শিরোনাম
অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করবে
মুখমণ্ডল ও গাড়ির নম্বরপ্লেট সনাক্তকরণ প্রযুক্তি
প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০১৯, ১৬:১৪
মুখমণ্ডল ও গাড়ির নম্বরপ্লেট সনাক্তকরণ প্রযুক্তি
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স বা এআই) কাজে লাগিয়ে নিরাপদ আবাসযোগ্য শহর ও দেশ গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে দেশীয় স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠান সিগমাইন্ড (SIGMIND) প্রাইভেট লিমিটেড।


দেশেরই কয়েকজন তরুণ প্রথাগত ব্যাবসা ও চাকরির পিছে না ছুটে প্রযুক্তিভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেই গড়ে তুলে এই প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত জনতা টাওয়ার সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে প্রতিষ্ঠানটি সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।


সিগমাইন্ড হচ্ছে দেশের প্রথম নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণাভিত্তিক প্রযুক্তি সেবাদাতা স্টার্ট-আপ। যারা এই প্রযুক্তির কারিগরি গবেষণা ও প্রায়োগিক বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা মানবজাতির সমৃদ্ধি এগিয়ে নেওয়াই যাদের মূল উদ্দেশ্য।


প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইতোপূর্বে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক কম্পিউটার ভিশন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ড্রাইভিং অ্যাসিস্টেন্ট ও মনিটরিং সিস্টেম নিয়ে কাজ করেছে সিগমাইন্ড। তবে ২০১৬ তে গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পরপরই সিগমাইন্ড সার্ভিলেন্সের ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি মনে করে। কারণ গুলশানে হামলায় জড়িতরা অনেক আগে থেকেই মিসিং ছিল এবং পুলিশের সন্দেহভাজন তালিকায় ছিল।


উদ্যোক্তারা মনে করেন, যদি হামলার শিকার সেই এলাকায় প্রতিটি ক্যামেরা এই ধরনের সার্ভিলেন্সের আওতায় থাকতো তবে অনেক আগেই তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা যেত। যার ফলে এধরনের ভয়াবহ ঘটনা হয়ত এড়ানো সম্ভবপর হত।


যেভাবে কাজ করে সিগমাইন্ডের ওয়াচক্যাম
সিগমাইন্ডের ওয়াচক্যাম মূলত ফুটেজ অ্যানালাইসিস সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বল্পতম সময়ে ফুটেজে অবস্থানরত প্রতিটি গাড়ির নম্বরপ্লেট এবং প্রতিটি ব্যক্তির মুখমণ্ডলের ছবি (Mug shot) পাওয়া যাবে। যেখানে ম্যানুয়ালি এই কাজটির জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা সময় অপচয় হতো। প্রাপ্ত গাড়ির নম্বরপ্লেট অথবা মুখমণ্ডলের ছবি প্রবেশ করানো হবে সিগমাইন্ড ওয়াচক্যাম সফটওয়্যারে, যেখানে ছবিগুলোর হাই রেজুলেশন ইমেজ তৈরি হবে।


এরপর সফটওয়্যারটিরই আওতায় সংযুক্ত প্রতিটি ক্যামেরা বিশ্লেষণ করে নির্দিষ্ট গাড়িটির নম্বরপ্লেট অথবা ব্যক্তিটিকে খোঁজা শুরু করবে ও কোথায় কোথায় দেখা গিয়েছিল এবং যদি রিয়েল টাইমে দেখা গিয়ে থাকে তা শনাক্ত করে ওই ব্যক্তি বা গাড়ির বর্তমান অবস্থানের ম্যাপ লোকেশনসহ নিমিষেই নিরাপত্তা বাহিনীকে সতর্ক করে দিবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি সংস্থা যেমন- বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ তাদের বিভিন্ন কেপিআই (KPI) ভবনের নিরাপত্তায় এই সফটওয়্যার ব্যবহার করেছে।


