শিরোনাম
কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে চলছে বাঙালির প্রাণের মেলা
প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৫:২৩
কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে চলছে বাঙালির প্রাণের মেলা
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে চলছে বাঙালি জাতির প্রাণের মেলা ‘অমর একুশে বইমেলা’। বইপ্রেমী মানুষ নির্ভয়ে মেলা প্রাঙ্গণে এসে নিজের পছন্দের বই কিনে বাড়ি ফিরছেন। এছাড়া বিক্রেতারাও নিরাপদে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।


দায়িত্বরত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মেলার শুরুর দিকে পাঠক সমাগম কম হলেও বর্তমানে মেলা প্রাঙ্গণে পাঠকদের পদচারণা বেশি। আর তাদের নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে সকল প্রবেশ গেটে আর্চওয়ে স্থাপন। প্রত্যেক দর্শনার্থীর দেহ মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে তল্লাশি করে বইমেলা প্রবেশ এবং মেলা প্রাঙ্গণ ও তার আশপাশের এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন। যা মেলা প্রাঙ্গণে পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।


এছাড়া মেলা প্রাঙ্গণ ও তার আশপাশে এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাকে পুলিশ বাহিনী মেলার ভেতরে ও বাহিরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এমনকি আইন-শৃঙ্খলার বাহিনীর সদস্যরা গাড়ি ও মোটরসাইকেলে সার্বক্ষণিক টহল দিচ্ছেন।


তারা আরো জানান, মেলায় প্রতিটি স্টলে একটি করে অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র রাখা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্স ও আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য পানির গাড়ি রয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণে ও বাহিরে সার্বক্ষণিক পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা এবং বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিকল্প জেনারেটরের ব্যবস্থা রয়েছে।



জমে উঠেছেবাঙালির প্রাণের মেলা


সরেজমিনে মেলায় গিয়ে দেখা গেছে, মেলার আসা দর্শনার্থীরা মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশের সময় তাদের তল্লাশি করছেন পুলিশ। এছাড়া মেলায় প্রতিটি বইয়ের স্টলে রাখা হয়েছে অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র। টিএসসি হতে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, ফ্ল্যাগযুক্ত গাড়ি ও বাংলা একাডেমির স্টিকার সংযুক্ত গাড়ি ব্যতীত অন্য কোন গাড়ি প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।


জানা গেছে, মেলা চলাকালীন টিএসসি হতে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, ফ্ল্যাগযুক্ত গাড়ি ও বাংলা একাডেমির স্টিকার সংযুক্ত গাড়ি ব্যতীত অন্য কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। টিএসসি প্রান্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মল চত্বরে গাড়ি পার্কিং ও দোয়েল চত্বর প্রান্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া অন্য কোথাও গাড়ি পার্কিং করা যাচ্ছে না। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রবেশের জন্য বাংলা একাডেমি মূল প্রবেশ গেইট ও বাংলা একাডেমি ব্যাংক গেইট দিয়ে প্রবেশ করতে হচ্ছে। বাংলা একাডেমি হতে বাহির হওয়ার জন্য বাংলা একাডেমির মেলার বাহির গেইট ব্যবহার হচ্ছে।


অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলায় প্রবেশের জন্য তিনটি প্রবেশ গেইট ব্যবহার করার করা হচ্ছে। এক নাম্বার প্রবেশ গেইট সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নব নির্মিত গেইট। দুই নাম্বার প্রবেশ গেইট টিএসসি গেইটের মধ্যবর্তী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভিতরে প্রবেশ গেইট। তিন নাম্বার প্রবেশ গেইট রমনা কালিমন্দির গেইট থেকে তিন নেতার মাজারের মধ্যবর্তী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভিতরের প্রবেশ গেইট। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বই মেলা হতে বাহির হতে তিনটি গেইট ব্যবহার করতে হবে। বাহির গেইট হিসেবে রমনা কালিমন্দির গেইট (বাংলা একাডেমির বিপরীতে বাহির গেইট-১), মুক্ত মঞ্চের ৩০ গজ উত্তর-পূর্বে ও কালিমন্দির সংলগ্ন পুকুরের পশ্চিম প্রান্ত ব্যবহার করা হচ্ছে।


বইমেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ব্যাবস্থাপনা সম্পর্কে বাংলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বিবার্তাকে বলেন, এবারের বইমেলায় ৫৩৮টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলায় ৪১১টি প্রতিষ্ঠান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২৭টি প্রতিষ্ঠান মোট ৮৭২টি ইউনিটে বুক স্টল রয়েছে। এছাড়া বইমেলা প্রাঙ্গণে রয়েছে শিশু চত্বর, মসজিদ, টয়লেট ব্যবস্থাপনা, ফুড পার্ক ও প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র। বইমেলায় বই মনিটরিং করতে রয়েছে মনিটরিং কমিটি। বইমেলার নিরাপত্তায় ৩০০টির অধিক সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। বাঁশ ও টিন দিয়ে মেলা প্রাঙ্গণ শক্ত করে বেষ্টনী দেয়া হয়েছে। প্রতিটি বুক স্টলে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বাধ্যতামূলকভাবে রাখতে প্রকাশকদের বলা হয়েছে। এই বইমেলা আপনার আমার সকলের, আমরা সকলের সহযোগিতা চাই।



মেলায় রাখা হয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা


মেলায় কন্ট্রোল রুমে দায়িত্বে থাকা এসআই জহিরুল ইসলাম বিবার্তাকে বলেন, আমরা চেষ্টা করতেছি শতভাগ নিরাপত্তা দিতে। মেলায় ক্রেতা-বিক্রেতারা নিরাপদেই তাদের কাজ করে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আসে নাই।


তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে দর্শনার্থী, লেখক ও প্রকাশকদের আনাগোনায় জমজমাট হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও আনন্দঘন ও প্রাণোচ্ছ্বল পরিবেশে অমর একুশে বইমেলা উদযাপনের লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নিশ্ছিদ্র ও কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। নগরবাসীকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেয়ার পাশাপাশি মানবিকতাকে নিজের মধ্যে লালন করে সেবা দিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। এবারো বইপ্রেমীদের সেবার্থে তাদের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে বিশুদ্ধ খাবার পানি। সেই সাথে রয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মানবিক উদ্যোগের আরেকটি সেবা ‘লস্ট এন্ড ফাউন্ড সেন্টার’।


এদিকে, ইতোমধ্যে একাধিকবার বই মেলা প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করেছে ডিএমপি কমিশনারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার বিকালে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থাপিত বেশ কিছু বইয়ের স্টল পরিদর্শন করেন এবং গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রকাশক, পাঠক ও দর্শনার্থীদের সাথে কথা বলেন তিনি।


এদিকে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করায় উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে বই মেলা। প্রকাশক, পাঠক ও দর্শনার্থীরা নিবিগ্নি মেলায় চলাচল করতে দেখা গেছে।



মেলায় এক পাঠকের হাতে বই তুলে দিচ্ছেন ‘গণজাগরণের দিনগুলি’ বইটির লেখক এফ এম শাহীন


এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ‘গণজাগরণের দিনগুলি’ বইটির লেখক এফ এম শাহীন বিবার্তাকে বলেন, এখন পর্যন্ত এবারের বই মেলা শান্তিপূর্ণভাবে হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সহযোগিতা করছেন। এছাড়াও মেলায় দর্শনার্থীদের সংখ্যাও বাড়ছে।


বলাকা প্রকাশন নামের একটি স্টলে স্বত্বাধিকারী শরিফা বুলবুল বিবার্তাকে জানান, এবারের বই মেলায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেয়ায় তারা নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারছেন। বেলার শুরুর দিকে দর্শনার্থী কিছুটা কম হলেও এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি বই প্রেমি মেলায় আসছেন।


এছাড়া মেলা আসা আবুল হোসেন নামের এক দর্শনার্থী বিবার্তাকে জানান, তিনি প্রায় সাত বছর থেকে মেলায় আসছেন। তবে অন্যান্যবারের চেয়ে এবার মেলায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারী খুবই ভালো।


বিবার্তা/খলিল/উজ্জ্বল/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com