ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে ঘিরে রাজধানীতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ফুটপাতের চায়ের দোকান থেকে বাসা-বাড়ি পর্যন্ত চলছে ভোটের হিসাব-নিকাশ। শুধু তাই নয়, নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে মাঠে নেমেছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থকরা।
বাসায় বাসায় গিয়ে প্রচারণার পাশাপাশি তারা রাস্তা, অলিতে-গলিতে নিজের পছন্দের প্রার্থীর পোস্টার সাটানোর কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন। অথাৎ ভোটকে কেন্দ্র করে পুরো রাজধানীতে বইছে আনন্দের বন্যা। প্রতীক বরাদ্দের দিন থেকে গতকাল শনিবার রাত পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে কথা বলে এমন উৎসবের খবর পাওয়া গেছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। এর পর থেকেই ভোটের লড়াইয়ে প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণায় নামেন। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়াতে নিজ নিজ দলের প্রার্থীদের নিয়ে মাঠে কাজ করছেন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাংলামটর, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, শেওরা পাড়া, কুড়িল বিশ্বরোড, উত্তরা, বারিধারা, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, খিলক্ষেত, খিলগাঁও, মতিঝিল, পুরান ঢাকা, কাঁটাবন, গুলশান, বনানী এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সিটি করপোরেশনের ভোটের জন্য নিজ নিজ প্রার্থীদের জন্য পোস্টার সাটানো হচ্ছে। রশি দিয়ে এক ভবন থেকে অন্য ভবনে, রাস্তার পাশের খুঁটিগুলো এবং গাছগুলোতেও পোস্টার লাগানো হয়েছে।
শনিবার সকালে রাজধানীর বারিধারা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, যমুনা ফিউচার পার্কের পাশের দেয়ালে নির্বাচনী পোস্টার লাগানো হয়েছে। এছাড়াও পার্কটির সামনের ফুটওভার ব্রিজেও পোস্টার লাগানো হয়েছে।
দুপুরে রাজধানীর কাঁটাবন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, নিজ দলের নেতাকর্মীরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসের পক্ষে পোস্টার লাগাচ্ছে। রাতে একই অবস্থা দেখা গেছে রাজধানীর পশ্চিম তেজতুরি বাজার এলাকাতেও। সেখানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামের পক্ষে পোস্টার লাগাতে দেখা গেছে।
এছাড়াও শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এক কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে সমর্থকরা মোটরসাইকেল মহড়া দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও বইছে ভোটের আনন্দ।
মতিঝিলের ইত্তেফাক মোড়ে ফুটপাতে চা বিক্রেতা আকমল আলী বিবার্তাকে বলেন, আমি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভোটার। ভোট উপলক্ষে আমার কাছে প্রার্থীরা ভোট চাইতে আসেন। এতে আমার অনেক ভালো লাগে। এছাড়াও আমার দোকানে চা খাইতে আসা লোকজনও ভোট নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় অনেকেই তর্কে জড়িয়ে পড়েন। তবে এই তর্ক নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে বলে জানান তিনি।
চকবাজার এলাকার বাসিন্দা মখলিছুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, আমি এবার প্রথমবারের মত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দিব। তবে আমার ভোটের জন্য প্রার্থীরা আমাকে ফোন করেন। আবার সরাসরি আমার বাসায় এসেছেন প্রার্থীরা। তাই আমার ও আমার পরিবারে ভোটের উৎসব উপভোগ করছি।
শুধু মখলিছুর রহমান নয়, পুরো রাজধানীবাসীই উৎসবমুখর ভোটের পরিবেশ উপভোগ করছেন। কারওয়ান বাজারের এলাকার বাসিন্দা তুহিন মিয়া বিবার্তাকে বলেন, আমি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভোটার। প্রথমবারের মত আমি ঢাকা সিটিতে ভোট দিব। তাই আমার অনেক ভালো লাগছে।
একই এলাকার ভোটার সাবানা বেগম বিবার্তাকে বলেন, তিনি গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও ভোট দিয়েছেন। এবারও তিনি ভোট দিবেন। তবে ভোটের আগে প্রার্থীরা তার বাসায় যাচ্ছেন। এছাড়াও ভোট উপলক্ষে পার্শ্বর্তী বাসার লোকজনও একে অপরের বাসা যাচ্ছেন। এই পরিবেশ আমার কাছে অনেক ভালো লাগছে।
পশ্চিম তেজতুরি বাজার এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বিবার্তাকে বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে রাজ পর্যন্ত তাদের এলাকায় ভোটের আলাপ-আলোচনা চলে। ভোটার ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ভোটের আমেজ বিরাজ করছে।
উত্তরা এলাকার বাসিন্দা রাজন মিয়া বিবার্তাকে বলেন, গত এক সপ্তাহ থেকে তাদের এলাকায় ভোটের আলোচনা একটু বেশি হচ্ছে। চায়ের দোকান থেকে অভিজাত দোকানগুলোতেও ভোটের আলোচনা শোনা যাচ্ছে। এছাড়াও এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পোস্টার লাগানো হয়েছে। এই বিষয়টি আমারা কাছে অনেক ভালো লাগছে।
উল্লেখ্য, আগামী ৩১ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর ওই নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোশনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ‘নৌকা’, বিএনপি প্রার্থী তাবিথ আওয়াল ‘ধানের শীষ’, পিডিবির শাহীন খান ‘বাঘ’, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ শেখ ফজলে বারী মাসউদ ‘হাতপাখা’, সিপিবির আহম্মেদ সাজেদুল হক রুবেল ‘কাস্তে’ ও এনপিপির আনিসুর রহমান দেওয়ান ‘আম’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোশনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস ‘নৌকা’, বিএনপির ইশরাক হোসেন ‘ধানের শীষ’, জাতীয় পার্টির হাজী মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন মিলন ‘লাঙ্গল’, ইসলামী আন্দোলনের আবদুর রহমান ‘হাতপাখা’, ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির (এনপিপি) বাহরানে সুলতান বাহার ‘আম’, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আকতার-উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লা ‘ডাব’ এবং গণফ্রন্টের আব্দুস সামাদ সুজন ‘মাছ’প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
বিবার্তা/খলিল/উজ্জ্বল/জাই
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]