয়, নিয়মিত বেতনও তোলেন তারা। আর ওই বেতনের একটা অংশ তাদের নেতা হান্দু মিয়ার পকেটেও যায়।


এমনটি হান্দু মিয়াকে মোটা অংকের টাকা দিলে ধলপুরে আবাসিক ভবনে ফ্ল্যাটের মালিকও হওয়া যায়। পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ না করেই অনেকেই এখন ফ্লাটের মালিক হয়ে গেছে।


এছাড়াও ডিএসসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গোপন ফাইল বহনের কারণে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা পেয়ে থাকেন। প্রতি ফাইলে ৬০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা পেয়ে থাকেন বলে জানা গেছে।


ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি)বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তওহীদ সিরাজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিবার্তাকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আপনে প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করুন।


পরে ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. বদরুল আমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিবার্তাকে বলেন, আপনে পাবলিক রিলেশন অফিসার (পিআরও) এর মাধ্যমে আমার সাথে যোগাযোগ করুন। এই বলেই ফোন কেটে দেন তিনি।


বিবার্তা/কে আর/রাসেল/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com