শিরোনাম
করোনা আতঙ্ক: তবুও বাড়ি ফিরছেন তারা
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২০, ২৩:৩০
করোনা আতঙ্ক: তবুও বাড়ি ফিরছেন তারা
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত সারা বিশ্ব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মতে আপাতত জনসমাগম এড়িয়ে চলাই এ রোগ প্রতিরোধের উপায়। তাতে করে এতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। এছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকেও এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।


কিন্তু রাজধানী ঢাকায় এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। বাস, ট্রেন, লঞ্চ সহ ফেরীঘাটে হাজার হাজার মানুষের ভীড়। গাদাগাদি করে ছুটে চলার দৃষ্য অনেককে অবাক করেছে। তবুও ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন নিরুপায় মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বাড়ি ফেরার ছবিগুলো ভাইরাল হচ্ছে। ছবিগুলো দেখে অনেকে মন্তব্য করে বলেছেন, ‘মহা সর্বনাশের দৃশ্য’। রাজধানীর বাসস্ট্যান্ড ও রেল স্টেশনগুলো ঘুরেও এমন দৃশ্য দেখা গেছে।



সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আতঙ্কে ঢাকা ছাড়ছেন নগরীর মানুষ। গত কয়েকদিন কিছুটা ভীড় কম থাকলেও সোমবার রাত থেকে যেন ঈদের চাপ। বাসে টিকেট নেই। ট্রেনে টিকেটের জন্য হাহাকার। লঞ্চে ঠাঁসা মানুষ। গাদাগাদি করে ছুটে চলা। সবদিনের চাপে রাজধানী একেবারেই ফাঁকা। গত দুই মাসের বেশি সময় রাজধানী ঢাকা দূষণের নগরীর তালিকায় বেশিরভাগ দিন প্রথম থাকলেও এখন ১০এর বেশি স্থানে রয়েছে। অর্থাৎ মানুষ কমার সঙ্গে কমেছে দূষণের মাত্রা। কমেছে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণও।



মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যার পর সেলিম আহমেদ নামের এক সাংবাদিক রাজধানীর বিমানবন্দর রেল স্টেশন ঘুরে বিবার্তাকে বলেন, সেখানে প্রচণ্ড ভিড়। ঢাকা ত্যাগের জন্য সবাই রেল স্টেশনে অবস্থান করেছেন। গন্তব্যে পৌঁছার জন্য যাত্রীরা অপেক্ষা করছেন। ট্রেন আসার সাথে সাথে তাড়াহুড়ু করে ট্রেনে উঠার চেষ্টা করছেন। এছাড়া কেউ কেউ জীবনের ঝুকি নিয়ে ট্রেনের ছাদেও উঠছেন বলে জানান তিনি।


তিনি আরো জানান, ঈদের সময়ের মতো রেল স্টেশনে মানুষ ভিড় করছেন। মানুষের ভিড় দেখে মনে হচ্ছে ঈদ করতে বাড়ি ফিরছেন।


কয়েকজন যাত্রীর বরাদ দিয়ে তিনি বলেন, গতকাল সকাল ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। তাই মানুষ গ্রামে যাচ্ছেন। ঢাকা থাকলে সমস্যা হতে পারে এমন আতঙ্কে বেশিরভাগ মানুষ বাড়ি ফিরছেন।



শুধু বিমানবন্দর রেল স্টেশনই নয়, একই অবস্থা রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী, সায়দাবাদ বাস স্ট্যান্ড ও লঞ্চ টার্মিনালেও। এছাড়াও অনেকেই রিজাভ গাড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে।


রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বাস রিজাভ করে গ্রামের উদ্যোগে যাত্রা করছেন অনেকেই। এ সময় আবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি বিবার্তাকে বলেন, তারা রাজধানীর ধলপুর এলাকায় থাকেন। সেখানে থেকে ঢাকা শহরে রিকাশা চালান। করোনা আতঙ্কে এবং ঢাকা ফাঁকা হয়ে যাওয়াতে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা গ্রামের যাচ্ছেন। তবে বাস স্ট্যান্ডে বাস পাবেন ভেবে তারা কয়েকজন একটি বাস রিজাভ করেছেন। পরে তাদের এলাকার লোকজনকে একত্রিত করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।



এদিকে, মহাখালি আন্তজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম সাংবাদিকদের বলেন, গতকাল সেমাবার সকাল থেকেই ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে টার্মিনালে। বিকাল থেকে ট্রেন ও লঞ্চ বন্ধের খবরে চাপ আরো বাড়ে। আমরা সাধ্যমত যাত্রীদের সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। তবে জনবল না থাকার কারণে করোনাভাইরাস রোধে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি। যাত্রীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরাই অনেকটা নিশ্চিত করে বাড়ির দিকে গেছেন। সায়েদাবাদ, গাবতলি, গুলিস্তান বাস টার্মিনালে একই ধরণের চিত্র লক্ষ করা গেছে।


এদিকে, দেশের সব রুটে আজ মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।


বিআইডব্লিউটিএ জানায়, করোনার বিস্তার রোধে সারাদেশে আজ থেকে যাত্রীবাহী নৌ চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে পণ্যবাহী নৌ চলাচল করবে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিকাল থেকে দেশের নদীবন্দরে চলাচলকারী সব যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত অব্যাহত থাকবে।


বিআইডব্লিউটিএ'র যুগ্ম পরিচালক (ঢাকা নদী বন্দর) এ কে এম আরিফ উদ্দিন বলেন, ‘নৌ মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত আসার পর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আজ থেকে যাত্রাবাহী লঞ্চ আর চলবে না।’


বিআইডব্লিউটিএ ঢাকা নদী বন্দরের (ট্রাফিক) যুগ্ম পরিচালক আলমগীর কবির সাংবাদিকদের বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ি যাত্রীবাহি লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে হটাত করে বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়ায় টার্মিনালে হাজার হাজার যাত্রী আটকা পড়েন। তারা ক্ষোভ জানান। কিন্তু আমাদের তো কিছু করার নেই। তাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছি। সন্ধ্যার পর ঢাকা নদী বন্দর অনেকটাই জনশূণ্য হয়।



এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) আজ ১৯৫টি দেশে আত্মপ্রকাশ করেছে। এটি ভয়ানক সংক্রামক ব্যাধি। এই ভাইরাসটি এত দ্রুত ছড়িয়েছে যেটা আমাদের সবার চিন্তার বাইরে ছিল। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা যদি সব ধরনের নিয়মকানুন, বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন সেগুলো মেনে চলি তাহলে এই ভাইরাস থেকে পরিত্রাণ পাব।’


তিনি বলেন, আমি সবাইকে বলবো- আপনারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করুন। সরকারিভাবে ৪ তারিখ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আপনারা সেই নিষেধাজ্ঞাটি অক্ষরে অক্ষরে পালন করুন। আমরা মনে করি আপনাদের সাময়িক কষ্ট হবে। কষ্ট হলেও এই জায়গা থেকে উত্তরণের জন্য আর কোনো উপায় নেই। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে প্রশাসনকে সহযোগিতা করবো।


বিবার্তা/খলিল/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com