ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এতে নানা কৌশল অবলম্বন করছেন প্রার্থীরা। গণসংযোগ, মাইকিং, পোস্টার ঝুলানোর পাশাপাশি ভার্চুয়াল প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় প্রার্থী থাকায় কৌশলগুলোর ধরনেও ভিন্নতা রয়েছে। বিষয়টি সাধারণ মানুষ ও ভোটাররাও মনভরে উপভোগ করছেন। গত বৃহস্পতিবার থেকে আজ রবিবার পর্যন্ত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকা ঘুরে এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
নির্বাচনী প্রচারণায় তাপস
জানা গেছে, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় ঢাকার দুই সিটিতে মেয়র পদে মোট ১২ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে ১৭২টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৭৪১ জন প্রার্থী৷ প্রতিটি ওয়ার্ডে মূল দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাশাপাশি রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী। দলীয় সমর্থন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন অনেকেই।
দলীয় প্রর্থীকে নিয়ে দেশের বৃহৎ দুটি দল অংশ নেয়ায় রাজধানীসহ সারা দেশে চলেছে অনেক হিসাব-নিকাশ। তাই প্রার্থীসহ দলীয় শীষ নেতারাও নির্বাচনী মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন। নির্বাচনী আচরণ বিধি মেনে আওয়ামী লীগ নেতারা কৌশল অবলম্বন করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিশেষ করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোশনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম নৌকা প্রতীকে প্রচারণা চালাতে গিয়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বণ করতে দেখা গেছে।
ইতোমধ্যে ফুটপাতে টং দোকানে চা বানানো, পথশিশুদের নিয়ে আড্ডা, প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপি প্রার্থীর পোস্টার লাগানোর আগ্রহ প্রকাশ সবার নজর কেরেছে। এসব বিষয়কে সাধারণ ভোটার ও রাজধানীবাসী সাধুবাদ জানিয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার (১৩ জানুয়ারি) রাজধানীর আফতাব নগরে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। এসময় ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময় শেষে স্থানীয় ইয়াসিনের চায়ের দোকানে বসেন তিনি। এক পর্যায়ে নিজেই আগ্রহ প্রকাশ করেন চা বানানোর।
ইয়াসিন তার জায়গা ছেড়ে দিলে গরম দুধ আর চায়ের লিকার ঢেলে আতিকুল ইসলাম বানান আট কাপ চা। খাওয়ান সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীদের এবং দোকানে আগে থেকে বসে থাকা কয়েকজনকে। দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়া এবং দোকানে বসে থাকা গ্রাহকদের চোখ তখন ছানাবড়া। পেশাদার চা বিক্রেতার মতোই ‘এই চা হবে… চা খাবেন চা…’ বলে ‘গ্রাহক’ আকর্ষণের চেষ্টা করেন আতিক। এসময় তার সঙ্গে থাকা কর্মী-সমর্থক ছাড়াও ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মাসুম গণি ও ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত ছিলেন।
শুধু তাই নয়, গত মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে আগারগাঁওয়ের তালতলা শতদল কমপ্লেক্স এলাকায় প্রচারণার ফাঁকে মিনিট পাঁচেকের জন্য আতিকুল যেন মিশে যান শিশুদের দলে। সেখানেই আগামীর প্রজন্মকে নিয়ে নিজের স্বপ্ন ও পরিকল্পনার কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, এই শিশুরা দেশের ভবিষ্যৎ। এই শিশুরাই আগামীর সম্পদ। আমি মনে করি তাদের জন্য বিশেষ কিছু করতে হবে। শিশুরা যেন নির্বিঘ্নে পার্কে খেলতে পারে, সেদিকে আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে।
এছাড়াও গত বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে মিরপুর আলুব্দী ঈদগাহ ময়দানের পাশ থেকে তার সপ্তম দিনের গণসংযোগ শুরু করেন আতিক। প্রচারণা শুরু আগে সংক্ষিপ্ত পথ সভায় সাংবাদিকরা তাবিথ আউয়ালের পোস্টার ছেঁড়া হচ্ছে এ অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন। এ সময় আতিক বলেন, আপনার পোস্টার দেন আমি লাগিয়ে দেবো। আমার কোনো নেতাকর্মী সমর্থক আপনাদের পোস্টার ছিঁড়ে নাই, ছিঁড়বে না।
প্রচারণার ফাঁকে শিশুদের মাঝে মিশে গেলেন আতিক
এদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসও বিভিন্ন কৌশলী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি গত ১১ জানুয়ারি রাজধানীর ওয়ারীতে আরকে মিশন রোডের গোপীবাগের সেকেন্ড লেনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের বাসায় যান এবং ভোট চান।
এ সময় তিনি বলেন, এখন থেকে ঢাকায় সম্প্রীতির রাজনীতি চলবে। সম্প্রীতির রাজনীতির মাধ্যমেই উন্নয়ন সম্ভব। এছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় গলিগলি চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগেও ওই প্রার্থী। এ সময় দলীয় নেতাকর্মীরাও ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন।
শুধু আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই নয়, প্রচারণায় বিএনপির মেয়র প্রার্থীরাও মাঠে রয়েছেন। তারা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটে যাচ্ছেন। এ সময় দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে থাকতে দেখা গেছে।
প্রার্থীদের পাশাপাশি দলের শীর্ষ নেতারাও বিভিন্ন আশ্বাস দিচ্ছেন ভোটারদের। বিশেষ করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপি প্রার্থী তাবিথ আওয়াল প্রতিদিন দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে নিয়ে প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। অপর দিকে ঢাকা দক্ষিণের বিএনপির ইশরাক হোসেনও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সাথে নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি গতবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়া মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রীকে নিয়েও একাধিক এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে অন্যান্য দলের মেয়র প্রার্থীরাও তারা নিজেরে মত করে প্রচারণা চালিয়ে যেতে দেখা গেছে। এমনকি দুই সিটিতেই কাউন্সিল প্রার্থীরাও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে তাদের প্রচরাণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা ভোটারদের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। নির্বাচিত হলে ব্যায়ামাগার, পাঠাগার, খেলার মাঠ স্থাপন, আধুনিক স্যুয়ারেজ লাইনসহ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও মাদকমুক্ত ওয়ার্ড উপহার দেয়ার আশ্বাসও দিচ্ছেন তারা।
ভোট চাওয়ার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে এখন ব্যবহার হচ্ছে ফেসবুক। মেয়র পদে আলোচনায় থাকা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত চার মেয়র প্রার্থী মাঠে সময় দেয়ার পাশাপাশি প্রচারণা চালাচ্ছেন অনলাইনে। বাদ যাচ্ছেন না কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাইকিং করা অন্যতম অপরিহার্য একটি বিষয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই মাইকিংয়েও কিছুটা ভিন্নতা এসেছে। সাধারণত গানের মাধ্যমে প্রার্থীদের ভোট চাওয়া হয়। এবার তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টি কাড়তে বিভিন্ন গান ব্যবহার হচ্ছে নির্বাচনী প্রচারণায়।
ইশরাকের বাসায় ভোট চাইলেন তাপস
তবে জনপ্রতিনিধির এমন আশ্বাস বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছেন ভোটার ও রাজধানীবাসী। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা মখলিছুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা অনেক প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তবে এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে নির্বাচনের পর সবাই তৎপর থাকতে হবে। তাই হলে প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন হবে বলে মনে করেন তিনি।
আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটিতে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও সরস্বতী পূজার কারণে তা দুই দিন পেছানো হয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি এই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বিবার্তা/খলিল /উজ্জ্বল/জাই
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]