বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে নারী পুরুষের বৈষম্য দূরীকরণে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের অংশীদারদের নিয়ে এটুআই, উইমেন্স ওয়ার্ল্ড ব্যাংকিং এবং শিফট প্রোগ্রাম-ইউএনসিডিএফ যৌথভাবে বিল এ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস্ ফাউন্ডেশনের সহায়তায় একটি কর্মশালা আয়োজন করেছে।
ঢাকাস্থ হোটেল পূর্বাণী ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডে অনুষ্ঠিত কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক-এর ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান।
কর্মশালায় অন্যান্যদের মধ্যে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ওমেন চেম্বার এন্ড কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজ-এর সভাপতি সেলিমা আহমদ, ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন এবং ট্রাস্ট ব্যাংক-এর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়রা আজম।
বাংলাদেশ ব্যাংক-এর ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান তার বক্তব্যে বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে নারীদের আর্থিক সেবা প্রদান করার জন্য বিভিন্ন ব্যাংক, এমএফএস ও অন্যান্য আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের চিরাচরিত মানসিকতা পরিবর্তন করে নারীদের উপযোগী অভিনব আর্থিক পণ্য ও সেবা তৈরির দিকে মনোনিবেশ করতে হবে এবং একই সাথে বর্তমান আর্থিক সেবা ও পণ্য নতুন আঙ্গিকে সাজাতে হবে।
তিনি আরো বলেন, নারীর জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভের লক্ষ্যে বাস্তবায়নযোগ্য সমাধানগুলো গড়ে তোলা প্রয়োজন।
ওমেন্স ওয়ার্ল্ড ব্যাংকিং এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ফর স্ট্রেটেজিক পার্টনারশীপ আন্না গিনচ্যারম্যান বলেন, আমরা আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে লিঙ্গ বৈষম্য সমাধানের পাশাপাশি নারী, তাদের পরিবার এবং সম্প্রদায়ের জন্য আরও নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যত গড়তে কাজ করছি। বাংলাদেশে আর্থিক সেবাভূক্তির ক্ষেত্রে বর্তমান লিঙ্গ বৈষম্য দূর করে তাদের পরিবার এবং সম্প্রদায়ের জন্য আরও নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যত গড়া অত্যন্ত আবশ্যক।
তিনি আরো বলেন, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ স্টেকহোল্ডারদের সাথে নিয়ে এবং আমাদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান শেয়ার করে স্বল্প আয়ের নারীদের কাছে আর্থিক পণ্য ও সেবা পৌঁছাতে আমরা একটি টেকসই সমাধান তৈরী করতে পারি।
ডিজিটাল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে স্বল্প আয়ের জনগণকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় নিয়ে আসতে ওমেন্স ওয়ার্ল্ড ব্যাংকিং ইতোমধ্যে ব্যাপক অভিজ্ঞতা লাভ করেছে।
প্রতিষ্ঠানটি মেক্সিকান সরকারের পার্টনার প্রসফেরা ডিজিটাল-এর সাথে কাজ করে প্রায় ৭ মিলিয়ন এর বেশি প্রসফেরা সুবিধাভোগীকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় নিয়ে এসেছেন, যাদের মধ্যে ৯৮ শতাংশ নারী।
কর্মশালার গুরুত্ব তুলে ধরে এটুআই-এর ডিজিটাল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস ল্যাব এর প্রোগ্রাম ব্যবস্থাপক মো. তহুরুল হাসান বলেন, বাংলাদেশ বিগত বছরে আর্থিক সেবাভূক্তির বিভিন্ন সূচকে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে কিন্তু নারীর অংশগ্রহণ ব্যতিত একটি সমন্বিত আর্থিক ইকোসিস্টেম তৈরি করা সম্ভব নয়।
তিনি আরো বলেন একি সাথে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে অংশীদারিত্ব বজায় রেখে সকল পরিস্থিতিতেই আর্থিক সেবায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
কর্মশালায় উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মোবাইল ফোন এবং স্থানীয় এজেন্টদের মতো একি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যমান সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে অ্যাক্সেসিবিলিটি, সুবিধা, গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা সরবরাহ করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আর্থিক পরিষেবাগুলো প্রদান করা যেতে পারে। এতে অবশ্যই সমন্বিত অর্থনীতি গড়ে তোলে নারীর জন্য ডিজিটাল আর্থিক সমাধান বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
এটুআই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, ইউএনডিপি এবং ইউএসএইড এর সহায়তায় ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি সমন্বিত আর্থিক ইকোসিস্টেম তৈরীতে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বিশেষজ্ঞদের সাথে আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয় সাধনের মধ্য দিয়ে স্বল্প আয়ের কমিউনিটিকে সাশ্রয়ী মূল্যের আর্থিক সেবার সাথে যুক্ত করছে।
এটুআই উদ্ভাবনী প্রক্রিয়ায় পাইলটিং এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে সেবা প্রদানে বৃহৎ জিটুপি পেমেন্টকে ডিজিটাইজড করার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই পদ্ধতিতে জিটুপি পেমেন্ট ডিজিটাইজেশন আর্থিক অন্তর্ভুক্তকরণকে ত্বরান্বিত করতে পারে এবং নীতি প্রণয়ন, কাঠামো তৈরী এবং প্রয়োজনীয় আচরণগত পরিবর্তনে একটি ফাউন্ডেশন কাঠামো তৈরী করতে পারে।
“মেকিং ফাইন্যান্স ওয়ার্ক ফর ওমেন” শীর্ষক কর্মশালায় এটুআই, উইমেন্স ওয়ার্ল্ড ব্যাংকিং, শিফট প্রোগ্রাম-ইউএনসিডিএফ এবং বিল এ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস্ ফাউন্ডেশন-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এবং বিভিন্ন এনজিওর অংশগ্রহণকারীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিবার্তা/উজ্জ্বল
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]