রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে পেঁয়াজের বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে অস্থির হয়ে উঠছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হওয়ার পর থেকে বাজারগুলোতে পেঁয়াজ সংকট দেখা দিয়েছে। তবে মঙ্গলবার মিসর থেকে কার্গো বিমানে করে পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসছে; এমন খবর পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার অপেক্ষায় রয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতারা এ কথা জানিয়েছেন বিবার্তাকে।
শনিবার (১৬ নভেম্বরে) গভীর রাতে সরজমিনে কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখনো পেঁয়াজের সংকট কাটেনি। গত কয়েক দিনের তুলনায় গত রাতেও পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়াতে পেঁয়াজ বিক্রি কমে গেছে। ক্রেতার অপেক্ষায় রয়েছে পেঁয়াজ বিক্রেতারা। কিন্তু এত দামে পেঁয়াজ ক্রয় করতেও হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা।
ব্যবসায়ীরা জানান, রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে পাইকারি পেঁয়াজ ক্রয় করেন খুচরা বিক্রেতারা। গত রাতে কারওয়ান বাজারে তিন ধরনের পেঁয়াজ খুচরা বিক্রি করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশি পেঁয়াজ প্রতি পাল্লা ১২০০ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে। এক পাল্লায় ৫ কেজি পেঁয়াজ থাকে। এক্ষেত্রে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২২০ টাকা পড়ে। আবার কাউকে কাউকে কেজি প্রতি ২৩০ টাকা ধরেও বিক্রি করতে দেখা গেছে।
দেশি পেঁয়াজ ছাড়াও কারওয়ান বাজারে মিয়ানমার ও মিসরের পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেছে। মিয়ানমার পেঁয়াজের কেজি ২১০ থেকে ২২০ টাকা ধরে বিক্রি হয়েছে। তবে সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে মিশরের পেঁয়াজ। এ দেশের পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে। তবে এ দাম সহজে কমবে না বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
কারওরান বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সিদ্দিক মিয়া বিবার্তাকে বলেন, গত কয়েকদিন থেকে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি হাওয়ার পর থেকেই পেঁয়াজ বিক্রি কমে গেছে। বেশি দাম দিয়ে ক্রয় করতে হয়; তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে মঙ্গলবার বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আসলে বাজার কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন এই ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে ক্রেতা বিক্রেতাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে।
রুবেল মিয়া নামের আরেক ব্যবসায়ী বিবার্তাকে বলেন, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি হওয়াতে বিক্রি কমে গেছে। এছাড়াও আগে ১ লাখ টাকা পেঁয়াজ বিক্রি করলে যে লাভ হত এখন ৫ লাখ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি করেও সেই লাভ হয় না। এতে আমাদের (ব্যবসায়ীদের) মাঝেও অস্থিরতা বিরাজ করছে। তবে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আসলে কিছুটা স্বতি ফিরবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
কারওয়ান বাজারে পাইকারি পেঁয়াজ ক্রয় করতে আসা শাওন মিয়া বির্বাতাকে বলেন, রাজধানীর পশ্চিম তেজতুরী বাজারে একটি মুদির দোকান রয়েছে। ওই দোকানের জন্য আমি কারওয়ান বাজার থেকে পাইকারি পেঁয়াজ ক্রয় করি। কিন্তু গত কয়েক দিন থেকে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি হওয়ার পর খুচরা বাজারেও পেঁয়াজ বিক্রি কমে গেছে। তাই এখন আগের মত পেঁয়াজ ক্রয় করি না।
এদিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মত অন্যান্য বাজারগুলোতেও বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। শ্যামবাজারে দেশি পেঁয়াজ এখন ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিয়ানমার ও মিসরের পেঁয়াজ ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। তবে শনিবার (১৬ নভেম্বর) প্রশাসনের পক্ষ থেকে শ্যামবাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের পর বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মহাখালীর বউ বাজারে দেশি পেঁয়াজ ২৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। মিসরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। কোনো কোনো দোকানে দাম আরো বেশি। বিজয় স্মরণীর কলমিলতা বাজার ও ফার্মগেট ইন্দিরা রোডে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে।
উল্লেখ্য, পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক করতে মিসর থেকে কার্গো বিমানযোগে আমদানি করা পেঁয়াজের প্রথম চালান ঢাকায় পৌঁছাবে মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর)। এস আলম গ্রুপ বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করছে, এটি এর প্রথম চালান। শনিবার (১৬ নভেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবদুল লতিফ বকসী এ কথা জানিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে অন্য আমদানিকারকদের আমদানি করা পেঁয়াজ কার্গো উড়োজাহাজে ঢাকায় পৌঁছাবে।
এদিকে শনিবার দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এরইমধ্যে কার্গো বিমানে করে পেঁয়াজ আমদানি করছে সরকার। এবার পেঁয়াজ বিমানে উঠে গেছে, চিন্তার কারণ নেই। তবে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে কারা জড়িত, খুঁজে বের করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, পিয়াজের দাম বিশ্বের অনেক দেশেই বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম এতো লাফিয়ে লাফিয়ে কেন, কি কারণে বাড়ছে তা জানি না। এর পেছনে কোনো চক্রান্ত আছে কিনা দেখতে হবে। সাধারণ মানুষকে এতো কষ্ট দেয়া ঠিক না। দেশে সবকিছু ঠিক থাকলে একটা ইস্যু তৈরি করে তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়।
বিবার্তা/খলিল/উজ্জ্বল/জহির
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]