শিরোনাম
জাতিসংঘে
‘দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার মাধ্যমে সরকারি সেবায় উদ্ভাবন’ বিষয়ক কর্মশালা
প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৮:৩৪
‘দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার মাধ্যমে সরকারি সেবায় উদ্ভাবন’ বিষয়ক কর্মশালা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘের দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা বিষয়ক কার্যালয় ও আস্তানা সিভিল সার্ভিস হাব-কে সাথে নিয়ে সাউথ-সাউথ নেটওয়ার্ক ফর পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন গত ৩০ নভেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার মাধ্যমে সরকারি সেবায় উদ্ভাবন (Public Service Innovation through South-South Net) শীর্ষক এক কর্মশালার আয়োজন করে।


জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়াবলী বিভাগ এবং এশিয়ান এসোসিয়েশন ফর পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কর্মশালাটিতে সহায়তা প্রদান করে।


কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এবং জাতিসংঘের দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা বিষয়ক কার্যালয়ের পরিচালক ও জাতিসংঘ মহাসচিবের দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা বিষয়ক বিশেষ দূত জর্জ সেডিয়েক (Jorge Chediek)।


এশিয়ান এসোসিয়েশন ফর পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এর প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. অ্যালেক্স ব্রিলিয়ানটেস্ জুনিয়র (Alex Brilliantes Jr.) এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালার মডারেটর ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, ইউএনডিপি বাংলাদেশ ও ইউএসএইড এর সহায়তায় পরিচালিত এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী।


রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন তাঁর বক্তব্যে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার মাধ্যমে সরকারি সেবায় উদ্ভাবনী চিন্তা ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটানোর বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন করেন। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা ব্যবহার করে সরকারি সেবাকে কীভাবে আরও আধুনিক ও জনমূখী করা যায় সে বিষয়টিও উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ।


তিনি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিশেষ করে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার মাধ্যমে দক্ষিণের দেশগুলো এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে।’


স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের সাথে সাথে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা ফোরামে অগ্রণী ও গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে বলে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। চীনসহ দক্ষিণের এগিয়ে থাকা দেশগুলো দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারি সেবার উৎকর্ষ সাধনে তথ্য-প্রযুক্তি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দক্ষতা বিনিময় করতে পারে যা সামগ্রিকভাবে এ অঞ্চলের দেশগুলোর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসহ অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবে বলেও মন্তব্য করেন এই প্রতিনিধি।


কর্মশালার আলোচকগণ সরকারি সেবাকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে উল্লেখ করেন। সরকারি সেবার আধুনিকায়ন, উদ্ভাবন ও গতিশীলতা বৃদ্ধিতে সাউথ-সাউথ ও ট্রাইয়াঙ্গুলার নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয় বৃদ্ধির উপর জোর দেন।


কর্মশালায় প্রো-অ্যাকটিভ ই-সার্ভিস, ফরেন এমপ্লয়মেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম, কমিউনিটি ক্লিনিক ইন বাংলাদেশ, বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্স, ফিউচার ওয়ার্ক ইন এশিয়া, ডিজিটাল স্কিল ফর ওয়ার্ক, ইয়ুথ লিড ডেভোলপমেন্ট এন্ড পার্টিসিপেশন মডেল, ক্যারিবিয়ান এডুকেশন ফর এমপ্লয়মেন্ট প্রোগ্রাম এবং গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন ডিসেন্ট জবস্ ফর ইয়ুথ ইন নাইজেরিয়াসহ বারোটি বিষয়ের উপর বিষয়-বিশেষজ্ঞগণ তথ্য উপস্থাপন করেন।


কর্মশালার পূর্বে নিউইয়র্কের গ্লোবাল ফিউচারস গ্রুপে (জিএফজি) একটি ফিল্ড ভিজিট এবং ম্যাচ-মেকিং এর আয়োজন করা হয়েছে। সাউথ সাউথ নেটওয়ার্কের একটি উদ্ভাবনী পদ্ধতি হলো ম্যাচ-মেকিং, যার মাধ্যমে যেসব দেশ কার্যকরভাবে বিভিন্ন জনগণের পরিষেবা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে উদ্ভাবনী আইডিয়া প্রয়োগ করে সফল হয়েছে সেসব সমাধানগুলো অন্য যেকোন দেশের জন্য রপ্তানি করার একটি পদ্ধতি।


বিগত ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথম আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এই ম্যাচ-মেকিং কর্মশালাটি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। উক্ত কর্মশালায় ১৮ টি রাষ্ট্র অংশগ্রহণ করেছিল এবং মোট ৩৮ টি সমঝোতার সুযোগ তৈরী হয়েছিল। কিছু সফল উদাহরণের মধ্যে একটি হলো ২০১৮ সালের জুলাইয়ে এটুআই-এর বেশ কিছু সফল উদ্যোগ নিয়ে সোমালিয়ায় অনেকগুলো কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।


এছাড়া ২০১৮ সালের কাজাকিস্তানের আস্তানায় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ম্যাপ-মেকিং কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ১০ টি রাষ্ট্র ১৩ টি ম্যাচ-মেকিং প্রজেক্টের সুযোগ তৈরী হয়েছিল। নিউইয়র্কের এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সর্বমোট ৫১ টি ম্যাচ-মেকিং প্রজেক্ট তৈরী হয়েছে।


আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে সাউথ সাউথ কো-অপারেশনে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে শুরু করেছে। জাতিসংঘের সাউথ সাউথ কো-অপারেশন (ইউএনওএসএসসি) কার্যালয় উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণ বাড়াতে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যাতে বাংলাদেশ প্রধান ভূমিকা পালন করছে। এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের সেবার ক্ষেত্রে উদ্ভাবন চর্চার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সম্মিলন ঘটানো। এর মাধ্যমে জনসেবা প্রদানে তারা তাদের উদ্ভাবন জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতে পারবে।


এছাড়াও অংশগ্রহণকারী দেশগুলো সাউথ সাউথ এবং ত্রিমাত্রিক সহযোগীতার ক্ষেত্রে যাতে একে অপরের কাছ থেকে উপকৃত হতে পারে তা নিশ্চিত করাও এই কর্মশালার অন্যতম উদ্দেশ্য।


বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মনোয়ার আহমেদ এর নেতৃত্বে সাত সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।


জাতিসংঘের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল সাউথ সাউথ ডেভেলপমেন্ট এক্সপো-২০১৮ এর তিনটি পৃথক পৃথক সাইড ইভেন্টে এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, পিএএ প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালায় অন্যান্যদের ইউএনওএসএসসি এর এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল কোঅর্ডিনেটর জনাব ডেনিস নকলা, আস্টানা সিভিল সার্ভিস হাব, ইউএনডেসা, এএপিএ, ইউএনওএসএসসি এবং সাউথ সাউথ রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।


বিবার্তা/উজ্জ্বল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com