রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকার মধ্যে ফার্মগেট অন্যতম। সেখানে ভোর হওয়ার আগ থেকেই শুরু হয় মানুষের অফিসে যাওয়ার ছোঁটাছুটি, আবার সন্ধ্যায় পর ঢল নামে ঘরমুখো মানুষের। তবে যত দিন যাচ্ছে সেই এলাকায় বাড়ছে তত অপরাধ, বাড়ছে যানজট, মানুষের সঙ্গি হচ্ছে বিড়ম্বনা। এছাড়াও বেড়ে চলছে কর্মজীবী মানুষের সংখ্যাও। সেখানে কোনো প্রকার ভোগান্তি থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না।
এক কথায় দিন দিন ভয়ঙ্কর হওয় উঠছে পুরো ফার্মগেট এলাকা। গত দুই সপ্তাহ ফার্মগেট এলাকায় ঘুরে এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
রাজধানী ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় ফার্মগেটের অবস্থান। কৃষি উন্নয়ন, কৃষি ও পশুপালন গবেষণার জন্য বৃটিশ সরকার এখানে একটি ফার্ম বা খামার তৈরি করেছিল। সেই ফার্মের প্রধান ফটক বা গেট থেকে এলাকার নাম ফার্মগেট হয়।
ফার্মগেটে বাসে ওঠার লড়াই
জানা গেছে, ঢাকা শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম এবং সর্বাধিক জনবহুল ওই এলাকায় ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে বহুতল ভবন নির্মাণ শুরু হয়। ফলে এলাকাটি বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্ব অর্জন করেছে। এরপর থেকে সেই এলাকা সবার কাছে বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠে।
এছাড়াও ফার্মগেটে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সর্বাধিক পরিচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ সংযুক্ত উচ্চ স্কুল, হলি ক্রস কলেজ, তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, তেজগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, তেজগাঁও কলেজ ইত্যাদি।
আর সেই এলাকায়ই ১৬৭৭ সালে নির্মিত হয় হলি রোজারি চার্চ। এটি ঢাকার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পুরানো চার্চ। পর্তুগিজ ও রোমান স্থাপত্য শিল্পের অদ্ভুত মিশেলে তৈরি করা হয়েছিল চার্চটি। ঢাকায় পর্তুগিজদের এইটাই শেষ স্মৃতি। ফার্মগেট থেকে তেজগাঁওমুখী রাস্তা ধরে সামান্য এগোলেই হলি রোজারি চার্চের অবস্থান।
এছাড়াও ফার্মগেটের পূর্ব দক্ষিণ দিকে কারওয়ান বাজার, বাংলামটর, শাহবাগ হয়ে গুলিস্তান যাওয়া যায়। পশ্চিম দক্ষিণ দিক থেকে পান্থপথ, সাইন্সল্যাব, নিউমার্কেট যাওয়া যায়। উত্তর দিকে বিজয় স্মরণী হয়ে মহাখালী, বনানী, খিলক্ষত, বিমানবন্দর, উত্তরা যাওয়া যায়। উত্তর পশ্চিম দিকে জাতীয় সংসদ ভবন, গাবতলী, মোহাম্মদপুর, মীরপুর এলাকায় যাওয়া যায়। তাই ফার্মগেট ঢাকা শহরের প্রধান পরিবহন কেন্দ্রস্থল হিসেবেও পরিচিত লাভ করেছে।
শুধু তাই নয়, ফার্মগেটে ঢাকা মেট্রো রেলের লাইন ৬-এর একটি স্টেশন আছে। তবে মট্রো রেলের কাজ এখনো চলছে। তাই সেখানে প্রতিদিন সেই এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। আর এ যানজটে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়েছে নগরবাসী। সীমাহীন এই ভোগান্তি থেকে কিছুতেই রেহাই মিলছে না। প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে রাজধানীবাসীর মূল্যবান কর্মঘণ্টা। নাভিশ্বাস উঠেছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ সব পেশার মানুষের। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে থমকে দাঁড়িয়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
