শিরোনাম
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ই–লার্নিংয়ের ভূমিকা
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০১৮, ১৩:৩৮
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ই–লার্নিংয়ের ভূমিকা
অবন্তি আঁখি
প্রিন্ট অ-অ+

প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থাকে বলা হয় ইলেকট্রনিক লার্নিং বা সংক্ষেপে ই-লার্নিং। ডিজিটাল লার্নিংয়ের বড় একটা অংশ জুড়ে আছে এখন ই–লার্নিং।


স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, আইপ্যাড, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, নোটবুক, ট্যাবলয়েড, মোবাইল অ্যাপস ইত্যাদির সাহায্যে প্রযুক্তি ব্যাবহার করে শিক্ষা গ্রহণ করাই হলো ই-লার্নিং।


ইলেকট্রনিক ডিভাইস মানুষের জীবনযাত্রার মান বদলে দিয়েছে। মানুষ এখন যে কোন সময় যেকোন স্থানে বসেই তাদের প্রয়োজনে শিখতে পারছেন, জ্ঞান অর্জন করতে পারছেন।


বর্তমান শিক্ষা হচ্ছে প্রযুক্তিনির্ভর, যে প্রযুক্তি এখন সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী,মানুষের হাতের নাগালের মধ্যে। দিন দিন ই-লার্নিং বিশ্বব্যাপী দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে।


এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রয়োজনে শিক্ষকের ভিডিও ক্লিপ, ডিজিটাল কনটেন্ট ইচ্ছেমতো বারবার দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। এমনকি, স্কাইপ, হোয়াটস আপ, অডিও, ভিডিও কনফারেন্সিং প্রযুক্তির আবিষ্কার করার ফলে প্রকৃতপক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে দূরে রেখেও মুখোমুখি বসাতে পেরেছে শিক্ষা গ্রহণের জন্য, যা ই-লার্নিংয়ের অন্তর্ভুক্ত।


এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থী, বিভিন্ন কারণে ঝরে পরা শিক্ষার্থীরা আবার শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন, নিজেদের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়ন করতে পারছেন।


ই–লার্নিং বর্তমানে সম্ভাবনার এক নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে


সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, লিংকডইন প্রভৃতি ই-লার্নিংকে সহজ করেছে। সহজভাবে বললে ফেসবুকের মাধ্যমেই আমরা ই–লার্নিংকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে দক্ষ করতে পারি।


তরুণ প্রজন্মের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় হওয়ায় এই দুটি যোগাযোগমাধ্যম এখন শিক্ষাক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। অতিসম্প্রতি যুক্ত হয়েছে স্মার্টফোনভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাপস। বিভিন্ন অ্যাপস যেমন- সার্চ ইংলিশ, হ্যালো ইংলিশ ইত্যাদি। এগুলো ই-লার্নিংকে আর ও তরান্বিত করবে।


তাছাড়া টেন মিনিট স্কুল, ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ, রেপটো, সার্চ ইংলিশ, মুক্তধারা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে ই–লার্নিং সেবা প্রদান করছে। যে কেউ চাইলে এ সকল গ্রুপে সংযুক্ত হয়ে নিজের স্কিল ডেভেলপ করতে পারবেন। এছাড়াও চাইলে বিভিন্ন বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান থেকে নির্দিষ্ট ফি দিয়েও দক্ষতা অর্জন করার সুযোগ আছে। তবে এ ক্ষেত্রে অর্থ লেনদেন করার সময় প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নেয়া ভালো।


ই –লার্নিং বা ইলেক্ট্রনিক লার্নিং পদ্ধতির কিছু বৈশিষ্ট্য


১। শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক শিক্ষা


শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক শিক্ষা মানে হচ্ছে এমন একটা প্রক্রিয়া যেখানে সব রিসোর্সসমূহ শিক্ষার্থীর উন্য উন্মুক্ত থাকে সব সময় এবং শিক্ষার্থী ঠিক করবে কখন, কোথায় শিখবেন। আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা হল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক, যেখানে শিক্ষক সিদ্ধান্ত নেন আমরা কখন কি পড়বো। অবশ্য ইউনিভার্সিটিতে ওপেন ক্রেডিট সিস্টেম থাকলে শিক্ষার্থীরা নিজেদের পছন্দমত সাবজেক্ট নিতে পারেন। তবে এ সুযোগ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্মুক্ত না।


২l স্থান এবং সময় নির্ধারণ


কেবল মাত্র ই-লার্নিংই একজন শিক্ষার্থীকে সময় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হবার নিয়ম কানুন থেকে মুক্তি দিতে পারে। একজন শিক্ষার্থী তার সুবিধাজনক সময়ে যেকোন স্থানে তার প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবেন ইলার্নিংয়ের মাধ্যমে।



৩। ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ


সাধারণত ই –লার্নিং সিস্টেমের মাধ্যমে কেউ তার ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার সুযোগ পায়। বিভিন্ন সুযোগের মধ্যে যেমন- লার্নিং স্টাইল, জব প্রয়োজনীয়তা ,ক্যারিয়ারের গোল নির্ধারণ, বর্তমান যেকোন বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান, একজন শিক্ষার্থী তার প্রয়োজনে মতামত প্রকাশ করতে পারবে।


