শিরোনাম
সুইডেনের মানুষ কেন শরীরে চামড়ার নিচে ইলেকট্রনিক মাইক্রোচিপ ঢোকাচ্ছে
প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০১৮, ১৮:৫০
সুইডেনের মানুষ কেন শরীরে চামড়ার নিচে ইলেকট্রনিক মাইক্রোচিপ ঢোকাচ্ছে
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বিশ্বাস করুন অথবা না-ই করুন, আসলেই সুইডেনে হাজার হাজার মানুষ তাদের হাতের চামড়ার নিচে ইলেকট্রনিক চিপ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কারণ হচ্ছে, এ চিপটি আসলে তাদের বাড়িতে ঢোকার চাবি, অফিসের আইডি কার্ড এমনকি ট্রেনের টিকেট। বলা হচ্ছে, ভবিষ্যতের প্রযুক্তির চেহারা এরকমই হবে, অর্থাৎ মানুষের শরীর আর নতুন ডিজিটাল প্রযুক্তি এভাবেই মিলে-মিশে একাকার হয়ে যাবে। যদিও অনেকে এতে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হবে বলে আশংকা প্রকাশ করছেন। এ নিয়ে বিবিসির ম্যাডি স্যাভেজের রিপোর্ট :


অনেক মানুষই সাধারণত এরকম চিপ ব্যবহার করতে চান না, এটা তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষুন্ন করতে পারে এমন আশংকায়। কিন্তু এরিক বললেন, এ নিয়ে তিনি চিন্তিত নন।


স্টকহোমের প্রাচীন অংশের পাথরবিছানো রাস্তা। মধ্যযুগের পুরোনো লাল, হলুদ রঙের সব বাড়ি। যে নতুন ডিজিটাল প্রযুক্তি বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে, এই জায়গাটাকে তার সঙ্গে মেলানো যায় না।


কিন্তু সুইডেনের ডিজিটাল বিপ্লবের কেন্দ্র এটাই, এখানেই থাকেন এরিক।


এরিকের হাতের আঙ্গুলের চামড়ার নিচে একটা মাইক্রোচিপ ঢোকানো আছে। সেটা ব্যবহার করে এরিক তার বাড়ির দরজার তালা খুললেন।


এরিকের বয়স ৩০। পেশায় একজন ডিজাইনার এবং ওয়েব ডেভেলপার। তার ঘরটা সাজানো হয়েছে স্ক্যানডিনেভিয়ান স্টাইলের আড়ম্বরহীন আসবাবপত্র দিয়ে।


সুইডেনে যে চার হাজার মানুষ তাদের শরীরের চামড়ার নিচে মাইক্রোচিপ লাগিয়েছেন, এরিক তাদের একজন।


তিনি বলেন, "মাইক্রোচিপটা লাগানো আছে আমার বুড়ো আঙ্গুলের মাথায়। আমি যদি আমার আঙ্গুল মুঠো না করি, তাহলে আপনি এটা দেখতেই পাবেন না। এটা সিরিঞ্জ দিয়ে এখানে ঢোকানো হয়েছে। এটা ঢোকাতে মাত্র এক সেকেন্ড সময় লাগে। এটা একদম আপনার চাবির ট্যাগের মতোই কাজ করে। যেভাবে আপনি আপনার গ্যারেজের দরোজা খোলেন, বা অফিসে ঢোকেন, অনেকটা সেরকম।"


এরিকের সঙ্গে একই বাড়িতে থাকেন সিলভিয়া। তার আঙ্গুলেও মাইক্রোচিপ লাগানো। সিলভিয়া বলেন, "আমি দুমাস আগে আমার ইলেকট্রনিক চিপ পেয়েছি। এরিক আমাকে এখানে একটা পার্টিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। সেখানে আমি এই চিপটা পাই। আমি আমার জীবনটা একটু সহজ করতে চেয়েছি। এই একই চিপ দিয়ে আমি কিন্তু আমার অফিসের দরজাও খুলতে পারি। এটাকে আপনি আপনার ট্রেনের টিকেট হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। আপনি যদি কোন জিমে যান, সেখানেও কিন্তু এটিকে ব্যবহার করতে পারেন।"


ভবিষ্যতে কি এই ইলেকট্রনিক চিপ সবাই ব্যবহার করবে? এর ব্যাপক ব্যবহার শুরু হবে? সিলভিয়ার ধারণা তাই। তার কথা, "আমার তো তাই মনে হয়। আমার মনে হয়, এটা এমন এক প্রযুক্তি, যেটা এখনো হয়তো একেবারে তার প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। এটার ব্যবহার এখনো অনেকের কাছে বোকা বোকা লাগতে পারে, এটা দিয়ে খুব বেশি কিছু করা যায় না। তবে আমার মনে হয়, এটাই আমাদের ভবিষ্যৎ।"


সুইডেনে যে এই ইলেকট্রনিক চিপ এতটা জনপ্রিয় তার কারণ, এটি একটি প্রযুক্তিবান্ধব দেশ। সুইডেন যোগাযোগ প্রযুক্তির দিক থেকে বেশ ভালো অবস্থায় আছে, সেখানে লেন-দেনে নগদ অর্থের ব্যবহার প্রায় উঠেই যাচ্ছে।


আরেকটি কারণ হচ্ছে, সুইডিশরা তাদের সরকার ও কর্তৃপক্ষকে যথেষ্ট বিশ্বাস করে। নিজেদের নানা গোপনীয় ব্যক্তিগত তথ্য সরকারের সঙ্গে শেয়ার করতে সুইডিশরা অতটা দ্বিধাগ্রস্থ নয়। এসব কারণেই কি এখানে ইলেকট্রনিক চিপস এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে?


এরিকের মতে সেটা একটা কারণ। তবে এর পাশাপাশি অন্য কিছু বিষয়ও কাজ করছে। এরিক বলেন, "সুইডিশরা বেশ বাস্তববাদী। আর চিপ কিন্তু বেশ কাজের। লোকজন তাই সহজেই একটা গ্রহণ করেছ। তাদের বিরুদ্ধে এটা ব্যবহৃত হতে পারে, এরকম ভয় তারা পাচ্ছে না। এই চিপে যে তথ্য রাখা হয়, তা একেবারেই প্রাথমিক। আপনার হাতে একটা মাইক্রোচিপ ঢুকানো আছে, এটা শুনতে বেশ ভয়ংকর মনে হয়। কিন্তু আপনার হাতের কী ট্যাগের সঙ্গে এর তফাৎ নেই। এছাড়া এই ট্যাগ খুলে ফেলা বেশ সহজ।"


তবে মাইক্রোচিপ নিয়ে সুইডেনেও কেউ কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। সুইডেনে এ নিয়ে কোন আইন এখনো তৈরি হয়নি। মানুষের ব্যক্তিগত তথ্যে ভবিষ্যতে কিভাবে অন্যকাজে ব্যবহৃত হতে পারে সেটা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। তা সত্ত্বেও চামড়ার নিচে যারা মাইক্রোচিপ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তারা মনে করছেন, ভবিষ্যতে এভাবেই আসলে দৈনন্দিন সব কাজে ব্যবহৃত হবে এই প্রযুক্তি।


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com