ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় এবারও চলছে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০’। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে তার স্মৃতির প্রতি উৎসর্গিত এবারের মেলায় সাজানো হয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার। মেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের নজরুল মঞ্চে করা হয়েছে এ কর্নার। ডাকসুর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চেীধুরীর উদ্যোগে এ কর্নার নির্মাণ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।
মেলায় কোনো ধরণের স্পন্সর ছাড়াই এ কর্নার নির্মাণ করা হলেও এ কর্নারের ভেতরে বিকাশের প্রচারণার বোর্ড রাখা হয়েছিল। যা নিয়ে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আর এ ক্ষোভ ও সমালোচনার মুখে পড়ে বিকাশের প্রচারের বোর্ডগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে গ্রন্থমেলার গিয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নারে বিকাশের প্রচার বোর্ডগুলো পাওয়া যায়নি। সমালোচনার মুখে পড়ে এ স্থান থেকে প্রচার বোর্ডগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এরআগে বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) এ স্থানে বিকাশের প্রচার বোর্ডগুলো রাখা হয়েছিল। পরে এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে এদিন রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেন বঙ্গবন্ধুর কর্নারের উদ্যোক্তা ও ডাকসুর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চেীধুরী।
এ সময় তিনি ফেসবুকে ঘটনার ছবি- ভিডিও সংযুক্ত করে লেখেন, ক্রমেই যখন বঙ্গবন্ধু কর্নার দর্শনার্থীদের আকর্ষণে পরিণত হচ্ছে ঠিক এই সময় বিকাশ আমাদের ডিজাইনে ‘সহযোগিতায় বিকাশ’ বোর্ড টানিয়ে দেয় বঙ্গবন্ধু কর্নারে। আমাদের ছবির ফ্রেম এবং সাদা রঙ যেভাবে দেয়া, সেই অনুরূপ বোর্ড তারা দেয়। যে কেউ দেখলেই ভাবতে পারে যে, এই বঙ্গবন্ধু কর্নারের স্টলটি বিকাশের সহযোগিতায় করা হয়েছে। এটি আমাদেরর জন্য অত্যন্ত লজ্জার। সব জায়গায় বাণিজ্য করতে করতে শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু কর্নারের মতো জায়গায় অনৈতিক ও অবৈধভাবে তারা সাইনবোর্ড দিল!
পরবর্তীতে তার এ ফেসবুক পোস্টটি সর্বপ্রথম জাতীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিবার্তা২৪ডটনেটে প্রকাশ করা হয়। এরপর আরো কয়েকটি গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ করা হয়েছে। আর এভাবে গণমাধ্যম ও ফেসবুকে বিষয়টি ভাইরাল হয়ে যায়। স্পন্সর ছাড়াই নির্মিত বঙ্গবন্ধু কর্নারে বিকাশের প্রচারণার বোর্ড রাখাকে প্রতারণা আখ্যা দিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। আর এ ক্ষোভ ও সমালোচনার ঘটনায় টনক নড়ে বিকাশের। পরে তারা এ স্থান থেকে বোর্ডগুলো সরিয়ে নেয়।
শুক্রবার মেলায় বঙ্গবন্ধু কর্নার পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, নজরুল মঞ্চে স্থাপিত ‘বঙ্গবন্ধু কর্নারটি’ বঙ্গবন্ধু , স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত ঐতিহাসিক ছবি, পত্রিকার সংবাদ, বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা ও বঙ্গবন্ধুর উপর রচিত বই দিয়ে সাজানো হয়েছে। ইতোমধ্যে এ কর্নারটি মেলায় আগতদের নজর কেড়েছে।এ স্থানে ভীড় জমাচ্ছেন মেলায় আগত পাঠক, লেখক ও দর্শনার্থীরা। তাদের কোলাহলে মুখরিত থাকে এ স্থান। এখানে এসে কেউ দেখছেন বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ ছবি, কেউবা আবার বিভিন্ন ঐতিহাসিক প্ল্যাকার্ডের লেখাগুলো পড়ছেন, আবার কেউবা বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ ছবির সাথে, ঐতিহাসিক ছবিগুলোর সাথে নিজেকে সেলফিবন্দি করছেন।
পাঠক, লেখক ও দর্শনার্থীদের ভীড়ে মুখরিত থাকায় এ স্থানটিতে প্রচার বোর্ড বসিয়েছে বিকাশ, এমনটাই অভিযোগ করলেন বঙ্গবন্ধু কর্নারের আয়োজকরা। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু কর্নারের উদ্যোক্তা ও ডাকসুর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চেীধুরী বিবার্তাকে বলেন, অবাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আমরা মানুষকে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সম্পর্কে জানাতে কোনো ধরণের স্পন্সর ছাড়াই বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করেছি। ইতোমধ্যে এ কর্নার মেলায় আগতদের নজর কেড়েছে। আর এটার সুযোগ নিয়েছে বিকাশ। কোলাহলপূর্ণ এ স্থানে তারা বসিয়ে দিয়েছে তাদের প্রচারণার বোর্ড। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর কর্নারের মতো জায়গায় বিকাশের এ বাণিজ্যিক চিন্তা-ভাবনা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার। একই সাথে চরম হতাশার ব্যাপার। সমালোচনায় মুখে পড়ে বিকাশ তাদের প্রচারণার বোর্ড সরিয়ে ফেলেছে বলে জানান তিনি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিকাশের জনসংযোগ কর্মকর্তা সামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বিবার্তাকে বলেন, এবারের বইমেলায় বিকাশ স্পন্সর। তবে কোথায় কি লাগানো হবে, কিভাবে সাজানো হবে সেটার জন্য একটা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটি রয়েছে। এ কমিটি বাংলা একাডেমির সাথে কথা বলে সাজানোর কাজ করে থাকে।
তিনি বলেন, গ্রন্থমেলায় বিকাশ শুধু নিজেদের বুথে কাজ করে থাকে। বাকি অন্য কিছু বিকাশ করে না।
বিবার্তা/রাসেল/উজ্জ্বল/জাহিদ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]