এছাড়াও দেশের বাইরেও এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে স্টার্ট-আপটি। ইতিমধ্যেই সিগমাইন্ড তাদের এই ওয়াচক্যাম প্রযুক্তির মাধ্যমে ভারতের মহারাষ্ট্রের একটি হাইওয়ে রোডের চলাচলকৃত যানবাহনের নম্বর প্লেট ডিটেকশন, লেন ভায়লেশন সনাক্তকরণসহ ট্রাফিক সিস্টেম মনিটরিংএর কাজ করছে। সর্বোপরি মহারাষ্ট্রের অন্তর্বর্তী ওই হাইওয়ের পুরো ট্রাফিক ব্যবস্থা সয়ংক্রিয়ভাবে সিগমাইন্ডের ওয়াচক্যাম সফটওয়্যার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।


এই পাইলট প্রকল্পে সফল হওয়ার পর থেকেই তারা কিভাবে প্রচলিত সার্ভিলেন্স ক্যামেরাকে আরো বুদ্ধিমান করা যায় তা নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং প্রায় দুই বছর গবেষণা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় সার্ভিলেন্স সফটওয়্যারের বেটা প্রোটোটাইপ তৈরি করতে সমর্থ হন। এরপর ক্রমাগত আরো নিত্য নতুন ফিচার যোগ করে এই প্রযুক্তিটিকে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাতকরণের প্রয়াস চালান।


যার ফলে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ বর্তমানে কাওরান বাজারে অবস্থিত জনতা টাওয়ার সফটওয়্যার টেকনোলোজি পার্কে এই সিস্টেম ব্যাবহার করে ভবনে আগত প্রত্যেক ব্যক্তির মুখমণ্ডল এবং যানবাহনের নম্বরপ্লেট শনাক্ত করে সয়ংক্রিয়ভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে যা তাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের অনেক সময় এবং শ্রম বাঁচিয়ে দিচ্ছে।


সিগমাইন্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবু আনাস শুভম বলেন, ‘যদি মানুষকে মুখমণ্ডল দিয়ে এবং যানবাহনকে নম্বরপ্লেট দিয়ে সয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করা যায়, তাহলে ৯০ শতাংশ অপরাধ সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এছাড়া আমাদের এই প্রযুক্তি রাস্তায় বসানো শত শত ক্যামেরার সাথে সংযুক্ত করে দিলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর মনিটরিং সেলের লোকবল অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব। আর এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুবই অল্প সময়ে ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে তার ফলাফল প্রকাশ করতে সক্ষম হবে। যাতে করে অনুসন্ধান কিংবা গবেষণার জন্য যেই বিশাল পরিমান সময়ের প্রয়োজন হতো, তা নিমেষেই সমাধান করা সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি।’


সিগমাইন্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর তাবাসসুম জানান, বর্তমান সরকার প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছে। এখন দরকার দেশের সফটওয়্যার শিল্পকে বিশ্ব দরবারে উপস্থাপনের জন্য প্রথমে নিজেদের এই সফটওয়্যার ব্যবহার করা। যখন বৈদেশিক ক্রেতারা দেখবেন যে এধরণের সফটওয়্যার একটি দেশের নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করেছেন তখন সফটওয়ারটির বিশ্বাসযোগ্যতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে এবং তারাও এটি ব্যবহার করতে আগ্রহী হবেন।


সিগমাইন্ডের প্রধান বিপনন ও বাজারজাতকরণ কর্মকর্তা আরিফ হুসাইন জানান, সরকারি খাত ব্যাতিত বেসরকারি খাত যেমন বিভিন্ন আবাসন, এপারটমেন্টস ,গারমেন্টস, হাসপাতাল, ব্যাংক, অফিস ইত্যাদিতে নিরাপত্তা সর্বোচ্চ করার জন্য ওয়াচক্যাম জোরালো ভূমিকা পালন করবে।


বিস্তারিত জানা যাবে: https://www.sigmindai.net/watchcam/ এই লিংকে।


বিবার্তা/উজ্জ্বল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com