শিরোনাম
বাংলাদেশ মেডিকেলে করোনার আঘাত!
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২০, ১৬:৩৩
বাংলাদেশ মেডিকেলে করোনার আঘাত!
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

করোনাভাইরাসের জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পিকনিক স্থগিত করা হয়েছে। শুক্রবার (১৩ মার্চ) ওই পিকনিক করার কথা থাকলে তা স্থগিত করে করোনা রোগী সনাক্ত ও করোনাভাইরাস সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। বুধবার ও বৃহস্পতিবার হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও রোগীদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।


জানা গেছে, চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বাংলাদেশেও শনাক্ত হয়েছে। গত সোমবার তিন রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে নড়েচড়ে বসেছেন দেশের ১৭ কোটি মানুষ। এমনকি এর প্রভাব পড়েছে দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, ক্রীড়াঙ্গন ও রাজনৈতিক অঙ্গনেও। তাই সরকারি দল, বিরোধী দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের কর্মসূচিগুলোতেও এনেছে নানা পরিবর্তন।



একই অবস্থা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও। বিশেষ করে দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি তাদের নিয়মিত কার্যক্রমে আরো গতিশীলতা আনতে তাগিদ দেয়া হয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপতালে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (বিএমএসআরআই) কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির নির্ধারিত পিকনিক স্থগিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পিকনিকের আয়োজন স্থগিত করে করোনা রোগের প্রতি নজরদারি করছেন তারা।


সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই হাসপতালে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (বিএমএসআরআই) কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে প্রতিবছর পিকনিটের আয়োজন করা হয়। এ ধারাবাহিকতায় এবারও তারা পিকনিকের আয়োজন করেছিলেন। শুক্রবার তারা মানিকগঞ্জ এলাকায় পিকনিকে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত সোমবার বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর সংগঠনের নেতারা একটি বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে হাসপাতালের পরিচালকও উপস্থিত ছিলেন। আর সেই বৈঠকে পিকনিক স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে পিকনিটের জন্য সংগৃহীত অর্থ সবাইকে ফেরত দেয়া হয়েছে।


এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপতালে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের সংগঠনের সেক্রেটারি আব্দুর জাহের মনজু বিবার্তাকে বলেন, করোনার জন্য পিকনিট স্থগিত করা হয়েছে। ওই কর্মসূচির পরিবর্তে করোনাভাইরাসের জন্য রোগীদের সচেতন করা হচ্ছে। আমাদের সংগঠনের সবাইকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করার জন্য বলা হয়েছে।


বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. আব্দুস ছবুর মিঞা বিবার্তাকে বলেন, করোনাভাইস সনাক্তের একটি টিম কাজ করছে। কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সমন্বয়ে এ টিম গঠন করা হয়েছে। ওই টিমের জন্য হাসপাতালে আলাদা একটি রুম রাখা হয়েছে। সেখানে সব সময় দুইজন করে ইন্টার্নি ডাক্তার রাখা হবে। আর ওই ডাক্তারদের কাছে একটি কাগজে প্রিন্ট করা একটি ফরম দেয়া হয়েছে। রোগীর কাছ থেকে তথ্যগুলো ওই ফরমে লেখা হবে।


ডা. মো. আব্দুস ছবুর মিঞা বলেন, সর্দি-কাশির রোগীদের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেই ওই রুমে ডাক্তাররা কাজ করবেন। কাজ করার ক্ষেত্রে রোগীর আত্মীয়-স্বজন সম্প্রতি প্রবাস থেকে বাংলাদেশে এসেছেন কি না? অথবা সে সম্প্রতি দেশের বাহিরে গেছে কি না? করোনাভাইরাস আক্রান্ত কারো সাথে মেলামেশা করেছেন কি না? সাত থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত সর্দি-কাশি আছে কি না? এসব বিষয়সহ বিভিন্ন তথ্য রোগীর কাছে জানা হবে। পরবর্তীতে মেডিকেল বোর্ড বিষয়টি পর্যালোচনা করে যদি মনে হয় তার করোনাভাইরাস আছে তা হলে তাকে মহাখালীতে হস্তান্তর করা হবে।


তিনি আরো বলেন, শুধু ডাক্তারা সতর্ক নয়, বাংলাদেশ মেডিকেলে নার্স থেকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও করোনাভাইরাসের জন্য কাজ করছেন। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপতালে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (বিএমএসআরআই) কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির একটি পিকনিক স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়াও তাদের সাথে দফায় দফায় মিটিং করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।


এদিকে বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে যে দুজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তাদের যেকোনো দিন ছেড়ে দেয়া হবে। গতকাল বুধবার এ তথ্য জানিয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনাও বলেছিলেন, দুজন সুস্থ হয়ে উঠছেন।



জাহিদ মালেক বলেন, সরকার সতর্ক ও সজাগ রয়েছে। করোনা মোকাবিলা করতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রয়েছে তাদের।


অন্যদিকে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আরও নয়জনকে ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ রাখা হয়েছে। এই নিয়ে চার দিনে মোট ৪৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার সকালে জানিয়েছেন ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব বুলবুল আহমেদ।


তিনি জানান, হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা প্রত্যেকে সদ্য বিদেশ থেকে এসেছেন। তবে এখন পর্যন্ত কারো মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা যায়নি।


উল্লেখ্য, সারা বিশ্বে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত এক লাখ ১৯ হাজার করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪ হাজার ২৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও ৬৬ হাজার ৫৬৩ জন সুস্থ হয়েছেন।


বিবার্তা/খলিল/জাহিদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com