বাঙালির প্রাণের মেলা বই মেলায় সত্যিকারের প্রাণের সঞ্চার হয়েছে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে।প্রথমত ২১ ফেব্রুরায়রি সেই সাথে ছুটির দিন শুক্রবার, ফলে সকাল থেকেই মেলায় পাঠক দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।বইমেলা যেন আজ ভাষা প্রেমীদের মিলন মেলা।
শুক্রবার সকাল (২১ ফেব্রুয়ারি) থেকেই বই মেলা প্রাঙ্গনে ঢল নামে সকল স্তরের মানুষের।শুক্রবার সকাল থেকে বই মেলা ঘুরে এসব দৃশ্যই দেখা যায়।প্রবেশের সবগুলো পথেই মানুষের দীর্ঘ লাইন। মেলামুখী দুই প্রান্তের সড়কে মানুষের আনাগোনা বেলা বাড়ার সাথে সাথেই বৃদ্ধি পায়।
শুক্রবার প্রথম প্রহর রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষকবৃন্দ, ঢাকাস্থ বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সর্বস্তরের জনগণের জন্য উন্মুক্ত করার পর থেকে ভিড় জমে অনেক বেশি।
এদিন ভোর থেকেই সর্বস্তরের মানুষ ৫২ এর ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।এরপর পরই সবাই পারি জমাতে থাকে বই মেলা প্রাঙ্গনে। শুধু নগরবাসী নয় বই মেলায় ঘুরতে মানুষ ঢাকার বাইরে থেকেও ভিড় জমিয়েছেন।
বাংলা একাডেমির তথ্য কেন্দ্রের দেয়া তথ্য মতে, বইমেলায় আজ থাকবে সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে। ভাষা প্রেমিদের ঢল নামবে বই মেলায়। বিকেল ৪টার মধ্যে জমজমাট হয়ে উঠবে বইমেলা, তবে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভিড় ছিল চোখে পরার মত । মেলার অনেক স্টলেই বাজছে একুশের গান ও কবিতা। বিভিন্ন স্টলে আজ একুশ আঙ্গিকের কবিতার বই ও গল্প উপন্যাসের বই বিক্রি হচ্ছে। আবৃতি হচ্ছে একুশের কবিতা। গান বাজছে ‘আমার ভাইয়ের রক্ত রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’।
বাংলা একডেমী প্রাঙ্গনে সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা যায় বঙ্গবন্ধু কর্নারে। এরপরই রয়েছে আওয়ামি যুবলীগের স্টল, ছাত্রলীগের স্টলের সামনে পাঠকের ভিড়।এছাড়া রুচিভেদে প্রায় সকল স্টলেই পাঠকের সমাগম ছিল অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি।
যুবলীগের স্টলের বই বিক্রেতা হারুন উর রশিদ বিবার্তাকে জানান, আজকে সকাল থেকেই বই মেলায় বিক্রি ভাল।আমাদের স্টলে বাকি সব দিনের চেয়ে আজকে ক্রেতা বেশি।তবে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আরো পাঠক ক্রেতার সমাগম হবে বলে আশা করি।
এদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলা একাডেমীর চেয়ে অনেক বেশি দর্শক সমাগম লক্ষ্য করা যায়।ছোট বড় প্রায় প্রতিটি স্টলেই ছিল প্রচুর সংখ্যক পাঠক।কেউ বই কিনছেন, কেউ বা শুধু পাতা উল্টিয়ে দেখছেন, কেউবা বই উপহার দিচ্ছেন নিজের প্রিয়জনকে।
পাশাপাশি হেটে যাচ্ছিলেন ফিরোজ আহমেদ ও ফরিদা পারভিন দম্পতি। দুইজনই চাকরি করার কারণে একসাথে বই মেলায় আসা হয় না সময় করে।আজকে ছুটির দিন তাই সকাল থেকে সারাদিন বই মেলায় কাটাবেন তারা।বই কিনবেন নিজেদের পছন্দের লেখকের, প্রিয়জন ও আত্মীয় স্বজনের জন্যও বই কিনবেন। ইসলামিক বই ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা বই বেশি কিনছেন ফিরোজ আহমেদ।এদিকে ফরিদা পারভিনের পছন্দের তাকলিকায় রয়েছে হুমায়ুন আহমেদ ও সমরেশ মজুমদার।
নয় বছরের মেয়েকে নিয়ে বই মেলায় এসেছেন স্কুল শিক্ষক রেজাউল করিম।তিনি বিবার্তাকে বলেন, বই মানুষের ভেতরে চেতনা জাগ্রত করে, মানুষকে বিপথে যেতে বাধা দেয়।আমি মনে করি যত কম বয়সে থেকে মানুষ বই পড়া শুরু করবে ততই সে ভেতর থেকে শুদ্ধ হয়ে উঠবে।আমি আমার মেয়েকে ছয় বছর বয়স থেকে বই কিনে দেই, সে মেলায় এসে নিজের পছন্দেমতো বই কিনে।
তবে মেলায় সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা যায় এই প্রজন্মের লেখকদের বই এর প্রতি।তাম্রলিপি, আদর্শ, অন্যপ্রকাশ এর মত প্রকাশনীরা শুধু এ প্রজন্মের বই বিক্রি করেই রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে।১০-২০ বছর বয়সের বেশিরভাগ মানুষ তাদের বইগুলো কিনতে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করছে বলে জানান তাম্রলিপির একজন বিক্রয় প্রতিনিধি।
এছাড়া বই এর পাশাপাশি খাবারের দোকান গুলাতেও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত । বাহারি রকমের পিঠা, কাবাব, পরোটা, বিরিয়ারনি, আইস্ক্রিমের দোকানগুলোতে ছিল মানুষের বিচরণ।সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দুই পাশ জুড়েই রয়েছে এসব খাবারের দোকান।বাকি দিন গুলোর চেয়ে আজকে বেশি খাবার বেচাকেনা হবে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা।
বিবার্তা/আদনান/জাই
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]