লাইন ধরে বাসে উঠছেন যাত্রীরা
সরেজমিন ফার্মগেট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বাসযোগে সকালবেলা অফিস যাওয়া একভাবে খুবই দুর্সাধ্য। আর মেয়েদের জন্যে রীতিমত ভয়ঙ্কক। হয়রানির শিকার হচ্ছে শিশুরাও। ঠিক এমনটাই দেখা যায় বিকেলবেলা অফিস সময় শেষে হওয়ার পর। বাসের অপেক্ষায় ঘন্টার পর ঘন্টার দাঁড়িয়ে থাকতে হয় কর্মজীবী মানুষদের। চলন্ত বাসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ লাফিয়ে উঠছে কেউবা কোনোরকম হ্যান্ডেল ধরে ঝুলতে ঝুলতে ঘরে ফিরছে। প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত এ দৃশ্য ফার্মগেটে দেখা গেছে।
রাজধানীর উত্তরা এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারুজ্জাম বিবার্তাকে বলেন, আমার রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় একটি বেসরকারি অফিসে কাজ করি। তাই প্রতিদিন সকালে আমি অফিসে আসি। এবং রাতে বাসায় ফিরি। কিন্তু আসার সময় উত্তরা এলাকায় সহজে বাস পেলেও যাওয়ার সময় ফার্মগেট এলাকায় সহজে বাস পাওয়া যায় না। তাই প্রতিদিন সন্ধ্যায় প্রায় দুই এক ঘন্টা বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এছাড়াও একটা বাস পেলেও অনেক কষ্টে ওই বাসে উঠতে হয়।
বাসে ওঠার লড়াই
তিনি বলেন, ওই এলাকায় এমনিতেই যানজট লেগে থাকে। তারপরও ওই রুটে বাসের সংখ্যাও অনেক কম। তাই মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছেন।
মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা সুফিয়া বেগম বিবার্তাকে বলেন, তিনি সপ্তাতে তিনদিন ফার্মগেট এলাকায় একটি কোচিং সেন্টারে তার মেয়েকে নিয়ে আসেন। তবে যাওয়ার সময় বাসের সন্ধান পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে যায়। আর যদি বাস পাওয়াও যায় তা হলে ওই বাসে উঠা অনেক কষ্ট হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে বাসে না গিয়ে রিকশা যোগে বাসায় ফিরি।
এদিকে, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চুরি-ছিনতাই করে যাচ্ছে অপরাধীরা। প্রায় প্রতিদিনই তাদের পাতানো ফাঁদে পা দিচ্ছে কেউ না কেউ। মোবাইল-মানি ব্যাগ হারিয়ে বাসায় ফিরতে হচ্ছে।
ফার্মগেটে মেট্রোরেলের কর্মযজ্ঞ
খিলক্ষেত এলাকার বাসিন্দা আশরাফ আলী বিবার্তাকে বলেন, কয়েক দিন আগে ফার্মগেট থেকে বাসে উঠার সময় তার মোবাইল চুরি হয়।
আশরাফের মত অনেকেই প্রতিদিন মোবাইল মানি ব্যাগ হারাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী লিঙ্কন।
তিনি বিবার্তাকে বলেন, ফার্মগেট এলাকা দিন দিন ভংঙ্কর হয়ে উঠছে। বাড়ছে চুরি-ছিনতাইয়ের মত ঘটনাও।
তবে এ ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন ফার্মগেট, বিজয়স্মরণী এলাকার দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা এসআই আশরাফুল ইসলাম।
তিনি বিবার্তাকে বলেন, এমন অভিযোগ অনেক আগেই পাওয়া গেছে। তবে কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ দেয় না। তবে অভিযোগ দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা যাবে।
বিবার্তা/খলিল/উজ্জ্বল/জাই
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]