করোনাভাইরাস প্রতিরোধে রাজধানীসহ সারা দেশে তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে সেনাবাহিনী। হোম কোয়ারেন্টিন ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণার পর আজ সকাল থেকেই সেনাবাহিনী সদস্যদের এমন তৎপরতা দেখা গেছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার প্রধান প্রধান সড়কসহ অলি-গলিতে টহল ও সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে তারা।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ভাষানটেক, লালবাগ, বাড্ডা, ভাটারা ও সবুজবাগ এলাকা থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যদের পৃথক টিম তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এ সময় তারা রাস্তায় চলাচলকারী মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জরুরি কাজে না বের হলে তাদের বাসায় ফিরে দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ রেজা উল-করিম শাম্মী স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
রাজধানী ঘুরে দেখা যায়, সেনাবাহিনীর কঠোর অবস্থানের ঘোষণাতেই সড়কে জনসাধারণের চলাচল অনেকটা সীমিত হয়ে পড়ে। এর মধ্যেও জরুরি প্রয়োজনে যারাই বাইরে বের হচ্ছেন তাদের প্রায় সবাইকে সেনাবাহিনীসহ অন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছেন।
শুধু তাই নয়, পাড়া-মহল্লায় প্রয়োজনীয় দোকানের বাইরে যেসব দোকান-পাট খোলা ছিল; সেগুলো বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও সেনাবাহিনীকে কঠোর হতে হয়, এমন কোনো কর্মকাণ্ড না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড ও আশেপাশের এলাকায় দায়িত্বপালনকালে মেজর বেলাল জানান, সেনাবাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে গত ২ দিনের তুলনায় সড়কে মানুষের উপস্থিতি কমেছে। সাধারণত কারণ ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না।
এদিকে, সেনাবাহনীর পাশাপাশি র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা তাদের কার্যক্রম চালিয়েছেন। এছাড়া নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে রাজধানীর খিলক্ষেত, কুড়িল বিশ্বরোড, গুলশান এবং আমেরিকান দূতাবাস সংলগ্ন কূটনৈতিক এলাকার প্রধান প্রধান সড়ক, ফুটপাত ও আশপাশের পরিবেশ জীবাণুমুক্ত রাখতে জীবাণুনাশক স্প্রে করেছে নৌবাহিনী।
বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী এ কার্যক্রম পরিচালনা করেন নৌবাহিনীর সদস্যরা। পরে খিলক্ষেত এলাকার স্থানীয় গরীব, দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের মধ্যে জীবাণুনাশক সাবান ও মাস্ক, চাল, ডাল, আলুসহ বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন তারা। একইসাথে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
এছাড়াও বগুড়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রামণ রোধে বগুড়া-ঢাকা ও বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে সেনাবাহিনী। শহরের প্রবেশ মুখ ও সাতমাথা এলাকায় অবস্থান নিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করছে সেনা সদস্যরা। এর আগে বুধবার (১ এপ্রিল) মাইকিং করে সাধারণ জনগণকে অপ্রয়োজনে বাহিরে ঘোরা ফেরা না করে ঘরে থাকার আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি সরকারি নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ারও ঘোষণা দেয় তারা।
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে করোনাভাইরাস রোধে সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী সব ধরনের জনসমাগম এড়ানো এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সকাল থেকেই টহল শুরু করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বালিয়াকান্দি উপজেলা প্রশাসন। এসময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার জন্য হ্যান্ড মাইকে সবাইকে অনুরোধ করেন যৌথভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার একেএম হেদায়েতুল ইসলাম ও সেনাবাহিনীর পক্ষে ক্যাপ্টেন রিদওয়ান।
মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের ব্যাপক তৎপরতা শুরু হয়েছে। এতে ফাঁকা হতে শুরু করেছে মেহেরপুর জেলাশহরসহ জেলার সড়ক ও বাজারগুলো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জেরা থেকে রক্ষা পেতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন ঘর থেকে বের হওয়া মানুষেরা।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই নাটোরে সাধারণ মানুষদের ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা শহরের বিভিন্ন সড়কে টহল দিচ্ছেন। এসময় মাইকিং করে রাস্তায় বিনা কারণে ঘোরাঘুরি না করার এবং সর্বদা মাস্ক পরিধান করারও পরামর্শ দেন সেনাসদস্যরা।
গাইবান্ধার বিভিন্ন স্থানে গণজমায়েত ঠেকাতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন সেনাবাহিনী। পৃথকভাবে পুলিশ সদস্যরাও মাঠে রয়েছেন। এসময় বাহিরে থাকা মানুষদের করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ ঘরে ফিরে যেতে ও ঘরে থাকতে অনুরোধ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া সড়ক ও মহাসড়কে অপ্রয়োজনীয় যানবাহনগুলোর গতিরোধ করে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
বিবার্তা/আদনান/খলিল/জাহিদ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]