শিরোনাম
করোনাভাইরাস: হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করলো ঢাবি
প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২০, ১১:০৪
করোনাভাইরাস: হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করলো ঢাবি
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

বিশ্বজুড়ে এক মহা আতঙ্কের নাম প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। বাংলাদেশেও তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় মানুষের মাঝে বাড়তি আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস থেকে বাঁচতে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।


এখনকার আলোচিত বিষয় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সবাই যেখানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার কেনায় ব্যস্ত, ঠিক ওই সময়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টার ও ফার্মেসি অনুষদ। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিনামূল্যে দেয়া হবে এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার।


প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজারটি তৈরি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মুহিতের নেতৃত্বে বিভাগের একদল স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী।



হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মুহিত বিবার্তাকে বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চিকিৎসকদের পরামর্শে হ্যান্ড স্যানিটাইজার কেনার হিড়িক পড়ে যায়। এ ফাঁকে এর দাম মাত্রাতিরিক্তি হারে বাড়িয়ে নেয় অসাধু ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয়, আরো অধিক মুনাফার আশায় এ জিনিস মজুদ করে রাখে তারা। এসব বিষয় মাথায় রেখে আমাদের দায়বদ্ধতা থেকে নিজেদের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বিতরণের জন্য এটা তৈরি করা হয়েছে।


তিনি বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। এ হ্যান্ড স্যানিটাইজার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।


ঢাবির এ অধ্যাপক বলেন, আমরা দেখতে পাই, বিশেষ বিশেষ সময়ে সাবান ও পানি আশেপাশে না থাকলে যেমন বিভিন্ন গণপরিবহণে যাতায়াতের পরে, অনেকের সাথে হ্যান্ডশেক করলে, অফিস বা স্কুল,কলেজে থাকাকালীন কিংবা হাট বাজার করার সময় অবচেতন মনেই অপরিষ্কার হাত আমাদের দেহের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে মুখে, চোখে, নাকে লেগে যেতে পারে। তাই সেই সময়ের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার খুব কাজে লাগতে পারে।



হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির বিষয়ে তিনি বলেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি কোনো আশ্চর্য কিছু নয়। সাধারণ ইথানল কিংবা আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল দিয়ে তৈরি। ৭০ শতাংশ ইথানল কিংবা আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল এবং অন্যান্য উপাদান যোগ করেই এটি বাসাতে তৈরি করা যায়। ৭০ শতাংশ ইথানল কিংবা আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহলে ভাইরাসের প্রোটিন অংশ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। যেহেতু অ্যালকোহল হাত শুষ্ক করে, তাই কিছুটা ময়েশ্চারাইজার যেমন গ্লিসারিন এবং অ্যালোভেরা জেল যোগ করা যায়। ইথানল কিংবা আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহলের কিছু তীব্র গন্ধ আছে। গন্ধ দূর করার জন্য লেমন অয়েল কয়েক ফোঁটা যোগ করা যায়। আর ভিটামিন ই ক্যাপসুল দুই একটি যোগ করতে পারলে মন্দ হয় না। তাই বাসায়ই এটি তৈরি করা যায় যদি ইথানল কিংবা আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল যোগাড় করা যায়।


হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরিতে সার্বিক সহযোগিতার বিষয়ে ড. মো. আব্দুল মুহিত বলেন, বায়োমেডিকেল রিসার্স সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর আ ব ম ফারুক স্যার এবং ফার্মেসী অনুষদের ডিন প্রফেসর এস এম আব্দুর রহমান স্যারের পরামর্শ এবং সহযোগিতায় অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ, ড. শেখ জহির রায়হান এবং আমি ফার্মেসী বিভাগের কিছু শিক্ষার্থীদের নিয়ে শুক্রবার প্রায় ২০০ বোতল (প্রতিটি ১০০ মিলি) করে তৈরি করেছি। এদিন শনিবার আরো ২০০ বোতল তৈরি করবো। প্রথম পর্যায়ে আমাদের ফার্মেসীর শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে দিতে চাই। এরপর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মী এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মাঝে দিতে চাই। তবে আমাদের তৈরি করার সুযোগ সীমিত। আমরা বেশি পরিমাণে তৈরি করার জন্য প্রস্তুত নই। আর আর্থিক বিষয়তো রয়েছেই।



হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার খুব অল্প পরিমাণে (তিন বা চার ফোঁটা) হাতের তালুতে নিয়ে দুই হাতে ভালো করে ঘষতে হবে। যতক্ষণ না হাত শুষ্ক হয়, ততক্ষণ ঘষতে হবে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার মেখে কোন খাদ্যদ্রব্য না খাওয়াই উত্তম। এটা শুধুমাত্র বাহ্যিক ব্যবহারের জন্য।


ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এসএম আব্দুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, করোনা প্রতিরোধের জন্য জীবাণুনাশক হ্যান্ড স্যানিটাইজারটি তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যৌথভাবে এ কাজটি করেছে।



হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বিবার্তাকে বলেন, এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। বিশ্ববিদ্যালয় এ ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা করবে। করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন ও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।


উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহরের একটি বন্যপ্রাণীর বাজার থেকে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এখন পর্যন্ত অন্তত বিশ্বের ১৩২টি দেশে ছড়িয়ে পড়া মরণঘাতী করোনা ভাইরাসে শুক্রবার (১৩ মার্চ) পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। এছাড়া আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজারেরও বেশি মানুষ। বাংলাদেশেও গত ৮ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজন রোগী শনাক্ত করা হয়। আক্রান্ত তিনজন রোগীর মধ্যে ১ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন, বাকি দুজনও সুস্থ আছেন বলে শুক্রবার (১৩ মার্চ) জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।


বিবার্তা/রাসেল/উজ্জ্বল/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com