শিরোনাম
নগরপিতার কাছে কী চায় ঢাকাবাসী? (পর্ব-২ )
প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২০, ১৭:৫০
নগরপিতার কাছে কী চায় ঢাকাবাসী? (পর্ব-২ )
আদনান সৌখিন
প্রিন্ট অ-অ+

ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নগরবাসীর দরজায় কড়া নাড়ছে| যদিও ৩০ জানুয়ারি নির্বাচনের তারিখ নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা ও মতবিরোধ ছিল, শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবির ফলে সরস্বতী পূজার দিন থেকে পিছিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সিটি নির্বাচনকে ঘিরে সাধারণ মানুষ তথা নগরবাসীর প্রত্যাশার কমতি নেই।


ঢাকা সিটি করপোরেশন মূলত উত্তর ও দক্ষিণ দুই ভাগে বিভক্ত, কিন্তু এটি আসলে একটি শহর। ঢাকা সিটি করপোরেশন কেন্দ্রে রয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। তাই এর মেয়রদের কাছে মানুষের প্রত্যাশাও অনেক।



নির্বাচনী প্রচারণায় মেয়রপ্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস


প্রথমত, নগরবাসী অবাধ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। যিনি মেয়রের আসনে বসবেন তিনি নিজে মন্ত্রীর পদমর্যাদা পাবেন, গাড়িতে, বাড়িতে জাতীয় পতাকা ওড়াতে পারবেন। কিন্তু তিনি নগরবাসীকে কী দেবেন? কিংবা তার দেয়ার সাধ্য কতটুকু? এসব প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজতেই নগরীর বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে তাদের নানান প্রত্যাতাশার কথা।


ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস ও বিএনপির ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের প্রচারণাও থেমে নেই কোনো অংশে। তাপস তার ভোটারদের কাছে অঙ্গিকার করছেনে নির্বাচিত হবার ৯০ দিনের মধ্যে রাস্তার আবর্জনা নিরসন, পর্যাপ্ত স্ট্রিট লাইট, মশক নিধন এসব কাজকে অগ্রাধিকার দিবেন। এছাড়া ৩০ বছরের একটি মহাপরিকল্পনা সামনে নিয়ে কাজের লক্ষ্য নির্ধারণ করবেন তাপস। অন্যদিকে ইশরাক হোসেন তার ভোটারদের কাছে জলাবদ্ধতা, ডেঙ্গু, মাদক সমস্যা, সরু রাস্তাগুলো প্রশস্ত করা, যানজট কমান, মেট্রোরেল ইত্যাদি সমস্যা অগ্রাধিকার দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। পুরান ঢাকা তথা ঢাকা দক্ষিণের জনগণও তাদের কথায় আশার বুক বাঁধছেন।



নির্বাচনী প্রচারণায় ইশরাক


গুলিস্তানের ফুটপাথে দীর্ঘদিন ধরে সিজনাল বিজনেস করেন জামাল মিয়া। জুতা বিক্রির ফাঁকে ফাঁকে তিনি বিবার্তাকে বলেছেন, এর আগের মেয়র ত আমাদের সাথে কোনো ধরনের আলোচনা না করেই আমাদের উঠে যেতে বলছিল। আমরা এখানে কম করে হলেও ৫০০ মানুষ বাবসা করে কোনো রকম সংসার চালাই। আমাদের অন্য কোনো জায়গার ব্যবস্থা না করে উঠিয়ে দিলে ত আমাদের পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। সামনে যে মেয়র আসবেন তিনি এসব বিষয় মাথায় রাখবেন বলে আমার বিশ্বাস।


বংশালের আলুবাজারের ব্যবসায়ী হাজী ইব্রাহিম মোল্লা বিবার্তাকে বলেন, সমস্যা বললে ত শেষ নাই, তবে যানজট প্রধান সমস্যা। এছাড়া এটি একটি বিজনেস এরিয়া হবার কারণে এখনে ময়লা আবর্জনাও বেশি হয়। সেজন্য এখানে দিনে অন্তত ২ বার ময়লার গাড়ি আসা দরকার, কিন্তু এখানে গাড়ি আসে ২/৩ দিনে একবার। মেইন রোডের চেয়ে ভেতরের গলির অবস্থা আরো নাজুক। যে রাস্তা দিয়ে দুটি রিক্সা যেতে হিমশিম, সেই রাস্তায় ডাস্টবিন, নির্মাণ সামগ্রি, ফুটপাথ দোকান দিয়ে দখল হয়ে যায়। আগামী মেয়র এগুলা কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করবেন এমনটা আশা করি।



নির্বাচনী গণসংযোগে তাপস


বাদামতলিতে ফলের আড়তে ৭ বছর ধরে কাজ করেন লুতফর মোল্লা। সিটি নির্বাচনে তার আকাঙ্ক্ষা জানতে চাইলে বলেন, বাদামতলিতে দিন রাত ২৪ ঘণ্টা জ্যাম লেগেই থাকে। এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফলের বাজার, কিন্তু এখানে হাতে গোনা কিছু ডাস্টবিন আছে যা প্রয়োজনের তুলনায় কম, সেগুলা আবার পরিষ্কারও করা হয় না। এতে আমরা যেমন ভুগছি, তেমনি এখানে আসা ক্রেতারাও ভোগান্তি পোহান।


চলার পথে কথা হচ্ছিল মিরপুর টু সদরঘাট রোডে দীর্ঘদিনের বাস চালক রতন শিকদারের সাথে। তিনি বলছিলেন, নির্বাচন নিয়ে আমাদের বেশি কিছু চাওয়ার নেই। আমরা যেহেতু রাস্তার মানুষ, তাই রাস্তার সুবিধার বিষয়টাই আমার বড় চাওয়া। ট্র্যাফিক আইন যাতে যাত্রী চালক, পুলিশ সবাই মেনে চলেন সেটা দেখা দরকার। রাস্তায় কিছু কিছু জায়গায় বাসস্ট্যান্ড, যাত্রী ছাউনি করার হয়েছিল, কিন্তু সেটা চালক বা যাত্রী কেউ মেনে চলে না, আর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ত কোনো বাসস্ট্যান্ডই নাই। যেসব জায়গায় দিনে শত শত গাড়ি যায়, সেখানে ১০টা বাস রাখার জায়গা নাই, ফলে যানজট লাগে। এই বিষয়গুলা যদি মেয়ররা দেখেন খুব ভাল হয়।



নির্বাচনী প্রচারণায় ইশরাক হোসেন


নিউমার্কেটে ফুটপাথে ২টি দোকান আছে কথা হয় এমন একজন মালিকের সাথে। তার একটি নীলক্ষেতের ফুটপাথে পুরাতন বইয়ের দোকান, আরেকটি নিউমার্কেট ওভারব্রিজের নিচে ফাস্টফুডের দোকান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি বিবার্তাকে বলেন, আমরা কিন্তু এর আগে বার বার মেয়রের কাছে হকার মার্কেটের জন্য আবেদন করেছিলাম, কিন্তু তিনি আমাদের দিকে কোনো নজর দেন নাই। আমরা নিরুপায় হয়েই ফুটপাথে ব্যবসা করছি। তাপস ভাই এই এলাকারই মানুষ। আমার বিশ্বাস তিনি নির্বাচিত হলে আমাদের জন্য ভাল কিছু করবেন।


আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটিতে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও সরস্বতী পূজার কারণে তা দুই দিন পেছানো হয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি এই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।


বিবার্তা/আদনান/উজ্জ্বল/জাই


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com