শিরোনাম
যেভাবে এলো ফরমালিন শনাক্তকরণ কিট
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:৫৮
যেভাবে এলো ফরমালিন শনাক্তকরণ কিট
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) গবেষকরা এক ধরনের লিটমাস স্ট্রিপ উদ্ভাবন করেছেন, যার মাধ্যমে একজন ক্রেতা নিজেই খাদ্যে ফরমালিন আছে কিনা, তা পরীক্ষা করে নিতে পারবেন। এ খবরটা পাঠকদের অনেকেই জানেন। আরো জানেন, বুয়েট-এর কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের গবেষকরা তিন বছরের প্রচেষ্টায় এ স্ট্রিপ উদ্ভাবন করেছেন। যা জানেন না তা হলো, এ অভিনব উদ্ভাবনের কাহিনী ও নেপথ্যের মানুষদের কথা।


এ প্রসঙ্গে বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক ড. মহিদুস সামাদ বলেন, ‘‘আমি যখন বিদেশ থেকে বাংলাদেশে এলাম, দেখলাম এখানে খাবারে অনেক ভেজাল। তখন চিন্তা করলাম, বাইরে থেকে আমি যে শিক্ষা নিয়েছি, সেখান থেকে আমি কোনো কিট তৈরি করতে পারি কিনা, যেটা ফরমালিন শনাক্ত করতে পারে! আমার এখনো মনে আছে, আমি যখন এখানে ২০১৩-এ ফিরে এলাম, তখন আমায় প্রশ্ন করা হয়েছিল, আমি কী করবো। আমি বলেছিলাম, একটা পেপারবেসড কিট বের করতে চাই, যেটা ফরমালিন শনাক্ত করতে পারে এবং যা খাদ্য নিরাপত্তায় সাহায্য করবে। যে খাবারে ফরমালিন যত বেশি থাকবে, লিটমাস পেপারটি তত বেশি গাঢ় বেগুনি রং ধারণ করবে। এতে করে সহজেই খাদ্যে বিষের আধিক্য শনাক্ত করা যাবে। ''


বুয়েটের গবেষক সাকিব ফেরদৌস বলেন, ‘‘আমাদের উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ খুঁজে বের করা, যা ফরমালিনের সাথে বিক্রিয়া করবে। বিক্রিয়ার ফলে সেটা এমন একটা রং ধারণ করবে, যা স্বচ্ছ পানিতে আমরা আলাদা করতে পারবো।''


কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মহিদুস সামাদের তত্ত্বাবধানে চলে এ গবেষণা কার্যক্রম। মোট ৫৫টি খাবারের ওপর গবেষণার ফল ও অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন তাঁরা। বুয়েটের প্রভাষক মো. নাজীবুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ ছিল দুটি - এক. ফরমালিন শনাক্তকরণ প্রক্রিয়াটি সহজ হতে হবে এবং দুই. স্বল্পমূল্যের হতে হবে। এর জন্য আমরা যে মাধ্যমটা বেছে নিয়েছি, সেটা হলো পেপার। পেপার ব্যবহারের ফলে আমাদের খরচ কমে যাচ্ছে। আমরা হিসেব করে দেখেছি যে, এটা অল্প খরচে তৈরি করা যাবে, যা একজন বাংলাদেশি খুব সহজে কিনে ব্যবহার করতে পারবেন।''


বাণিজ্যিক বিপণন


অসামান্য এই উদ্ভাবনটির উৎপাদনব্যয় কমিয়ে এনেছেন গবেষকরা। দেশীয় ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রেনেটা সাধারণ মানুষের হাতে লিটমাস স্ট্রিপ পৌঁছে দিতে এরই মধ্যে এটি উৎপাদন করতে শুরু করেছে। কম্পানির সিনিয়র ডেপুটি ম্যানেজার এম রীনাত রিজভী বলেন, ‘‘যখন আমরা দেখলাম যে, এমন একটা উদ্ভাবন বুয়েট করছে, তখনই আমরা এর ব্যাপারে আগ্রহী হলাম। এ ধরনের বড় একটা কাজের সাথে সম্পৃক্ত হতে পেরে আমরা নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করছি।''


ফরমালিনমুক্তিই লক্ষ্য
বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক ড. মহিদুস সামাদ বলেন, ‘‘একসময় যখন আমরা খাবারে ব্যবহারের জন্য ফরমালিনকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো, তখন এই প্রডাক্টের আর প্রয়োজন থাকবে না। আমি একজন উদ্ভাবক হিসেবে সেই দিনটিরই অপেক্ষায় আছি, যেদিন আমার এই প্রডাক্ট আর বাংলাদেশে ব্যবহার করতে হবে না, আমরা নিশ্চিত হবো যে, খাবারে আর ফরমালিন নাই।''


আশরাফুজ্জামান নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘‘ফরমালিনমুক্ত মাছ পাওয়া আসলে ভাগ্যের ব্যাপার। শুনলাম ফরমালিন চিহ্নিত করার স্ট্রিপ বের হচ্ছে। যদি তাই হয়, তাহলে আমরা স্ট্রিপ দিয়ে যাচাই-বাছাই করে মাছ কিনতে পারবো। এটা আমাদের সবার জন্য মঙ্গলজনক হবে।''


পূর্ণাভা লিমিটেডের সিনিয়র ডেপুটি ম্যানেজার এম রীনাত রিজভী বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে এর চূড়ান্ত একটা ভার্সন বাংলাদেশের জনগণের হাতে পৌঁছে দিতে এবং সেটা সারা বাংলাদেশে।''


এই স্ট্রিপ সাধারণের হাতে পৌঁছালে, কেনার আগেই খাবার পরীক্ষা করে নেয়া সম্ভব হবে। ফলে খাদ্যে রাসায়নিকের পরিমাণ কমে আসবে। সূত্র : ডয়চে ভেলে


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com