শিরোনাম
গ্যাস-বিদ্যুত ছাড়াই চলছে যে হিমাগার
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:১৭
গ্যাস-বিদ্যুত ছাড়াই চলছে যে হিমাগার
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বিদ্যুৎ কিংবা গ্যাসবিহীন প্রাকৃতিক শস্য সংরক্ষণাগারের কথা ভাবা যায়? কিন্তু কেউ ভাবতে না-পারলেও একজন ঠিকই ভেবেছেন এবং শুধু ভেবেই ক্ষান্ত হননি, বাস্তবে তেমনি এক সংরক্ষণাগার তৈরিও করেছেন। তিনি হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. এম. মনজুর হোসেন।


তিনি বলেন, ‘‘২০১২ সালে যখন এ প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়, তখন থেকে দু'বছর ধরে আমরা এটা নিয়ে ভেবেছি। এরপর স্টোরেজটা আমরা এমনভাবে বানালাম, যার মাঝখানে পানি, দুই দিকে দেয়াল। একটা দেয়াল থেকে ইভাপোরেশন হয় এবং এতে ঘরটা যথেষ্ট কমফোর্টেবল হয়। এভাবেই আমরা একটা প্রোটোটাইপ বানালাম, যেটা পৃথিবীতে আর কোথাও নেই।''


মূলত ভারনাকুলার আর্কিটেকচার পদ্ধতির মাধ্যমে প্রকল্পের মূল কাঠামোর নকশা করা হয়। পানি বাষ্পীভবনে সুপ্ত তাপমাত্রার সূত্র এবং প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় তাপ নিয়ন্ত্রণের ধারণা থেকেই এ প্রকল্পের শুরু।


অধ্যাপক হোসেন বলেন, দুটো দেয়াল আছে - বাইরের দিকে একটা, ভেতরের দিকে একটা। মধ্যে প্রায় আড়াই ইঞ্চি ফাঁক আছে। এই ফাঁকটা ধানের তুষের কয়লা দিয়ে ভরাট করা হয়, যেখানে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হয়। পানি দিলে বাইরের দেয়ালটা ভিজে যায় এবং বাষ্পীভবন ত্বরান্বিত হয়। পরে ধীরে ধীরে ভেতরের বাষ্প ও হিট দেয়াল টেনে নেবে এবং একসময় ঘরটা ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।


প্রাথমিকভাবে ৩০০টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই শস্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ করা হয়েছে। বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণের কারণে এই অবকাঠামো অন্তত ২০ বছর পর্যন্ত টেকসই থাকবে।


অধ্যাপক ড. এম. মনজুর হোসেন এ বিষয়ে বলেন, এটা তৈরি করতে সময় লাগবে তিন থেকে চার মাস। ২৫ টন, ৭৫ টন ১৫০ টন থেকে ৩০০ টনেরও হতে পারে। চার ধরনের ডিজাইন রয়েছে। প্রয়োজন অনুসারে যে-কোনোভাবে এটা তৈরি করা যেতে পারে। ৩০০ টনেরটা তৈরি করতে খরচ পড়বে ১৪ লাখ টাকা।


নানা ধরনের পচনশীল শস্য এতে সংরক্ষণ করা গেলেও মূলত আদা, আলু, রসুন ও পেঁয়াজ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে এটি তৈরি করা হয়েছে। ড. মনজুর বলেন, ‘‘এই স্টোরেজের চারটা স্তর রয়েছে। এর মধ্যে নিচে একটা, আমি দাঁড়িয়ে আছি একটায়, এর উপরে আছে এক স্তর, তার উপরে আরেকটা স্তর রয়েছে। ক্যাটাগরিক্যালি আপনি চার ধরনের শস্য রাখতে পারেন। এর মধ্যে নিচে রাখলেন আদা, এই দুটোতে আলু আর উপরে রসুন ও পেঁয়াজ রাখতে পারেন, অথবা পুরো ঘরে আপনি একটা শস্য রাখতে পারেন। এখানে আলু ৫ মাস, আদা ও পেঁয়াজ ৯ থেকে ১০ মাস আর রসুন ১২ থেকে ১৪ মাস পর্যন্ত রাখা যায়।''


ড. মনজুর হোসেন পরবর্তীতে আরো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরো দু'টি শস্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ করেন, যেখানে কৃষকরা তাদের কৃষিপণ্য দীর্ঘদিন সতেজভাবে সংরক্ষণ করতে পারবে। ড. মনজুরের গবেষণা সহকারী হোসাইন মো. জাহিদ বলেন, ‘‘এটা প্রথমে আমরা স্থানীয়ভাবে তৈরি করি। পরে দেখলাম, এখানে টেম্পারেচার ওঠানামা করে, তাই এটাকে আরো উন্নত করার জন্য পরেরটাতে কমার্শিয়ালি কমপ্রেশার ব্যবহার করেছি। পাশাপাশি সেখানে ইথিলিন ব্যবস্থাপনা সেলুলার লেভেলে কাজ করছে বিধায় এর কার্যক্ষমতা বেড়ে যাচ্ছে। পলি ইউরেথিন ফোম দিয়ে ইনসুলেশন প্রসেসটাকে ব্যবহার করে অনেকটা ডিপ ফ্রিজের আদলে নতুনটা তৈরি করেছি, যেখানে টেম্পারেচার ফ্লাকচুয়েট করবে প্লাস মাইনাস ওয়ান। সেক্ষেত্রে আমাদের সবজি ও ফল সতেজ থাকছে। আমাদের তিন টনের যে ক্যাপাসিটি আছে, সেটাকে আমার সোলার দিয়েও চালাতে পারবো।''


অধ্যাপক ড. মনজুর হোসেন মনে করেন, ‘‘কৃষকরা যদি তাঁদের পণ্য এখানে রাখতে পারে, তাহলে তারা অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক লাভবান হবে এবং তৃণমূলের কৃষকদের উন্নয়নের জন্য এটা একটা মাইলফলক।'' সূত্র : ডয়চে ভেলে


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com