শিরোনাম
প্রযুক্তির মাধ্যমে মিলল ২,৯৩০ জন শিশুর খোঁজ!
প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০১৮, ১৮:২৭
প্রযুক্তির মাধ্যমে মিলল ২,৯৩০ জন শিশুর খোঁজ!
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতে প্রতি বছর অসংখ্য শিশু নিখোঁজ হয়। পুলিশ-‌প্রশাসনের হাতে খুব সহজে তাদের খুঁজে বের করার কোনো পথই ছিল না এতদিন। এবার বোধহয় সেই সমস্যা মিটতে চলেছে। নিখোঁজ শিশুদের খুঁজে বের করতে একটি সফটওয়্যারের প্রয়োগ হবে কি হবে না, তা নিয়েই টানাপোড়েন চলছিল। দিল্লি পুলিশ ও কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আইনি লড়াই চালাচ্ছিল নোবেলজয়ী সমাজসেবী কৈলাশ সত্যার্থীর সংগঠন বচপন বাঁচাও আন্দোলন (বিবিএ)।


দীর্ঘ চাপানউতোরের পর আদালতের নির্দেশে বিবিএ-‌র তৈরি এফআরএস সফটওয়্যার ব্যবহার করে পুলিশ, আর তাতেই এলো বিপুল সাফল্য।
গত ৬ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল মাত্র চার দিনে ভারতের রাজধানী শহরে খোঁজ মিলল ২৯৩০ জন নিখোঁজ শিশুর।


১০ এপ্রিল কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রণালয় মারফৎ আদালতে নিখোঁজ শিশু শনাক্তকরণের এই তথ্য পেশ করেছে পুলিশ। খোঁজখবর নিয়ে তাদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়াই এখন পুলিশের প্রধান কাজ।


নিরাপত্তার স্বার্থে এই সফটওয়্যারের খুঁটিনাটি জানানো হয়নি। তবে বর্তমানে এই সফটওয়্যারের ব্যবহার হচ্ছে দু'টি পদ্ধতিতে - জিওমেট্রিক ও ফোটোমেট্রিক। জিওমেট্রিক পদ্ধতি মূলত অবয়ব-‌নির্ভর। মুখমণ্ডলের বৈশিষ্ট বিশ্লেষণ করে দু'টি ছবির বাহ্যিক অবয়ব ও প্রতিটি প্রত্যঙ্গের বৈশিষ্ট ও তাদের মধ্যে ব্যবধান পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেয় এটি। অন্যদিকে, ফোটোমেট্রিক পদ্ধতিও একটি সমাধান পদ্ধতি। এতে নিখোঁজ শিশুর ছবিটিকে পিক্সেলে ভাগ করা হয়। এবার অপর ছবিটিকে একইভাবে পিক্সেল আকারে টুকরো টুকরে করে সেই‌ পিক্সেল-‌তথ্য যাচাই করা হয়।


‘‌বচপন বাঁচাও আন্দোলন'‌-‌এর প্রাক্তন সম্পাদক, আইনজীবী ভূবন রিভু ডয়চে ভেলেকে জানালেন, ‘‌‘‌সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তথ্যভাণ্ডার গড়ার কাজ শুরু করেছিল বিবিএ। তথ্যভাণ্ডারে দেখা যায়, প্রায় সাত লাখ শিশু নিখোঁজ আছে। এক লাখের মতো শিশু বেশ কিছু সংস্থার তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কোনো ব্যক্তির পক্ষে ছবি মিলিয়ে দেখে শিশুদের শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব। এরপর এই সফটওয়্যারের ব্যবহার নিয়ে পুলিশ বহু টালবাহানা করেছে। শেষ পর্যন্ত পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে পুলিশ চাইল্ড কেয়ার ইনস্টিটিউশনে থাকা ৪৫ হাজার শিশুর সঙ্গে ৪৫ হাজার নিখোঁজ শিশুর তথ্য যাচাই করা হয়। তাতেই প্রায় তিন হাজার শিশুর সন্ধান মিলেছে।''


কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত মাত্র পাঁচ বছরে দেশে মোট ২,৪০,০০০ শিশু নিখোঁজের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে। স্বভাবতই বাস্তব সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি। বেশ কিছু সংগঠন এই নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছে। তাদের হিসেব বলছে, ভারতে প্রতি বছর নিখোঁজ হওয়া শিশুর সংখ্যা ৫,০০,০০০ জন। এখন নিখোঁজ শিশুদের উদ্ধারের প্রচেষ্টা হিসেবে কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রণালয় দেশব্যাপী একটি অনলাইন তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলেছে, যার নাম দেয়া হয়েছে ‘‌ট্র্যাক চাইল্ড'‌। এখানে নিখোঁজ ও খুঁজে পাওয়া শিশুদের ছবি পোস্ট করা যায়, দেখা যায় বিবরণ। এছাড়া ওয়েবসাইটে ক্লিক করে পুলিশে খবরও দেওয়া যায়।


দিল্লি পুলিশের পক্ষে পুরো বিষয়টি হাতে-‌কলমে করেছেন এমন হাতেগোনা কয়েকজনের মধ্যে একজন হলেন দিল্লির জয়েন্ট পুলিশ কমিশনার (‌ক্রাইম)‌ অলোক কুমার। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘‌‌মুখমণ্ডল চিহ্নিতকরণ পদ্ধতি বা ‘‌ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম'‌ সফটওয়্যার ব্যবহার করে সাফল্য এসেছে ঠিকই, তবে কিছু সমস্যাও আছে। এই সফটওয়্যার তিন বছর ও তার চেয়ে কম বয়সি শিশুদের শনাক্তকরণ করা সম্ভব নয়। কারণ, এত কম বয়সে মুখমণ্ডলে পরিবর্তন হয়ে থাকে।'‌'


অন্যদিকে, এই সফটওয়্যারের সাফল্য দেশের শিশুরক্ষায় নতুন দিশা এনে দিয়েছে বলে মনে করছে ‘‌দ্য ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশান অফ চাইল্ড রাইটস' (এনসিপিসিআর)। সংস্থার সদস্য যশোবন্ত জৈনের কথায়, ‘‌‘‌এই ধরনের আধুনিক পদ্ধতি নিখোঁজ শিশুদের তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে সহায়ক হয়ে উঠবে। তাই এই আরও বেশি ব্যবহার প্রয়োজন। সূত্র : ডিডাব্লিউ


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com