৪। কার্যকারী যোগাযোগ


ই –লার্নিংয়ের সার্থকতা নির্ভর করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মাঝে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এই ক্ষেত্রে অনেক টুলস বা সফটওয়্যার আছে। যেমন- লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে ফলপ্রসূ যোগাযোগ করা সম্ভব।



৫l সোশ্যাল মিডিয়া


ই – লার্নিংয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রয়োজন হয় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর মাঝে। পরস্পরের সহযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি হবে। বিভিন্ন টেকনোলজির ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী করে তুলতে পারবে ই– লার্নিং।


৬l জীবনমুখী শিক্ষা


টেকনোলজির ক্রমবর্ধমান পরিবর্তনে এবং আক্সেসের সুবিধার কারণে ই –লার্নিংয়ের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জীবনের যে কোন পর্যায়ে যে কেউ তার পছন্দনীয় কিছু শিখতে বা দক্ষতার উন্নতি করতে পারে। এমন হতে পারে, আপনি কোন কাজে অনেক দক্ষ ছিলেন কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ভুলে গেছেন। আপনার সেই দক্ষতাকে বিকাশের সহায়ক হতে পারে ই –লার্নিং ।


এটি একটি ইচ্ছাকৃত এবং স্বেচ্ছাসেবক কাজ তাই শিক্ষার্থীরা শিখতে চায় এবং বিকাশের জন্য অনুপ্রাণিত হয়। জীবনভর শিক্ষা আমাদেরকে আমাদের চারপাশের জগত সম্পর্কে ভাল করে বুঝতে সাহায্য করে, যা আমাদের জন্য ভাল সুযোগ এবং জীবনের মান উন্নত করে ।



বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ই-লার্নিংয়ের ভূমিকা


বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতির ঊর্ধ্বগতি ও ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন সকলকে খুবই আকর্ষিত করেছে। আশা করা যায় ২০১৯ সালে মধ্যে আমাদের দেশের প্রায় ৫০% বিশ্ববিদ্যালয় ইলার্নিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করবে। pricewaterhouse cooper এর মতে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৩ তম বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশে উন্নিত হবে।


এছাড়া ২০৩০ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতি বিশ্বের মধ্যে হতে পারে ২৮ তম। ২০১৬ সালে দেশের জিডিপি এর পরিমান ৬২৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০৩০ সালে এর পরিমান হতে পারে ১৩২৪ বিলিয়ন ডলার এবং ২০৫০ সালে এটি ৩০৬৪ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ছাড়িয়ে যেতে পারে। সেদিক থেকে কানাডার পরেই হতে পারে বাংলাদেশের অবস্থান, কারণ ঠিক ২০৫০ সাল তাদের জিডিপি হবে ৩১০০ বিলিয়ন ডলার। সুতরাং এই বছরে যেখানে আমাদের অর্থনীতি ৫ গুণ বৃদ্ধি হতে পারে। সেখানে কানাডার অর্থনীতি দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পাবে।


অর্থনৈতিক উন্নয়নের এই অপার সম্ভবনার অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে এদেশের তরুণ ও কর্মঠ মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি, কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণ, নিজেদের কিছু করার মানসিকতা এবং নিজেদের উদ্যোক্তা করে তোলার আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি বিষয়গুলো লক্ষ্যণীয়।


ইলার্নিংয়ের নতুন খাতকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশেী শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এজন্য প্রয়োজন সরকারী সাহায্য সহযোগিতা। বাংলাদেশ সরকার আইটি খাতকে সমৃদ্ধ করতে অনেক ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে। সরকার ও তাদের পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করে যাচ্ছে।


যেখানে বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ তরুণ। কিন্তু ২৫ শতাংশ বাংলাদেশী জনসংখ্যা যাদের বয়স ১৫-২৯ এখনও কর্মক্ষেত্রে তেমন বিচরণ নেই তাদের। এবং এদের সংখ্যা প্রায় ১১ মিলিয়ন এবং এদের অধিকাংশ ই শিক্ষিত বেকার। তাই বৃহৎ এই জনসংখ্যার কর্মসংস্থানের সৃষ্টি না করা গেলে অর্থনীতির এই উন্নয়ন ব্যহত হতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষতার উন্নয়ন করা। দেশের যুব সমাজকে দক্ষ জনশক্তি তে রূপান্তর করা।


বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা আসলেই অনেক চ্যালেঞ্জিং কাজ। তবে অসম্ভব কিছু নয়। এখনও প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার আধুনিক অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। তাই ই-লার্নিং হতে পারে শিক্ষার ক্ষেত্রে মানুষের আস্থার জায়গা। যার ফলে ই-লার্নি প্লাটফর্ম এর মাধ্যমে খুব সহজে একজন সাধারণ মানুষ নিজের দক্ষতা উন্নয়ন করতে পারবে। সে দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ পাবে।


লেখক : কন্টেন্ট রাইটার, ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ গ্রুপ


বিবার্তা/উজ্জ্বল


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com