শিরোনাম
করোনায় বদলে দিলো পেশা, তবুও...
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২০, ১৭:২৩
করোনায় বদলে দিলো পেশা, তবুও...
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত করোনাভাইরাসের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। এই প্রভাবে ইতোমধ্যে অনেক মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। অনেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই রাজধানী ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। আবার অনেকেই পেশা বদলে অন্য পেশায় যোগ দিয়েছেন। তবুও তারা দু’বেলা ভাত সঠিকভাবে খেতে পাচ্ছেন না।


সম্প্রতি পেশা বদল করা কয়েকজনের সাথে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।


মো. বিল্লাল হোসেন। তিনি পেশায় একজন গাড়ি চালক ছিলেন। রাজধানীর লালমাটিয়া এলাকায় এক ব্যক্তির প্রাইভেট কার চালাতেন তিনি। কিন্তু করোনাভাইরাস আসার পর গাড়ি চালানো বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে ওই প্রাইভেট কারের মালিকও তাকে বেতন দেয়া বন্ধ করে দেন। অনেক অনুরোধ করে তিনি গত মার্চ মাসের বেতন উদ্ধার করলেও আর কোনো বেতন পাননি। নিরুপায় হয়ে তিনি চলে যান গ্রামের বাড়ি।


ঈদের আগে ঈদ বোনাসের জন্য মালিকের কাছে ফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি কোনো সাড়া পাননি। ঈদের পর তিনি গ্রাম থেকে এসে ফের কর্মস্থলে ফিরেন। কিন্তু এখন কাজ করতে হবে না বলে জানিয়ে দেন মালিক। স্কুলে পাঠদান শুরু হলে আবার চাকরি দেয়া হবে বলে গাড়ির মালিক আশ্বাস দেন। এ সময় আকাশ ভেঙে মাথায় পড়ে তার! পরে কয়েকজন বন্ধুর পরামর্শে তিনি রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় লেবু বিক্রি শুরু করেন।


মো. বিল্লাল হোসেনের গ্রামের বাড়ি বরিশালের ভোলা জেলায়। চাকরির সুবাধে তিনি রাজধানীর কারওয়ান বাজার রেলগেট এলাকায় একটি মেসে বসবাস করেন। তিনি দৈনিক বিবার্তাকে জানান, গত দুই বছর থেকে রাজধানীর লালমাটিয়া এলাকায় এক বিমানবালার প্রাইভেট কার চালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ওই বিমানবালার সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যেতেন তিনি। কিন্তু করোনার জন্য গত মার্চ মাসে স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে তার বেতন বন্ধ করে দেয়া হয়। করোনা শেষ হলে কাজে যোগদানের কথা বলা হয় তাকে। অনেক অনুরোধের পর তিনি মার্চ মাসের বেতন পেলেও এপ্রিল, মে মাসের বেতন পাননি। এমনটি ঈদেও ঈদ বোনাস তাকে দেয়া হয়নি।


তিনি জানান, সারা রোজা মাস অনেক কষ্ট করে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে অতিবাহিত করেছেন। অনাহারে অর্ধাহারে ঈদ পালন করেন তিনি। পরবর্তীতে ঋণ করে কিছু টাকা নিয়ে ফের ঢাকায় আসেন তিনি। ঢাকায় এসে লেবু বিক্রি শুরু করেন। প্রতিদিন কাওরান বাজার থেকে লেবু ক্রয় করে ফার্মগেট এলাকায় ফুটপাতে তা বিক্রি করেন। লেবু বিক্রি করে স্ত্রী-সন্তানের জন্য কিছু টাকা গ্রামে পাঠিয়েছেন।


কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমি ওই বিমানবালার কাছে মোট ৫০ হাজার টাকা পাই। সেগুলো দিলে আমি আমার ঋণ মুক্ত হব। না হয় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকা অনেক কঠিন হবে।


কুমিল্লার বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন। তিনি রাজধানীর পশ্চিম তেজতুরী বাজার এলাকায় স্ত্রী-দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করেন এবং সেই এলাকায় পিঠা বিক্রি করতেন। কিন্তু করোনাভাইরাস আসার পর থেকে তার পিঠা বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। কয়েকদিন বেকার থেকে তিনি সবজি বিক্রি শুরু করেন। বর্তমানে তিনি পশ্চিম তেজতুরী বাজার হালিম কমিউনিটি সেন্টারের পাশে ভ্যানগাড়িতে সবজি বিক্রি করেন।


তিনি বিবার্তাকে বলেন, গত মার্চ মাসে করোনাভাইরাসের জন্য সব বন্ধ হয়ে যাওয়াতে আমার পিঠা বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ১ মাস বেকার ছিলাম। তখন বাসা ভাড়া দিতে পারিনি। এমনকি ঠিকমত তিনবেলা খাবারও জুটেনি আমাদের। পরে মহল্লায় সবজি বিক্রি করা শুরু করি। বর্তমানে সবজি বিক্রি করে সংসার চলছে।



শুধু বিল্লাল হোসেন ও হেলাল মিয়া নয়, তাদের মত অনেকেই করোনায় চাকরি হারিয়ে পেশা পরিবর্তন করেছেন।


ফার্মগেট এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সামস বিবার্তাকে জানান, তিনি ওই এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে আবাসিক ছাত্র হোস্টেলের ব্যবসা করতেন। কিন্তু করোনা আসার পর সব ছাত্র গ্রামে চলে গেছে। তাই গত দুই মাস হোস্টেলের ভাড়া দিতে পারেনি। এক পর্যায়ে হোস্টেল ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। হোস্টেল ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে যান তিনি। কিন্তু গ্রামে গিয়ে তিনি কোনো কাজ না পেয়ে ফের ঢাকায় এসেছেন। বর্তমানে বেকার রয়েছেন। তবে আগামী মাস থেকে একটি গাড়ির মেরামতের দোকানে কাজ করবেন বলেও জানান তিনি।


উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়। পরে পুরো বিশ্বে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এ ধারাবাহিকতায় গত ৮ মার্চ বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। এরপর সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।


বিবার্তা/খলিল/গমেজ/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com