মানুষ মহাকাশের অনেক রহস্যের সমাধান করলেও গভীর সমুদ্রের অনেক অংশ এখনো তাদের অজানা রয়ে গেছে একদল গবেষক সাগরতলায়এমনই এক আশ্চর্য জগত আবিষ্কার করেছেন সে বিষয়ে আরও জানার চেষ্টা করছেন।
ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সমুদ্রের তলদেশে প্রায় এক অজানা জগতের সন্ধান পেয়েছেন। সেই প্রাচীর প্রায় ১০০ মিটার উঁচু ও ৪০০ কিলোমিটার বিস্তৃত। শীতল পানির প্রবাল দিয়ে সেটি তৈরি। এই প্রবাল হাজার হাজার মিটার গভীরে কোনো আলো ছাড়াই বেঁচে থাকে। গবেষকদলের সদস্য ড. ক্লাউডিয়া ভিনব্যার্গ বলেন, ‘‘সমুদ্রের গভীরে নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে তারা থাকে, স্রোতের মাধ্যমে ক্ষুদ্র খাদ্যকণা আগমনের ওপর তারা নির্ভর করে এবং সেগুলো খেয়েই তারা বাঁচে।''
তুষারকণার মতো ভেসে আসা প্ল্যাংকটন খেয়ে প্রবাল বেঁচে থাকে। কিন্তু সমুদ্রের গভীরে তাদের পরিমাণ কম হওয়ায় প্রবালের বংশবৃদ্ধির হারও কম - এক হাজার বছরে বড়জোর ১৫ মিটার বৃদ্ধি ঘটে। তা সত্ত্বেও গবেষকরা গত কয়েক বছরে তাঁদের অভিযানে আবার অসাধারণ আকারের প্রবাল আবিষ্কার করেছেন। ড. ভিনব্যার্গ বলেন, ‘‘বিশেষ করে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে আমরা অনেক প্রবাল প্রাচীর খুঁজে পেয়েছি। তাদের উচ্চতা এমনকি ৩০০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। আইফেল টাওয়ার বা বার্লিনের টেলিভিশন টাওয়ারের মতো উঁচু প্রবাল প্রাচীর পাবেন সেখানে।''
বৃহৎ প্রবাল প্রাচীর বর্ণ হারাচ্ছে
মৌরিতানিয়া উপকূলের কাছে কীভাবে এই প্রাচীর সৃষ্টি হলো, তা জানতে ক্লাউডিয়া ভিনব্যার্গ ও তাঁর সহকর্মীরা বিভিন্ন স্তরে পাথরের মতো জমে থাকা প্রবাল সংগ্রহ করেছে্ন। জানা গেছে, সেই প্রাচীর প্রায় ১০ লাখ বছর ধরে বেড়ে চলেছে।
আজ তার অবস্থা কী? ড. ক্লাউডিয়া ভিনব্যার্গ সে বিষয়ে বলেন, ‘‘উষ্ণ যুগের সূচনা, অর্থাৎ প্রায় ১০,০০০ বছর আগে থেকে এই এলাকায় আর কোনো প্রবাল নেই। অক্সিজেনের ঘনত্ব অত্যন্ত কম হওয়ায় কোরাল আর বাঁচতে পারে না বলে আমাদের ধারণা। তবে ভিডিও ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে আমরা জানতে পেরেছি যে, সম্প্রতি আবার সেখানে প্রবালের সমাগম ঘটেছে। কিন্তু আগের মতোই সেখানকার পরিবেশ অত্যন্ত খারাপ হওয়ায় প্রবালের পক্ষে প্রাচীর তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না।''
গবেষকদের ধারণা, গোটা বিশ্বের সমুদ্রে আরও বেশি অংশে অক্সিজেনের ঘনত্বের অভাব দেখা দেবে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাবের পাশাপাশি গভীর সমুদ্রে চাপের বাড়তি এক কারণ দেখা দেবে।
প্রবাল প্রাচীর সৃষ্টির ক্ষেত্রে লোফেলিয়া প্যারটুসা নামের এক শীতল পানির প্রবাল প্রজাতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। পাথুরে এই কোরাল শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে বিশাল কলোনি গড়ে তোলে। সেই কলোনিতে তারা মাছ, সি আর্চিন, মাছসহ নানা প্রাণী বাসা বাঁধে। সে বিষয়ে বিজ্ঞানীদের জ্ঞান এখনো সীমিত।
ড. ভিনব্যার্গ জানালেন, ‘‘শীতল পানি্র প্রবালকে গভীর সমুদ্রের বায়ো-ইঞ্জিনিয়ার বলা হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক স্বার্থে এমন কিছু প্রজাতির মাছ ধরা হয়, যারা প্রবাল প্রাচীরে ডিম পাড়ে, খাদ্য সংগ্রহ করে অথবা কোণঠাসা হলে সেখানে আশ্রয় নেয়। অর্থাৎ গভীর সমুদ্রের ইকোসিস্টেম গঠনের ক্ষেত্রে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে।''
এখনো পর্যন্ত ৪,৬০০-রও বেশি প্রজাতি আবিষ্কৃত হয়েছে, যারা শীতল পানির প্রবালে থাকে। প্রত্যেকটি অভিযানে সেই সংখ্যা বেড়ে যায়। তবে শীতল পানির প্রবালের বংশবৃদ্ধি সম্পর্কে এখনো বেশি কিছু জানা যায়নি।
সমুদ্রের তলদেশে যাদুকরী ও রহস্যময় এক জগত সৃষ্টি হয়েছে। সে বিষয়ে বোঝার আগেই আমরা সেই সম্পদ হারালে তা অত্যন্ত দুঃখের কারণ হবে। সূত্র : ডয়চে ভেলে
বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]